গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে বলা হচ্ছিল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সেমিফাইনালের প্রথম পর্ব। সীমানা নিয়ে রিটের কারণে হঠাৎ করে গাজীপুরের নির্বাচন স্থগিত হওয়াতে জনমনে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক নেতারাও পরস্পরবিরোধী নানা বক্তব্য দিচ্ছেন গণমাধ্যমে।
সংসদ নির্বাচনের আগে এই দুই সিটিতে নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশে ইসি স্তম্ভিত এবং বিব্রত মন্তব্য করে আইনী লড়াইয়ে যাবার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। খুলনার নির্বাচন বন্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই জানিয়ে খুলনাবাসীকে ভোট উৎসবের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন সিইসি।
তিনি একথাও জানিয়েছেন, সব পক্ষের মতামত নিয়ে এবং কোনো জটিলতা না থাকায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চাওয়া অনুযায়ী গাজীপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিলো ইসি।
শেষ পর্যন্ত ভোটের এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্তির গেজেট এবং সম্প্রতি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রজ্ঞাপন ও তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে এক রুলও জারি করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমও উচ্চ আদালতে এসেছেন।
স্থগিতের ঘোষণা আসার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অনেকে এই স্থগিতাদেশের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় নেতারা একে আইনি পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করে দায় মুক্ত থাকার চেষ্টা করছেন।
উৎসবমুখর কোনো নির্বাচনসহ কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যখন হঠাৎ থেমে যায়, তখন নানা ধরণের গুজব, শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা সামনে এসে দাঁড়ায়। ইতিহাস বলে, নির্বাচন হয়ে যাবার পরে নির্বাচিত কর্তৃপক্ষ যাই করুক বা যে আচরণই করুক; দেশের জনগণ তা তাদের সহজাত সহ্যশক্তি দিয়ে মেনে নেয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে ভোট দিতে আগ্রহী জনগণ যদি ভোটদানের পথে কোনো বাধা দেখে, তখন ক্ষুব্ধ হয়, যা নির্বাচননির্ভর গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
আমরা আশা করি, বিষয়গুলো দায়িত্বশীল সব কর্তৃপক্ষই অনুধাবন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন যাতে করে দেশের জনগণ তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় যেকোনো নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।