চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ভেজালের দেশে ভেজাল জীবন

মা-মাটির প্রিয় এই বাংলাদেশ এ জাতির অহংকার। উন্নয়নের সড়কে আগামীর স্বপ্ন-‘পরিবর্তন আসবেই।’ এর জন্য অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পথে সামাজিক নৈতিকতাবোধের উন্নয়নটা খুব জরুরি। কিন্তু সামাজিক নৈতিকতার কাছে দেশের জনগণ বারবার হোঁচট খাচ্ছে। মানুষের নৈতিকতার পরিবর্তন আইন বা নিয়ম দিয়ে করা যায় না। এর জন্য দরকার নিজস্ব বিবেকবোধ ও চেতনা। যাকে এক কথায় বলায় যায় মনুষ্যত্ববোধ। কিন্তু মানবিক বাংলাদেশে এ মনুষ্যত্ববোধটা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে বলে খাবারে ভেজাল নামের বিষ দিতে দ্বিধাবোধ করে না ব্যবসায়ীরা।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে যদি প্রশ্ন হয়, সরকারি চাকরীজীবিদের এত বেতন ভাতা বৃদ্ধির পরেও কেন ঘুষ দুর্নীতি কমেনি? কিংবা দেশের বড় বড় কনজুমার কোম্পানিগুলো একচেটিয়া ব্যবসা করার পরেও মানুষকে ভেজাল খাবার কেন খাওয়াচ্ছে- এসব প্রশ্নের একটাই উত্তর ‘লোভ।’

২০১৯-২০ সালের খাতা কলমে বিশাল এক বাজেট উপস্থাপন করা হলো। বলাও হচ্ছে এ বাজেট বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর। দেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নাজুক। কোটি কোটি টাকা ঋণখেলাপির নামে হাওয়া হয়ে গেছে। তাহলে এ বাজেট বাস্তবায়নের দায় কাদের উপর পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর প্রথম প্রভাব পড়বে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর উপর তাতে কোন সন্দেহ নেই। জনগণের উপর বাড়াচ্ছে চাপ।

ঘুষ, দুর্নীতি, ঋণখেলাপি, ভেজাল খাদ্য, মাদক- এ চক্রটার হাতে জিম্মি জনগণ। এখানে প্রশাসনকে সরকার যত সুযোগ সুবিধা দিক না কেন, তাতে জনগণের ফাইল সচল হবে না ঘুষ ছাড়া। কারণ ঘুষের টাকা যে মাসের বেতনের মতো নিয়ম মাফিক ইনকাম। আর এ বাড়তি ইনকামের সুবিধা একা কেউ ভোগ করে না। এ টাকার অংশীদার হয় অনেকে। শোনা যাচ্ছে পুলিশের জন্য পকেটবিহীন পোশাক হবে ঘুষ প্রবণতা কমাতে। বিষয়টা খুবই হাস্যকর। কারণ ঘুষ নিতে পকেটে লাগে না। রাস্তায় ডিউটিরত পুলিশের ঘুষ না হয় পকেটে যায়। কিন্তু এসি রুমের লেনদেনে পকেট লাগে না।

ভেজালবিরোধী অভিযানে প্রায় না খেয়ে থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে মানুষের। কিন্তু হাস্যকর হলেও সত্যি যে, ভেজাল প্রস্তুতকারীদের ব্যবসাতে কোন ক্ষতি হয়নি তাদের দ্রব্যকে ভেজাল বলা হলেও। কারণ ভেজাল চিহ্নিত হবার আগেই খোলা বাজারে মজুদ ছিল সেমাই থেকে শুরু করে তেলসহ সবকিছু। আর দোকানিরা তা বিক্রি করেছে অবলীলায়। কারণ তারা বিনিয়োগ করেছিল রোজাকে সামনে রেখে। সুতরাং মানুষের জীবন রক্ষার দায়কে মানবিকতা থেকে বিবেচনা করে বিক্রি বন্ধ করে দেবার এমন মানসিকতা অকল্পনীয়। এমন চিন্তা করলে যে ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার প্রতিকার কে দিবে। আবার সকল দোকান থেকে এসব জিনিস জব্দ করার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ভেজালের সমাধানে সেই ভেজাল। কিছু সচেতন মানুষ হয়তো খেয়াল করে জিনিস কিনেছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ তা করেনি। এখনো হয়তো ঘরে ঘরে পাওয়া যাবে ভেজাল সেমাই। এই দেশটা এখন ভেজালের দেশ আর ভেজাল মানুষের বসবাস। তা না হলে এত অন্যায় অপরাধের প্রতিবাদের পর বিবেকটা জেগে উঠত। এখানে ধনী হবার প্রতিযোগিতাতে মুষ্টিমেয় মানুষ জিম্মি করেছে কোটি মানুষকে। এরা ভেজাল খাবার, মাদক কিংবা ঘুষের চক্রে নিজেদের বিবেককে ধবংস করে দিয়েছে। আর তারা জানে এ চক্র থেকে বেরিয়ে এলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাবে প্রসাদসম অর্থের অট্টালিকা, নাম, যশ, খ্যাতি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তার চিরবিদায়ের আগে এক ভাষণে দুর্নীতিবাজ চোরাকারবারীসহ অবৈধ কার্যকলাপকারীদের সাবধান করেছিলেন। কিন্তু এক গভীর ষড়যন্ত্র তাকে সে সুযোগ দেয়নি এসব দেশ শত্রু দের শাস্তি দিতে। আজ তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই শপথ নিয়েছেন দুর্নীতি, ভেজাল, মাদকের বিরুদ্ধে। দেশের আপামর জনগণ চায় সামাজিক ও নৈতিক পরির্বতন। কিন্তু এর জন্য সিস্টেমের পরিবর্তনটা সময় সাপেক্ষ। দুর্নীতির আগ্রাসন যে সাপের ছোবলের মতো। যার বিষ একবার ছড়িয়ে পড়লে ধ্বংস অনিবার্য। তাই এ সাপকে বন্দী করতে না পারলে আগামীর বাংলাদেশ সামাজিক ও নৈতিকভাবে শিরদাঁড়া খাড়া করে দাঁড়াতে পারবে না তাতে কোন সন্দেহ নেই।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)