মানুষ ছুটছে, ছুটছে মানুষ। কে বাঁচালো, কে মরলো? সেসব প্রশ্ন এখন গৌণ। চারিদিকে শুধু মানুষের ছুটোছুটি। রাজধানী ঢাকা থেকে যে পথগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে, গত কয়েকদিন সেই পথে শুধু মানুষ আর মানুষ। যে যেভাবে পারছে রাজধানী ছাড়ছে। দেখে মনে হচ্ছে বড় কোনো ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে ঢাকা ছেড়ে তাদের এই ছুটে চলা।
এই কয়েকদিনে আমরা দেখলাম, পায়ে হেঁটে, কখনো ছোট ছোট যানবাহনে, পণ্যবাহী ট্রাক কিংবা পিকআপে ছুটে চলছে মানুষ। সবারই একটাই গন্তব্য, শেকড়ে পৌঁছানো। যাকে আমরা মোটাদাগে গ্রামের বাড়ি বলি। সেই গ্রামে ফেরার জন্যই এমন তাড়া। কিন্তু ওই শেকড়ে ফিরতে গিয়ে তাদের যে সমূলে উৎপাটন হওয়ার ঝুঁকিও আছে, তাও ভুলে বসে আছে তারা!
অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। ভয়াবহ করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে বাঁচতে সরকার যখন আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে এক মাসেরও বেশি সময়। আরও নানা উদ্যোগ আছে করোনা ঠেকানোর। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মানুষের যখন সামাজিক দূরত্ববিধি আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা, তখন সে ফেরিতে গাদাগাদি করে তারা নদী পার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে দিনের বেলায় ফেরি বন্ধ রাখার পাশাপাশি পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল তাতেও কোনো কাজ হয়নি। ঘরমুখী মানুষ এক রকম জোর করেই ফেরি চলাতে বাধ্য করেছে।
মূলত ঈদকে সামনে রেখে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও মানুষের এই ছুটোছুটি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বারবার সতর্ক করে বলছেন, এত ছুটোছুটি না করে যে যেখানে আছেন, সেখানে থেকেই ঈদের উৎসব করুন। তবুও হুঁশ ফিরছে না কারো।
আজ রোববারও একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘এই যে আপনারা একসাথে যাচ্ছেন, এই চলার পথে ফেরিতে হোক, গাড়িতে হোক, যেখানে হোক- কার যে করোনাভাইরাস আছে আপনি জানেন না। কিন্তু আপনি সেটা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আপনার পরিবারের কাছে। মা, বাবা, দাদা, দাদি, ভাই, বোন- যেই থাকুক, আপনি কিন্তু তাকেও সংক্রমিত করবেন। তার জীবনটাও মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে দেবেন।’
মানুষের গ্রামের বাড়িতে ফেরার এমন তাড়া দেখে আমাদের জীবনানন্দ দাশের সেই বিখ্যাত কবিতার কয়েকটি লাইনের কথা খুব মনে পড়ছে-
“শোনা গেল লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে-ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার সাধ।”
আমরা মনে করি, প্রতিবেশী দেশ ভারতের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিও যখন মানুষকে মানাতে পারছে না, তখন নিশ্চিত করেই বলা যায়- মরিবার সাধ হয়েছে আমাদের।