করোনাকে পুঁজি করে মুনাফাখোর কালোবাজারিরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সাপের শীতনিদ্রার মত এরা যেন ঘাপটি মেরে থাকে, সময় সুযোগ পেলে নিদ্রা ভঙ্গ করে জিনিসপত্রের মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে।
বাজারে গুজব রটিয়ে দেয়া হয়েছে- করোনার প্রভাবে সামনে চাল-ডাল-তেল সংকট দেখা দেবে। টাকা থাকলেও চাহিদামাফিক পণ্য পাওয়া যাবে না। আর এই আতঙ্কে ধনী শ্রেণি থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নিত্যপণ্য কেনার জন্য।
চালের দাম যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানো হচ্ছে। সাড়ে ১২শ’ থেকে ১৩ শ’, ১৩শ’ থেকে সাড়ে ১৩ শ’, শেষ পর্যন্ত ১৪ শ’ টাকা করে রশিদ আর মোজাম্মেল চালের ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে বাড়তি দাম ঠেকাতে ভোক্তা অধিকারের ৭টি টিম মাঠে কাজ করছে। কোথায় ভোক্তা অধিকারের টিম? কেউ বলতে পারছে না।
দোকানিরাও বলছে যাদের কেনার দরকার এক বস্তা, তারা কিনছে তিন বস্তা। তাই বাড়তি চাহিদার কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি একজন দোকানিও এও বলেছে যারা এখন বেশি করে চাল কিনছেন তারা আগামী দুই সপ্তাহের পর আফসোস করবেন, কারণ নতুন চাল উঠবে, তখন চালের দাম কমে যাবে। আর বাজারে অন্যান্য পণ্যেরও ঘাটতি নেই।
খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোথায় সেই হুশিয়ারির প্রতিফলন? দিব্যি বিক্রি করা হচ্ছে বাড়তি দামে চাল-ডাল-তেল। পিছিয়ে নেই সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত পেঁয়াজের দামেও। চল্লিশ টাকায় নেমে আসা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও পয়তাল্লিশ-পঞ্চাশ টাকায়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেউ বেশি বেশি চাল ডাল তেল কিনে মজুত করবেন না। খাদ্যেও ঘাটতি নেই। কিন্তু কেনা কি বন্ধ হচ্ছে? মানুষের ভেতরে যখন আতঙ্ক ঢুকিয়ে দেয়া হয় তখন আর মানুষ সরকারের কথায় আর আশ্বস্ত হতে পারে না। কারণ সরকার যতই বলুক খাদ্যে ঘাটতি নেই, ওঁটা নিছক বলার জন্য বলা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। কারণ তারা ওই বলা পর্যন্তই। মাঠ পর্যায়ে তাদের অভিযান নেই। কোনো ব্যবসায়ীকে আজ পর্যন্ত দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেয়া হয়নি। যার ফলে মানুষ এখন আর সরকারের গাল ভরা বুলিতে বিশ্বাস রাখতে পারে না। পেঁয়াজ নিয়ে মুনাফাখোররা যা করেছে, কই একজন কালোবাজারির বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে? কোনো না কোনোভাবে সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে তারা সব সময় টিকে থাকে।
তাই শুধু বলার জন্য না বলে মাঠপর্যায়ে গিয়ে বড় বড় শপিং মল থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার দোকানে টিম পাঠিয়ে মূল্য বাড়ানোর অযুহাত শুনে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ মানুষের দোষ দিয়ে-যেন তারা বাড়তি পণ্য না কিনে, এগুলো বায়বীয় কথা। কারণ মানুষ যখন না খেয়ে থাকবে, বাজারে পণ্য সংকট দেখা দেবে তখন কোনো মন্ত্রী এমপিরা গিয়ে সাধারণ মানুষকে খাওয়া দিয়ে আসবে না। তখন ওই দলবাজি করে দলকানাদের গুদাম ভরার ব্যবস্থাই করা হবে।
করোনাকে পুঁজি করে যেন মুনাফাখোর ফুলে ফেঁপে উঠতে না পারে সেদিকে সরকারকে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আর তা এখনই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)