তখন সময় রাত ১টা। বিয়ের সব অয়োজন সম্পন্ন। আত্মীয়-স্বজনের সমাগমে সরগরম বিয়ে-বাড়ি। ১৬ বছর বয়সী কিশোরী কন্যাকে সাজানো হয়েছে বধূবেশে। তারাবির নামাজ শেষে চলে এসেছে বরযাত্রীও। কিছুক্ষণের মধ্যেই কন্যা বসবে বিয়ের পিঁড়িতে। এমন সময় সেখানে হাজির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন এবং তার পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অন্যান্য ব্যক্তিরা। ব্যাস বন্ধ হয়ে যায় সেই বাল্যবিয়ে।
ঘটনাটি ঘটে শনিবার দিবাগত রাত ১টায় টাঙ্গাইলের দামুরিয়া ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতায় বন্ধ হয়ে যায় নুরুল হুদার ১৬ বছর বয়সী মেয়ের বিয়ে। জরিমানা হিসেবে আদায় করা হয় পনেরো হাজার টাকা।
এসময় বিয়ের আসর থেকে বর পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আটক করা হয় বর ও কনে পক্ষের ৪ জনকে। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পুলিশ-প্রশাসন সকলের তৎপরতায় বর ও কনে পক্ষ উভয়ের কাছ থেকে মুচলেকা আদায় করে এবং মেয়ের বয়স ১৮ হওয়ার আগে বিয়ে না দেয়ার শর্তে ছাড়া হয়।
এদিকে রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন ও চ্যানেল আই অনলাইনের তৎপরতায় বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় আরও এক কিশোরী।
ঘটনাটি ঘটে রেববার টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড় ইউনিয়নের বীরসিংহ গ্রামে। বাবা লোকমান হোসেন ও মা শিউলি আক্তারের কন্যা ১৬ বছর বয়সী এ কিশোরী এসএসসি পরীক্ষায় গাজীপুর সদর উপজেলার নয়নপুর গ্রামের ব্রাইট মডেল স্কুল থেকে ৪.৫৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। কিশোরীর স্বপ্ন ছিলো কলেজে পড়ার। কিন্তু এরই মাঝে পারিবারিকভাবে সম্পন্ন করা হয় তার বিয়ের সব অায়োজন।
কিশোরীকে বিয়ে দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় দাদাবাড়ি টাঙ্গাইলে। সেখানে তার ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের কথা ছিল তার। রোববার প্রথম রমজানের দিন ইফতারের পরপরপরই ছিল তার বিয়ের অায়োজন।
বিষয়টি সে তার এক শিক্ষককে জানালে তার শিক্ষক যোগাযোগ করেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে। চ্যানেল আই অনলাইনের পক্ষ থেকে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ের বাবা-মাকে বুঝিয়ে সক্ষম হন বিয়ে বন্ধ করতে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, তার এলাকায় বাল্যবিয়ে বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অনেক বেশি তৎপর। যে কোন সময় তার কাছে এ ধরণের সংবাদ এলেই তিনি ছুটে যান ঘটনাস্থলে। এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে উভয় পরিবারকে বুঝিয়ে বন্ধ করেন বিয়ে।
এ ধরণের কাজে ঝুঁকিও অনেক অাছে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘একটা বিয়ের সব অায়োজন সম্পন্ন। গরু-খাসি জবাই দিয়ে অনেক টাকা খরচ করে করা হয় অায়োজন। সে অবস্থায় সেখানে যেয়ে উভয় পরিবারকে বোঝানো সত্যিই অনেক কঠিন। অনেকে মানতে চাননা। তারপরও উভয় পরিবারকে বুঝিয়ে মুচলেকা আদায় করে তারপরই দেয়া হয় ছাড়।’