ভুতুড়ে এক দৌড়ে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে সাউথ আফ্রিকার ঘাড়ে এমনই এক ভূত চাপিয়ে দিলেন ল্যান্স ক্লুজনার, তা আর নামানো গেল না। একেকটি বিশ্বকাপ আসে, সেই ভূত চেপে বসে একেকজন প্রোটিয়া অধিনায়কের কাঁধে! হ্যান্সি ক্রনিয়ে, গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্সের কাঁধ ঘুরে ভূতের স্থান এখন ফ্যাফ ডু প্লেসিসের কাঁধে! যার নাম বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, আরেক অর্থে চোকার!
বিশ্বকাপ এলেই সাউথ আফ্রিকান অধিনায়কদের শুনতে হয়- আপনারা পারবেন ফাইনালে উঠতে? আর আসর শেষে প্রশ্ন- কোনদিন কী চোকার শব্দটা মুছে ফেলা সম্ভব নয়?
যেহেতু বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন, তাই আগের অধিনায়কদের মত ডু প্লেসিসকেও শুনতে হল প্রথম প্রশ্নটা। জবাব ঠিকই দিয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক, সঙ্গে দীর্ঘশ্বাসে বুঝিয়েছেন এই প্রশ্ন শুনতে শুনতে কতটা ক্লান্ত তিনি!
সবশেষ পাঁচ বিশ্বকাপের চারবারই সেমিতে উঠেছে সাউথ আফ্রিকা। বৃষ্টি আইনের ফাঁদে কাঁটা না পড়লে হয়ত ঘরের মাঠে ২০০৩ আসরের সেমিতেও খেলত প্রোটিয়ারা। বাকিগুলোর ফল একই, চার সেমির কোনটিতেই জয় দেখার সৌভাগ্য হয়নি দলটির!
ভালো সুযোগ ছিল ১৯৯৯ সালে। কিন্তু খুব কাছে যেয়ে ক্লুজনারের সেই খ্যাপাটে দৌড়ে সব ভেস্তে যায়। এরপর ২০১৫ সালেও একটা দারুণ সুযোগ ছিল। কিন্তু সাউথ আফ্রিকান থেকে নিউজিল্যান্ডের নাগরিক বনে যাওয়া গ্র্যান্ট ইলিয়টের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে কপাল খোলেনি সেবারও।
অতীতের বেদনাবিধুর স্মৃতি থেকেই হয়ত বর্তমান দলটাকে নিয়ে খুব একটা প্রত্যাশা করছেন না সাউথ আফ্রিকানরা। বুধবার লন্ডনের উদ্দেশ্যে বিমানে ওঠার আগে ডু প্লেসিসকে পুরনো কথা মনে করিয়ে দেয়া সেই প্রশ্নটাও করে বসেন একজন সাংবাদিক, এবার কী ভাগ্যের পরিবর্তন হবে?
জবাবে দার্শনিকের মত জবাবটা দিয়েছেন ডু প্লেসিস, ‘জনগণ আমাদের লটবহর দেখলেই অবস্থা দেখতে পারবে, অতীতে যা হয়েছে সেটা বিশাল এক আয়নার মতো। এর সামনে দাঁড়ালে আপনি নিজেকে দেখতে পাবেন।’
অতীতের প্রত্যাশার চাপ এবার খানিকটা কম থাকায় সতীর্থদের ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার আহ্বান জানিয়েছেন ডু প্লেসিস। অধিনায়কের আশা তাতেই হয়ত পালাবে চোকার নামের ভূত!
‘আগের বিশ্বকাপগুলোতে আমরা সুপারম্যানের মতো খেলতে চাইতাম। আমরা মনে করতাম আমাদের দলটা সবার থেকে আলাদা কিছু। বিশ্বকাপে ব্যতিক্রমী কিছু করতে চাইতাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল সেগুলো যথেষ্ট কিছু ছিল না।’
‘এবার লম্বা একটা আসর হবে। আমাদের শুধু সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবলে হবে না, এরপরের ধাপ নিয়েও ভাবতে হবে। সেখানে পৌঁছানোর রাস্তা ভাবতে হবে। সকল দলকে হারানোর মানসিকতা রাখতে হবে। ভয়হীনভাবে খেলতে হবে।’