ভূমিকম্প নিয়ে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা। প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশি গবেষক বলছেন, প্রযুক্তি নির্ভর তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে তাদের প্রতিবেদন আর অন্য পক্ষ বলছেন, গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের মিল কম। গবেষণা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান তারা।
যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর আর বাংলাদেশের একদল গবেষক এক দশকের গবেষণা শেষে প্রমাণ পেয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চল এবং মিয়ানমারের কিছু অংশে যে কোনো মুহূর্তে হতে পারে বড় ধরনের ভূমিকম্প। যার মাত্রা হতে পারে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ পর্যন্ত। গবেষণা দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আক্তারের দাবি, এই তিনটি দেশে স্থাপিত জিপিএস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে তাদের গবেষণাপত্র।
তিনি বলেন, তিব্বত প্লেট, ইন্ডিয়া প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলটা রয়েছে বাংলাদেশে। জিপিএসের যেটা গতি নির্ণয় করে সেটা বিশ্লেষণ করে মডেল করে আমরা দেখেছি মায়ানমার প্লেট ও ইন্ডিয়া প্লেট বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ওভাররাইট করছে। ভূমির ২৫-৩০ কিলোমিটার নিচে এই দুটি প্লেট আটকে রয়েছে। এবং সেখানে প্রচুর পরিমাণে শক্তি জমা আছে। আমরা ক্যালকুলেট করে দেখেছি, ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে এই অঞ্চলের যেকোনো এলাকায়।
গবেষকদের আশঙ্কা ওই মাত্রার ভূমিকম্প হলে ২৪ হাজার বর্গ কিলোমিটারের প্রায় ১৪ কোটি মানুষের জীবন পড়তে পারে হুমকির মুখে। যদিও এ নিয়ে আপত্তি আছে আরেক গবেষক বাংলাদেশ ভূমিকম্প সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারীর।
তিনি বলেন, তারা যেটা বলছেন যে বাংলাদেশের মাঝখান দিয়ে ভূমিকম্প হতে পারে সেটাতে আমি দ্বিমত পোষণ করি। আমি মনে করি আমাদের উপরে একটা ফাটল রেখা আছে যেটা ২৫ কিলোমিটার লম্বা। কিন্তু সেখানে ১০০০ বছরে কোনো ভূমিকম্প হয়নি। সেটা আমাদের দক্ষিণে অবস্থিত আর আমাদের পূর্বে একটি ফাটলরেখা আছে। তারা যে ফাটলরেখা দেখাচ্ছেন সেটা তারই সমান্তরাল। ইতিহাস বলে তারা যেসব এলাকা দেখাচ্ছেন সেসব এলাকায় বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। তাই সবাইকে প্যানিক না হওয়ার আহবান জানাবো।
অবশ্য গবেষকরা হলফ করে বলতে পারছেন না ঠিক কবে হবে ওই ভূমিকম্প। এমনকি সেই ভূকম্পন হতে পারে পাঁচশ থেকে এক হাজার বছর পর! আর সে কারণেই আতঙ্কিত না হয়ে বরং ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি নিতে সরকার ও জনগনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন গবেষকরা।