মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ে এপ্রিলকে বলা হয় মনোনয়নের মাস। এ মাসের ১৯ তারিখে নিউইয়র্কে হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রাইমারী মনোনয়ন। ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকান দু’দলেরই প্রাইমারী থাকলেও আকর্ষনের কেন্দ্রে হিলারি ক্লিনটন বনাম বার্নি স্যান্ডার্স। ডেমোক্রেট দলের এই দুই প্রার্থীর লড়াই নিয়েই এখন সরগরম মার্কিন রাজনীতি।
গত আটটির মধ্যে সাতটি প্রাইমারী বা ককাসে স্যান্ডার্স জিতলেও, নিউ ইয়র্কে জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন হিলারি। এরাজ্যে দুই মেয়াদে সিনেটর থাকার সুবিধাও পাচ্ছেন তিনি। আর ১৯৪১ সালে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে জন্ম নিলেও স্যান্ডার্স গত বহুবছর ধরে রাজ্যের বাইরে। ভারমন্টের সিনেটর হওয়ায় জন্মভূমিতে তার তেমন যাতায়াতও ছিলনা। তবে তিনিও লড়াই ছাড়তে রাজি নন। সবশেষ টেলিভিশন বিতর্কেও দুজনে সমানতালে পাল্লা দিয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য মতে, সাবেক ফাস্ট লেডি এপর্যন্ত জিতেছেন ১,৩০৫ জন ডেলিগেট। আর স্যান্ডার্স পেয়েছেন ১০৮৬ ডেলিগেটের সমর্থন। কিন্তু সুপার ডেলিগেটদের সমর্থন যোগ করলে ধরাছোয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন হিলারী। দলীয় নেতারা সুপার ডেলিগেট হিসাবে পার্টি কনভেনশানে ভোট দেবেন। এপর্যন্ত ৪৬৯ সুপার ডেলিগেটের সমর্থন নিশ্চিত হওয়ায় হিলারীর ভোট দাড়াচ্ছে ১,৭৭৪। দলের একজন সিনেটর হলেও স্যান্ডার্স এপর্যন্ত পেয়েছেন মাত্র ৩১ জন সুপার ডেলিগেটের সমর্থন। ফলে তার মোট ডেলিগেট দাড়াচ্ছে ১,১১৭। ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন পেতে একজন প্রার্থীর লাগে ২,৩৮৩ জন ডেলিগেটের ভোট।
২০১৪ সালের জরিপ অনুসারে নিউ ইয়র্কের জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এই রাজ্যে থেকে ডেমোক্রেট ডেলিগেট ২৯১ জন। এদের মধ্যে ২৪৭ জন সাধারণ ডেলিগেট, যাদের জয় করার জন্য প্রাইমারী যুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছেন হিলারি আর স্যান্ডার্স। বাকী ৪৪ জন সুপার ডেলিগেট, যাদের বেশীরভাগ হিলারি ব্লকের লোক। বিশ্লেষকদের মতে, নিউ ইয়র্ক প্রাইমারীতে যদি হিলারি বড় ব্যবধানে জিতে যান তবে স্যান্ডার্সরে পক্ষে ঘুরে দাড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। জনমত জরিপে পিছিয়ে থাকলেও, স্যান্ডার্স শিবির তাই চাইছে ব্যবধান কমিয়ে আনতে। কারণ দুই জনের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ভাগ হবে সাধারণ ডেলিগেট। তাই শতাধিক ডেলিগেট পেলেও লড়াইয়ে থেকে যাবেন স্যান্ডার্স। সিনেটর নতুন ভোটারদের বেশী করে ভোট কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিভিন্ন জরিপ বলছে, যুবক ও নতুন ভোটারদের মধ্যে তার অব্স্থান তুলনামূলক ভালো। ফক্স টিভির এক জরিপে বলা হয়েছে, ৪৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে স্যান্ডার্সের গ্রহণযোগ্যতা হিলারির তুলনায় অনেক বেশী। তবে কালো, এশিয়ান আর হিসাপানিক ভোটারদের নিয়ে সিনেটরকে চিন্তিতই থাকতে হবে।
স্যান্ডার্সের কোনো কোনো সমর্থক মনে করেন, ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ কালো ভোট পেলে হিলারিকে হারিয়ে দেয়া সম্ভব। ফক্স জরিপ বলছে, হিলারি নারী ও কালোদের ৬০ ভাগের বেশী ভোট পাবেন। ২০০৮ সালে ওবামার বিরুদ্ধে প্রাইমারীতেও হিলারি কালোদের এক তৃতীংশ ভোট পেয়েছিলেন। চারভাগের তিন ভাগ হিসপানিক ভোট পড়েছিল হিলারির বাক্সে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলে, নিউ ইয়র্ক সিটির বাইরের ভোট। সেবারে হিলারি এসব এলাকায় প্রায় ৬৫ ভাগ ভোট পেয়েছিলেন।
হিলারির আরেকটি সুবিধা, নিউ ইয়র্ক প্রাইমারীতে ভোট হবে নিদিষ্ট রুমের ভিতরে, অনেকটা মূল নির্বাচনের মতো। উইসকনসিনের মতো যেসব রাজ্যে স্যান্ডার্স সম্প্রতি জিতেছেন, তার বেশীরভাগেই ভোট হয়েছে উন্মুক্ত জায়গায়। যেখানে অনেক স্বতন্ত্র ভোটাররাও ভোট দিয়েছেন। নিউ ইয়র্কে সে সুযোগ নেই। কারণ রাজ্যে সরকার আয়োজিত এই স্টেট প্রাইমারীতে শুধু রেজিস্টার্ড ডেমোক্রেটরা ভোট দিতে পারবেন। সম্প্রতি স্যান্ডার্সের প্রচারাভিযানে যেসব তরুণকে দেয়া যাচ্ছে, তাদের অনেকেই মঙ্গলবার তাকে ভোট দিতে পারবেননা। নিরপেক্ষ থেকে ডেমোক্রেট হিসাবে তালিকাভুক্তির সময়সীমাও গত অক্টোবরে শেষ হয়ে গেছে।
নিউ ইয়র্কে স্যান্ডার্স প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে ২৬ এপ্রিল। সেদিন উত্তরপূর্বের পাঁচটি রাজ্যে ভোট হবে। যাতে নিস্পত্তি হবে ৪৬৩ জন ডেলিগেট। ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন পেতে একজন প্রার্থীর প্রয়োজন প্রায় আড়াই হাজার ডেলিগেটের ভোট। আর রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হতে প্রাইমারী থেকে জিততে হয় অন্তত ১২৩৭ ডেলিগেটের সমর্থন। ফ্রন্ট রানার ডোনাল্ট ট্রাম্প নিউ ইয়র্কেও বড় ব্যবধানে জিততে চলেছেন বলে বিভিন্ন জরিপে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
সাম্যবাদী নেতা হিসাবে পরিচিত স্যান্ডার্সের সমর্থকরা আরো একটি বিষয়কে সামনে আনতে চাইছেন। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প অথবা টেড ক্রুজ, যেই রিপাবলিকান প্রার্থী হোননা কেন, হিলারির চেয়ে স্যান্ডার্স তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভালোভাবে হারাতে পারবেন। সে সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতেই, মনোনয়ন লড়াইকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত টেনে নিতে চাইছেন স্যান্ডার্স সমর্থকরা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)