দারিদ্য বিমোচন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ফলে দেশ মধ্য আয়ের দিকে এগিয়ে গেলেও আয়-বৈষম্য বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের প্রফেসর এমিরেটাস ড. আজিজুর রহমান খান।
মৌলিক অর্থনীতি বিষয়ে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বাংলাদেশ ব্যাংক-২০১৭’ পুরস্কারপ্রাপ্তির পর নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রোববার বিকেলে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত থেকে ড. আজিজুর রহমান খানকে এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ব্র্যাকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. মাহবুব হোসেনের উত্তরাধীকারীর হাতে এ পুরস্কার ও সম্মাননা তুলে দেন।
মৌলিক অর্থনীতি বিষয়ে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যৌথভাবে তাদেরকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদদ্বয়কে পুরস্কারের সম্মাননা হিসেবে প্রত্যেককে একটি করে স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেস্ট এবং নগদ দুই লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান,বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
ড. আজিজুর রহমান খান বলেন, দ্রুতগতিতে দারিদ্য কমলেও সেই হারে কমছে না আয়-বৈষম্য। বরং ক্ষেত্রবিশেষে বাড়ছে। আমেরিকা ও বাংলাদেশের আয়-বৈষম্য ভিন্ন ধরণের। যে বিচারেই হোক না কেন, বাংলাদেশের আয় বৈষম্য প্রকট। এছাড়া যেসব সম্ভাবনা আছে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
“বিশেষ করে, উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক গণতন্ত্র খুবই জরুরী। আয়-বৈষম্য দূর করতে সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে আমদেরকে কাজ করতে হবে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই অর্থনীতিবিদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, এই দুজনকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। মাহবুব অনেক আগেই চলে গেছে। দেশকে তার দেয়ার আরও অনেক কিছু ছিল। অন্যদিকে, আজিজুর রহমান ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো ছাত্র ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে দেশের প্রথিতযশা চারজন অর্থনীতিবিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জুরি বোর্ড এই দুই অর্থনীতিবিদকে মনোনীত করেন।
ড. আজিজুর রহমান আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের অর্থনীতি বিভাগের এমিরেটাস প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা, কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও ভূমি সংস্কার এবং আয় বণ্টন ও অসমতা বিষয়ে গবেষণা কর্মে তার অবদান অসামান্য। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের প্রভাষক, আইএলওর এশিয়ান এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক এবং বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকনমিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. মাহবুব হোসেন ছিলেন বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি গবেষণার পথিকৃৎ। তিনি গ্রামীণ অর্থনীতি ও শিল্প, কৃষিভিত্তিক কাঠামো, ভূমি সংস্কার, আয় বণ্টন, দারিদ্র্যবিমোচন, কৃষিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ঋণের প্রভাব ও প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে নিবিড় গবেষণা করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বিআইডিএসের মহাপরিচালক, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ইরি) এর সোস্যাল সাইন্সেস ডিভিশনের অর্থনীতিবিদ ও প্রধান, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বরেণ্য এ কৃষি অর্থনীতিবিদ ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।