বিশ্বব্যাপী গত দুবছর করোনাভাইরাসের দাপটের পর জনমনে যে স্বস্থি এসেছিল কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সে স্বস্থিতে জল ঢেলে দিল। করোনা ভাইরাসের আরও শক্তিশালী নতুন এক ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার হয়েছে সাউথ আফ্রিকায়। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে যখন সারা পৃথিবীতে সতর্কতায় নতুন বিধি নিষেধ জারি হয়েছে তখন বাংলাদেশে ঘটে গেছে একটি মারাত্মক উদাসীনতার চরম অব্যবস্থাপনা। সাউথ আফ্রিকা ফেরত ২৪০ জনের কোনো হদিস পাচ্ছে না সরকার। এটি একটি লজ্জাজনক ঘটনা। ২৪০ জন মানুষ সাউথ আফ্রিকা থেকে দেশে এসে নানাবিধ নিয়মবিধি মেনে বিমানবন্দর থেকে বের হয়েছে আর সরকারের মন্ত্রী বলছেন-কী আশ্চর্য! তাদের কাওকে খুঁজে পাচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
চ্যানেল আই অনলাইনের এক সংবাদে জানা যায়: করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট যে দেশে প্রথম ধরা পড়েছে, সেই সাউথ আফ্রিকা থেকে গত এক মাসে ২৪০ জন বাংলাদেশে এসেছে, তবে তাদের অধিকাংশের খোঁজ পাচ্ছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক একথা জানান। তিনি বলেন: আশ্চর্যের বিষয় গত এক মাসে ২৪০ জন লোক এসেছে সাউথ আফ্রিকা থেকে। তাদের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করার চেষ্টা আমরা করছি। কিন্তু আফসোসের বিষয়, তারা সবাই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছে। ঠিকানাও ভুল দিয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাউথ আফ্রিকাসহ আফ্রিকা থেকে আসা নিরুৎসাহিত করা হবে, কেউ চলে এলে তার ১৪ দিন বাধ্যতামূলকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তাই সাউথ আফ্রিকা থেকে যারা এসেছেন, তাদের শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাহিদ মালেক বলেন: বাধ্য হয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তাদের খুঁজে বের করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে। তারা ঠিকানাটাও ভুল দিয়েছে। এই ধরনের কাজও হয়ে থাকে! আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সবগুলো জেলায় করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিটিকে চিঠি দেয়া হবে। সেই কমিটি উপজেলা এবং ইউনিয়ন কমিটিকে জানাবে। কমিটিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মনিটরিং কার্যক্রম চালাতে বলা হবে। তাদেরকে বলা হবে বিদেশ থেকে যদি কেউ আসে সেসব বিষয়ও মনিটরিং করার জন্য। তারা যদি বিভিন্ন জনের বাড়িতে যায় সেটাও নজরদারিতে রাখে। প্রয়োজন হলে পতাকা টানিয়ে দেয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন: কোয়ারেন্টাইন ম্যানেজমেন্ট খুব শক্ত হতে হবে। আমরা চাই সশস্ত্র বাহিনীর ব্যক্তিরা সেই কোয়ারেন্টাইন ম্যানেজ করবেন।
এত বড় গাফিলতি এবং এতবড় একটি ঘটনা সম্পর্কে সরকার যদি নিজে অবাক হয় সেখানে আমাদের নির্বাক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বিদেশ থেকে একজন যাত্রী দেশে ঢুকতে যে সকল নিরাপত্তার স্তর পার হতে হয় সেখানে একেবারে গায়েব হয়ে যাওয়া অতি কাল্পনিক ঘটনা। ইমেগ্রেশন কর্তৃপক্ষের গাফিলতি অবশ্যই আছে সাথে আছে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তায় জড়িতরা। কেউ এই দায় এড়াতে পারে না। আমাদের দেশে ঢোকার যদি এত ফাঁকফোকড় থাকে তাহলে এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। যে কোনো সন্ত্রাসী দেশে ঢুকে জনগনকে জিম্মি করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। কোনোভাবেই এই বিষয়টি হালকা ভাবে দেখার অবকাশ নেই। সাউথ আফ্রিকা থেকে ফেরত ২৪০ জনকে অতিসত্বর খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। সে সঙ্গে আমরা মনে করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। নতুবা নতুন ভাইরাসটির জন্য সারা দেশে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারে।