পৌষের কনকনে ঠান্ডাকে দূরে ঠেলে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকায় বইছে উষ্ণ আমেজ। সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পরে থেকেই সরগরম নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীক আর কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে দিন রাত ছুটে চলছেন ভোটারের দরজায় ভোট ভিক্ষায়।
প্রার্থীদের পক্ষে উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি আর ফুলের মতো চারিত্রিক গুণাবলির বিশেষণের পসরা সাজিয়ে জোর প্রচারণায় চলছে মাইকিং, ভোটার ভাইদের বলে যাই…
নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভা পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ১৮হাজার ৭শ ৭৪জন। এ পৌরসভায় মেয়র পদে ৪জন, কাউন্সিলর পদে ২৯জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে ভোটারদের মাঝে মূল আলোচনার কেন্দ্র-বিন্দুতে রয়েছেন মেয়র প্রার্থীরা। মেয়র পদে বিএনপি’র একক প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও আরো ২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় অনেকটা বিপাকে পরেছে আওয়ামী সমর্থক সাধারণ ভোটাররা।
বিএনপি’র গ্রুপিং-লবিং রাজনীতি ও সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকলেও সাধারণ সমর্থক ভোটারদের মধ্যে তার কোন প্রভাব নেই। অপরদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরো প্রকাশ্য আকার ধারণ করছে।
দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক আজহারুল ইসলামকে পেছন থেকে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।
অপর বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম চঞ্চল আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী মাসুদুল হক মাসুদের আপন ভাতিজা। আর এ কারণে মাসুদুল হক মাসুদের নিজস্ব ভোট ব্যাংকেও দেখা দিয়েছে দ্বিধা বিভক্তি।
আওয়ামী লীগের সমর্থক ভোটাররা তিন ভাগে বিভক্তি হওয়ায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন বিএনপি সমর্থীত প্রার্থী আব্দুল খালেক মন্ডল।
এদিকে সোমবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ায় আজহারুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম চঞ্চলকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করে দলীয় সকল পরিচয় প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে শেখ হাসিনার মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় দল থেকে বহিস্কার করা হলো।
সদ্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার হওয়া দুই বিদ্রোহী প্রার্থী আজহারুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম চঞ্চল তাদের বহিস্কারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
চ্যানেল আই অনলাইনকে আজহারুল ইসলাম বলেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমাকে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও সাধারণ ভোটারগণ তাদের পৌরসভার উন্নয়নে আমাকে চায়। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
তারিকুল ইসলাম বলেন, আমি গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনের লক্ষ্যে পৌরবাসীর খেদমত করে আসছি। তাদের সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে ছিলাম। তাদের চাওয়ার প্রতিফলনেই আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। সাধারণ মানুষের ভোটে জয় আমারই হবে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীরা কোন সমস্যা হবে না, তারা এখন আর দলের কেউ নন। নির্বাচন হবে নৌকা বনাম অন্য কিছু। ৭০ এর নির্বাচনের মতোই গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতেই জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।
বিএনপি’র প্রার্থী আব্দুল খালেক মন্ডল বলেন, বর্তমান সময়ের মতোই প্রাশাসন যদি নিরেপেক্ষ থাকে ও নির্বাচন প্রক্রিয়া যদি সুষ্ঠ হয় তাহলে আমার জয় নিশ্চিত।