চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভ্রমণ ভিসায় কেন কাজ

বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা আয় করছেন বিদেশিরা। যার পুরোটাই বিদেশে চলে যাচ্ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই গবেষণা করা হয়েছে।

বিশ্বায়নের যুগে যোগ্য ও দক্ষ নাগরিকরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা অবশ্যই হতে হবে স্ব স্ব দেশের আইন মেনে। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জনবলও দেশের বাইরে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকেন, তবে সেগুলো সবই নিয়ম মেনে। কিন্তু গবেষণা তথ্যে বাংলাদেশের এই চিত্র সত্যই উদ্বেগজনক।

গবেষণা প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্যানুসারে: বৈধ ও অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লাখ বিদেশি কর্মী কাজ করেন। যার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী বৈধ কর্মী ৯০ হাজার। তাদের ন্যুনতম গড় মাসিক বেতন দেড় হাজার ডলার। সেই হিসাবে বিদেশি কর্মীদের বার্ষিক আয় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা সাড়ে ৪শ কোটি ডলার। ৩০ শতাংশ স্থানীয় ব্যয় বাদে প্রায় ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে যায়।

আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বৈধভাবে বিদেশে যায় ৪৬ মিলিয়ন ডলার। বাকি ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হয়ে যায়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর বার্ষিক রাজস্ব ক্ষতি হয় ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন বা ১২ হাজার কোটি টাকা।

গবেষণায় আরো উঠে এসেছে: বিদেশ থেকে বাংলাদেশে যারা কাজ করতে আসেন তাদের ৫০ শতাংশই আসেন ভ্রমণ ভিসায়। তারা এখানে কাজ জোগাড় করে আবার দেশে ফিরে যান। পরে আবার ভ্রমণ ভিসা নিয়ে আসেন। এভাবেই তারা অর্থ উপার্জন করে বিদেশে পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশ কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করছেন। এমনকি সরকারি প্রকল্পে যেসব বিদেশি কাজ করছেন তারাও ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন। তৈরি পোশাক খাতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন, এর মধ্যে ভারতের শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরপর শ্রীলঙ্কা ও চীনসহ ৪৪টি দেশের শ্রমিক রয়েছেন।

বিদেশি কর্মী নিয়োগে দেশের প্রচলিত আইনে কোনো বাধা নেই। তবে রয়েছে প্রচলিত কিছু রীতিনীতি, সেগুলো যে মানা হচ্ছে না তা টিআইবির গবেষণা তথ্যে পরিস্কার ফুটে উঠেছে। এছাড়া ভিসার সুপারিশপত্র, বিদেশে বাংলাদেশ মিশন থেকে ভিসা সংগ্রহ, বিদেশি নাগরিক নিবন্ধন, কাজের অনুমতি, নিরাপত্তা ছাড়পত্র এবং ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধিতে ২৩ থেকে ৩৪ হাজার টাকার নিয়মবিহর্ভূত অর্থ লেনদেন হয় বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে থাকা এসব বিদেশি নাগরিক কোনো ধরণের নাশকতায় জড়িয়ে পড়লে তার জন্য দায়ী কে হবে? এ বিষয়গুলো বহুবছর ধরে আলোচিত এবং দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় যোগ্য-দক্ষ ও প্রয়োজনীয় লোকবল তৈরি না হবার একটি স্পষ্ট প্রমাণ। এছাড়া আইন প্রয়োগে দূর্বলতা বা দেশের প্রশাসনের মনিটরিং ঘাটতিতে কেন এসব হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে। আমাদের আশাবাদ, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।