দুবাই শহরে নেমে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের উচ্ছ্বাস বোঝার কোনো উপায়ই নেই। একটা ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট, অথচ প্রচারণা যতটা হওয়ার কথা তার দশভাগও হয়তো সাধারণ মানুষের চোখের সামনে সাজিয়ে বসেনি আয়োজক এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। যেমনটা দেখা যায় বাংলাদেশ, ভারত কিংবা শ্রীলঙ্কা কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন করলে।
অবশ্য একসময়ের প্রতাপশালী এসিসি এখন পুরোপুরিই ইন্টারন্যাশল ক্রিকেট কাউন্সিল আইসিসির অধীনস্থ। তাই এই প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মও পুরোপুরি আইসিসির নিয়ন্ত্রণাধীন। তাছাড়া স্বাগতিক হয়েও টুর্নামেন্টে খেলতে না পারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানুষের কাছেও এশিয়া কাপের আসরটি যেনো প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এককাপ গরম কফি পান। অর্থাৎ, টাইমপাস মেন্যু।
১৩ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে নেমে প্রথম ধাক্কাটা খেতে হয়েছে এয়ারপোর্টেই। বাংলাদেশ থেকে আরও সহকর্মী এদিনই এসেছেন এখানে। একেকজনের একেক ফ্লাইটে আসা। দেশে থাকতেই কয়েকজনের সঙ্গে কথা ছিল এয়ারপোর্টে নেমে ফ্রি ওয়াইফাই দিয়ে যোগাযোগ করব। কিন্তু ফ্রি ওয়াইফাই থাকলেও সে কাজ দুরূহ হয়ে ওঠে। মোটেও জানা ছিল না যে এই দেশে ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসআপ কিংবা ভাইবারে ভয়েস কল নিষিদ্ধ। কল আসা যাবে, কিন্তু কথা কমপ্লিট করা যাবে না।
এই তথ্য না জানা থাকায় প্রথমদিন থেকে এখন পর্যন্ত খুব বিপদেই আছি। অনেকেই দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে অনবরত ফোন দিচ্ছেন। বাংলাদেশ দলের আপডেট, খেলার শিডিউল ইত্যাদি জানতে চাচ্ছেন। কিন্তু এসব মাধ্যমে কিন্তু কোনভাবেই ভয়েস কল রিসিভ করা যাচ্ছে না। হয়তো অনেকে ভুলও বুঝচ্ছেন। মনে করছেন ইচ্ছে করে ফোন ধরছি না, ব্যস্ততা দেখাচ্ছি। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা না।
দুবাইয়ে থাকা একজন প্রবাসী বাংলাদেশি সেটি পরিষ্কার করেছেন। তিনি জানান, এ দেশ থেকে বাংলাদেশে শুধু ইমোতে কথা বলা যায়। কিন্তু সেটিও সবসময় নয়। মাঝেমধ্যে খুব ঝামেলা করছে। ভাগ্য ভালো থাকলে শোনা যাবে পরিষ্কার। অন্যথায় বিরক্তি বাড়বেই।
এখানকার আবহাওয়া আরেকটি বিপদের নাম। প্রথম ম্যাচের আগে প্রচণ্ড হিট। প্রতিনিয়ত সেটি বাড়ছেই। বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল দুবাই স্পোর্টস সিটিতে। আইসিসি একাডেমি গ্রাউন্ডে।
এখানে ঢুকে আরেকটি ধাক্কা খেলাম। অভ্যর্থনা থেকে শুরু করে প্রটোকল, সিকিউরিটি, ম্যানেজার, এটেনডেন্ট, সুপারিন্টটেন্ড বড় বড় দায়িত্বে যারা আছেন প্রায় সবাই ভারতীয়। আইসিসি মানে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল! ক্রিকেট পরিবারের সঙ্গে জড়িত অনেকেই মজা করে বলেন এটি। বাস্তবেও কি তাই হচ্ছে নাকি! হোক বা না হোক এশিয়ান ক্রিকেট প্রশাসনে এখন ভারতীয়রাই যে চরম দাপট দেখাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এশিয়া কাপের মিডিয়া অ্যাক্রিডিটেশন পাওয়ার ক্ষেত্রেও যোজন যোজন এগিয়ে ভারতীয়রা। তাদের গণমাধ্যমের সবাই পেয়েছেন পুরো এশিয়া কাপ কাভার করার কার্ড। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটি কাস্টম করা হয়েছে। অনেককেই দেওয়া হয়েছে শুধু মাত্র বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যাচগুলো কাভার করার পার্মিশন। একটি স্টেশন থেকে একজনের বেশি কার্ড দেওয়া হয়নি কাউকে। অথচ বাংলাদেশের মানুষরাই এই টুর্নামেন্টের আকর্ষণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রথম ম্যাচে দুবাই স্টেডিয়ামের গ্যালারিগুলোতে মানুষের ঢল আর লাল-সবুজের পতাকাগুলো দেখলে সব হিসাব মিলে যায়।