নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডকে দুঃখজনক উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছেন ‘জাতি এতে শোকাহত। আমরা এরকম মর্মান্তিক ঘটনা আশা করি না।’
ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটের শুনানিতে রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ একথা বলেন। সেই সাথে আদালত আহত শ্রমিকদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে শ্রম সচিব এবং স্বাস্থ্য সচিবের সাথে অ্যাটর্নি জেনারেলকে কথা বলতে বলেছেন।
আজ শুনানির শুরুতেই ব্যারিস্টার সারা হোসেন এই অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা, হতাহতের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং শিশু শ্রমিক থাকার বিষয়গুলো সামনে এনে হাইকোর্টের রুলসহ আদেশ চান। তখন আদালত বলেন, দুঃখজনক এই ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হয়েছে। সে মামলায় প্রায় সবাই গ্রেফতারও হয়েছে। এখন তদন্ত হবে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে মালিক পক্ষকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। আর পত্রিকায় তো দেখেছি যে, নিহতদের পরবারকে ২ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আহতদেরও কিছু টাকা দেয়া হয়েছে। এখানে একটি বিষয় হচ্ছে যে, এখন পর্যন্ত ১টি মাত্র লাশ শনাক্ত হয়েছে। অন্যগুলো ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত হতে ২১ দিন লাগবে। তাই লাশ শনাক্তের আগে আমরা কাকে কিভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে বলব? তাই যারা রিট নিয়ে এসেছেন আপনাদের একটু অপেক্ষা করা দরকার বলে মনে করি।’
এসময় ব্যারিস্টার সারা হোসেন আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড। সরকার এখন যে টাকাটা দিচ্ছে সেটা অনুদানের মত, ওটাকে ক্ষতিপূরণ বলতে চাচ্ছি না।’
এরপর আদালত বলেন, ‘মর্মান্তিক ঘটনাটি নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন, আপনারাও যে উদ্বিগ্ন সে বিষয়টি আমাদের নজরে রইলো এবং আমরা বিষয়টি অবজার্ভ করছি। কিন্তু এখন এই কোর্টের (একক বেঞ্চের) তো কিছু লিমিটেশন আছে। এখন তো রুল দিতে পারব না। তাই নিয়মিত কোর্ট খুলুক। আশা করি ঈদের পর নিয়মিত কোর্ট খুললে আপনারা সার্বিক দিক নিয়ে আসতে পারবেন। আর এরমধ্যেই জরুরি হলে তো আসতেই পারবেন।’ তখন রিটের পক্ষের আইনজীবীরা আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা নিশ্চিতের বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, ‘আহত শ্রমিকদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে শ্রম সচিব এবং স্বাস্থ্য সচিবের সাথে অ্যাটর্নি জেনারেলকে কথা বলতে বলবেন।’
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার অনিক আর হক, অ্যাডভোকেট মো. বদরুদ্দোজা বাবু, এস এম রেজাউল করিম, নীনা গোস্বামী ও মো. শাহিনুজ্জামান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ১ কোটি এবং আহতদের জন্য ৩৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট করে
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি।
শনিবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর ই-মেইলে পাঠানো এই রিটে রুল জারির আবেদনের পাশাপাশি আপাতত নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লাখ ও আহতদের জন্য ৫ লাখ টাকা দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসের ছয়তলা ভবনের ওই কারখানা লাগা আগুনে এখন পর্যন্ত ৫২ জন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ২৫ জন শ্রমিক। মর্মান্তিক এই ঘটনায় শনিবার রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। সে মামলায় আসামি করা হয় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসেম, তার ছেলে হাসীব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম, তানজীম ইব্রাহীম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহান শাহ আজাদ, উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ ও প্রকৌশলী মো. আলাউদ্দিনকে। পরবর্তীতে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসেমসহ আট আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের আদেশে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।