করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশ একটি নেতিবাচক রেকর্ড করেছে। ইউনিসেফের জরিপে, টানা ৬১ সপ্তাহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ওই রেকর্ডটি যৌথভাবে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে এখন বাংলাদেশের। এত দীর্ঘসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের শিক্ষাখাত ও শিক্ষার্থীদের যে চরম ক্ষতি হয়েছে, তার প্রভাব দীর্ঘ কয়েকযুগে হয়তো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে স্কুল-কলেজের চলমান ছুটি আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে সরকার। গত ২১ জানুয়ারি থেকে স্কুল-কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ করে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
করোনাতে বিশ্বের সবচেয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউনিসেফের ওই জরিপে দেখা গেছে, এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি। প্রতিবেশি দেশ ভারতেও ২৫ সপ্তাহের মতো বন্ধ ছিল। বিশ্বের উন্নত দেশের পাশাপাশি আফ্রিকার চরম অনুন্নত দেশগুলোও কোনো না কোনো উপায়ে চালু রেখেছে শিক্ষা কার্যক্রম।
দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের আওতায় এসেছে শিশু শিক্ষার্থীরা। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী অন্তত এক ডোজ করে হলেও ভ্যাকসিন পেয়েছে। প্রতিদিন তা বেড়েই চলেছে। এইধারাতে শিক্ষা কার্যক্রমেও অঙশ নিতে শুরু করেছিল শিক্ষার্থীরা। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াতে আবার শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, করোনা মহামারি রাতিরাতি চলে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়ে ও ভ্যাকসিন কার্যক্রম জোরদার করে এটি হয়তো নিয়ন্ত্রণে আসবে। উন্নত দেশগুলো করোনার বাস্তবতা মেনে নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে চালু রাখার পাশাপাশি করোনা চিকিৎসার আইসোলেশন সময়েও পরিবর্তন এনেছে। আন্ত:দেশীয় যোগাযোগে ব্যবহ্নত আকাশপথের নিয়মেও আসছে বড় ধরণের ইতিবাচক পরিবর্তন। এতে বোঝায় যাচ্ছে, করোনাকালে শিক্ষা কার্যক্রম ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের নতুন ধারায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব।
অতি সংক্রামক ওমিক্রনের কারণে বহুসংখ্যক শনাক্তের ঘটনা ঘটলেও মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেশ কম। দ্রুতসময়ে সুস্থও হয়ে উঠছেন আক্রান্তরা। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশেও উন্নত দেশগুলোর করোনা প্রটোকল অনুসরণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতিত অন্যসবকিছু স্বাভাবিকের চেয়ে স্বাভাবিক পুরোদেশে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিও অনেকটা ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই আমাদের আশাবাদ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকসিন কার্যক্রম জোরদারে তাগিদ দরকার। তাহলেও হয়তো দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সার্বিক জনজীবন অনেকটা স্বাভাবিক হবে।