চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মঞ্জুর হত্যার দায় নিয়েই এরশাদের ৩৩ বছর কাটলো

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার তিন দিনের মাথায় ১৯৮১ সালের ২ জুন জিয়া হত্যার দায় মাথায় নিয়ে নিহত হন চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর। কিন্তু এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে তার নেপথ্যের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপর থেকে ৩৩ বছর ধরে মঞ্জুর হত্যার দায় নিয়েই প্রথমে প্রেসিডেন্ট, পরে কারাবন্দী আর এখন দেশের তৃতীয় প্রভাবশালী রাজনীতিকের জীবন কাটাচ্ছেন এরশাদ।

১৯৯৫ সালের আগে মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইনি কোনো উদ্যোগ ছিলো না। ওই বছর মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের দায়ে এরশাদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার ভাই আবুল মনসুর। এরপর ২০ বছর ধরে চলছে মামলা। তবে এরশাদসহ সকল অভিযুক্তই জামিনে আছেন।

অনেকেই মঞ্জুর হত্যা মামলাকে অনেক পক্ষের জন্যই রাজনৈতিক হাতিয়ার মনে করেন। এজন্যই দু’ দশকেও এরশাদসহ অন্যদের শাস্তি দিয়ে অথবা মুক্ত করে মামলার কার্যক্রম শেষ হয় নি বলে মনে করেন তারা।

রাষ্ট্রপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, এ পর্যায়ে এসে অধিকতর তদন্ত চলছে। মামলার পিপি আসাদুজ্জামান খান রচি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মামলাটি এখন ফার্দার ইনভেস্টিগেশনের পর্যায়ে রয়েছে। সাক্ষীদের এখন আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এবার এই মামলার বিচারকাজ পরিচালনার জন্য নতুন করে সাক্ষী আনা হবে। পুরনো সাক্ষীদের সাক্ষীতো নেয়া হয়ে গেছে। আশা করছি, মামলার আগামী তারিখে সম্পৃক্ত চার্জশিট চলে আসবে।’

তবে রাজনৈতিক কারণে মামলাটি দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ নাকচ করেছেন তিনি। তার দাবি,‘একটি হত্যা মামলা তো হত্যা মামলাই। সেটাকে রাজনৈতিক বা অন্য কোনোভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমরা এভাবে দেখছিও না।’

এরশাদের প্রধান কৌসুলি শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম অবশ্য পুরো বিষয়টাকেই হয়রানিমূলক বলে মনে করেন। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘এজাহারে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নাম ছিলো না। এই ঘটনার সঙ্গে এরশাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না বলেই বাদী তার নাম যোগ করেন নি। কোনো সাক্ষীও তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি। পরে তার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তিনি (এরশাদ) সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ।’

আইনের স্বাভাবিক গতিধারা অব্যাহত থাকলে এবং বিচারিক কার্যক্রম নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে চললে এরশাদ নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলেই বিশ্বাস শেখ সিরাজুল ইসলামের।

‘মামলার বিচারিক কার্যক্রমতো শেষ। এখন শুধু রায়ের অপেক্ষা। ফার্দার ইনভেস্টিগেশনের রিপোর্ট দাখিল হলেই আমরা ন্যায় বিচার পাবো,’ এরকম আশাই তার।

মঞ্জুর গ্রেফতার হওয়ার পর কিছু সেনা সদস্য তাকে পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে যান। আর এরশাদ তখন সেনাপ্রধান। এজন্যই এরশাদের দিকে অভিযোগের আঙুল। তবে যে পুলিশ সদস্যরা তাকে সেনা সদস্যদের হাতে তুলে দেন তাদেরও দায় আছে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

কার নির্দেশে সেদিন পুলিশ সদস্যরা জেনারেল মঞ্জুরকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন? সেসময় চট্টগ্রাম পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন, নির্দেশ এসেছিলো ওই সময়ের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের কাছ থেকে।

এরশাদ ক্ষমতা নেয়ারে সময় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রেসিডেন্ট সাত্তার বলেছিলেন, সরকারের ব্যর্থতা এবং দুর্নীতির কারণে তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছেন। পরে অবশ্য তিনি বলে যান, বন্দুকের নলের মুখেই তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিলো।

মঞ্জুরকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এরকম কোনো বিষয় কি ছিলো? এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি ওই সময় চট্টগ্রামের ডিআইজি এস এম শাহজাহান। সেসময় চট্টগ্রামের এসপি ছিলেন শেখ মারুফুল হক। তারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

এতগুলো বছর হত্যা মামলার দায় নিয়েই জীবন কাটাচ্ছেন এরশাদ। বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জানান, চোখের অপারেশন হওয়ায় গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি কথা বলতে পারবেন না।

তবে এরশাদের পক্ষে কথা বলেছেন তার গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিষয়ক সচিব এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়। তিনি বলেন, স্পষ্টভাবেই এটা সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রতি প্রতিহিংসা এবং ষড়যন্ত্রমূলক আচরণ। ঘটনার ১৪ বছর পরে মামলা হয়েছে। চলছে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে। এর মধ্যে ১৫ বার বিচারক বদল হয়েছে। কিন্তু মামলার কোনো সুরাহা হয়নি।

সুনীল শুভ রায় বলেন, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ এখন ব্যাপারটির নিষ্পত্তি চাচ্ছেন। কতোবার এই মামলার রায় ঘোষণার সুযোগ এসেছে। কিন্তু কোনোবারই রায় দেয়া হয়নি। এখন ন্যায়বিচার অপেক্ষায় আছেন এরশাদ।