যে হাতে বই আর ল্যাপটপ থাকার কথা সেই হাতেই উঠেছে প্রতিবাদী ব্যানার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে অান্দোলন হলেও ছেলেমেয়েদের ব্যাপকভাবে রাস্তায় নেমে আসা পুলিশের গুলির প্রতিবাদ জানাতে।
রামপুরা থেকে কুড়িল, ধানমণ্ডি থেকে কলাবাগান; শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত ছিল সারাদিন। নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে রোদ-বৃষ্টির মাঝেই রাস্তায় কাটিয়ে দেয় ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্টওয়েস্টসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
‘আমাদের চোখের বারুদটা দেখুন। ওই বারুদ বলছে, ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে ঘরে ফিরবো না,’ বলে চীৎকার করে বলছিলেন ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর বুধবার পুলিশ গুলি করার পর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
গত চারমাস ধরে ভ্যাট বাতিলের দাবিতে আন্দোলন হলেও গুলিবর্ষণের ঘটনার পর তা ব্যাপক রূপ নেয়।
‘আমরা এতোদিন আন্দোলন করছিলাম শুধু ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে। আমাদের বন্ধুদের ওপর গুলি হওয়ার পর এখন তা নির্যাতনের বিরুদ্ধেও। আমরা দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার চাই, ভ্যাট বাতিল হোক; তা না হলে আমাদেরকেও গুলি করা হোক,’ বলছিলেন আরেকজন।
দিন শেষে এক ধরণের সাফল্যের মধ্য দিয়েই তাদের আন্দোলন শেষ হয়ে। সরকার বলেছে, শিক্ষার্থীদের নয়, ভ্যাট দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
ইস্টওয়েস্ট কর্তৃপক্ষ সরকারের বক্তব্যকে সমর্থন জানালেও ছাত্ররা বলেছে, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে, না হলে আন্দোলন চলবে।
ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন আন্দোলনে শুরুতে চমকে গিয়েছিলো স্থানীয়রা।
লতিফুর রহমান নামে এক দোকানি বলেন: এ যাবৎ এ বিশ্ববিদ্যালয় হবার পর ছাত্রদের এমন রুদ্রমুর্তি আমরা দেখিনি। আমরা ভেবেছিলাম তারা শুধু বই পুস্তক আর ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তারাই আজ বুঝিয়ে দিলো নিজের প্রয়োজনে রাজপথও কাঁপাতে জানে তারা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সমবেত হওয়া শিক্ষার্থীরা অভিনব সব ব্যানার-ফেস্টুনে হাজির হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। কারো ফেস্টুনে লেখা: ‘আমার বাবা কোনো এটিএম বুথ নয়’, কারোরটায় ‘জলকামান এনে হবে না, ড্রাগন নিয়ে আসো’।
বেলা বাড়তে থাকলে আরো নতুন ব্যানার-ফেস্টুনে শিক্ণার্থীরা হাজির হতে থাকে। ওইসব ফেস্টুনে লেখা ছিলো: ‘আলু, পটল, পেঁয়াজের মতো শিক্ষার উপর ভ্যাট বসাবেন না; ‘শিক্ষা কোন পণ্য না’; ‘শিক্ষা কি পণ্য, ভ্যাট কিজন্ ‘; ‘যতই চালা বুলেট গুলি, ভরতে দিব না ভ্যাটের ঝুলি’।
এদের মধ্যে এক শিক্ষার্থীকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের রূপে দেখা যায়। বাংলাদেশের পতাকা হাতে উদোম গায়ে সে লিখেছে, ‘গুলি কর নো ভ্যাট’। আরেকজন লিখেছে, ‘শিক্ষিত হতে ভ্যাট কি? ছি’!
শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তবে, অ্যামুলেন্স, শিশুদের স্কুল ভ্যান এবং সাংবাদিকদের যানবাহন অবরোধমুক্ত ছিলো।
এরমধ্যেও বয়স্ক মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। দুপুর ২টার দিকে হজগামী একজনকে ব্রিজের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। ‘বাবা পবিত্র কাজে মক্কায় যাচ্ছি,’ বলে চলে যান তিনি।।
বিকেলে বৃষ্টির বাগড়া তাদের শ্লোগানকে কিছুটা কমালেও সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে শ্লোগানের আন্দোলন।