শিফনের গোলাপী ওড়না, গোলাপী রংয়ের জর্জেট জামা, হাতে একই রঙের ব্যাগ ও পায়ের জুতাও একই রঙে। হাতে পড়া ঘড়িটিও ম্যাচিং করতে ছাড়েনি। কপালে গোলাপী টিপ আর লিপে মনে হলো গোলাপী লিপজেল। তাতেই অপরূপ লাগছে। আর দক্ষিণা বাতাস যখন তার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে, তখন সেরূপ পাচ্ছে অন্য এক শোভা।
এতো সুন্দর একটা মেয়ে। বাতাসে কেবল তার চুলই নয়, যেন মনও দুলছে। আর হাসিতে, ঝরে ঝরে পড়ছে মুক্ত। পোশাকের এমন আভিজাত্য আর পরিপাটি-মানানসই এমন সাজ সচরাচর চোখে পড়েনি শরীফের। চোখ সরাতেই পারছে না। অমন সুন্দর টানা চোখ আর পান পাতা মুখ এর আগে তিনি একজনেরই দেখেছেন। আর আজ দেখলেন।
বার বার ফিরে কেবল ওই মেয়েটিকেই দেখছে সে। সাথের মেয়েটিকে হাত নেড়ে বাই বাই বলছে। একি..মেয়েটি তো চলে যাচ্ছে! ও হো! নামটাই তো জানা হলো না। কোথায় বাড়ি, কি করে, কোথায় পড়ে…বাবা-মা কোথায় কিছুই তো জানা হলো না। কিন্তু জানাটা যে এখন ভীষণ জরুরি হয়ে পড়লো। এমন একটি মেয়েই তো এতোদিন ধরে খুঁজছে শরীফ। তাই দেরি না করে আইসক্রিমের দাম দিয়ে শরীফ পিছু নিলো মেয়েটির।
শরীফ। ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ। সব চুলে পাক ধরলেও এখনো দারুন স্মার্ট আর অভিজাত। ড্যাশিং একটা ভাব এখনো তার চলনে-বলনে। রাজধানীর একজন ঝানু ব্যবসায়ী। নামকরা এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ঢাকায় একাধিক বাড়ী ও গাড়ী আছে শরীফের। স্ত্রী মুক্তা একজন গৃহিনী। মা, একমাত্র ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে শরীফের সংসার।
শরীফ যেই মেয়েটির পিছু নিলো অমনি মেয়েটিও খেয়াল করলো। আরে, এ যে দেখি বুড়ো শালিক। তাড়াতাড়ি করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ীতে গিয়ে বসলো। মনে মনে ভাবছে, এই বুড়োটা এদিকে আসছে কেন? মনের ভিতরের এই উৎকণ্ঠাকে বুঝতে দিলো না। ড্রাইভারকে বলল, আসিফ ভাই, তাড়াতাড়ি চলো।
শরীফের চোখে অপূর্ব এই সুন্দরীর নাম ভূমি। পড়াশুনা শেষ করেছে। বয়স আর কত হবে ২১ বা ২২ বছর। একমাত্র মেয়ে বাবা-মায়ের। অনেক আদরে লালিতা। ভূমির বাবাও ব্যবসায়ী এবং স্বনামখ্যাত।
ভূমি মুখে কিছু না বললেও ড্রাইভার আসিফ বুঝতে পেরেছেন। আসিফের বয়স ৪৫ এর উপরে। ভূমির বয়স যখন ১০ তখন থেকেই তাদের বাসায় ড্রাইভারের কাজ করেন আসিফ। দেখতে কিছুটা চাপা রংয়ের হলেও ব্যবহারে দারুন অমায়িক। সবচেয়ে বড় কথা হলো ভূমিকে সে নিজের বোনের মতোই মনে করে। তাই জানতে চাইলো-
কিছু কি হয়েছে আপু?, আমাকে বলেন।
না আসিফ ভাই, তেমন কিছু না…আপনি তাড়াতাড়ি গাড়ী চালান।
ঠিক আছে আপু।
তারপরও ভূমির সতর্ক চোখ পিছু নেয়া বুড়ো শালিকের দিকে। বাড়ির গেটে এসে কিছুটা হাফ ছাড়লো ভূমি। ভালো করে খেয়াল করলো, এখন আর সে সেই লোকটাকে দেখতে পাচ্ছে না। যাক, বিপদ মনে হয় কেটে গেছে। সে আপন গতিতেই বাড়ীর ভেতরে গেলো। রুমে ঢুকেই বলল, খালা, এক গ্লাস শরবত দাও তো!
দিচ্ছি আম্মা-বলেই রান্না ঘরের দিকে গেলো টুনির মা। টুনির মাকে সে খালাই বলে। টুনির মার বয়স কিন্তু খুব বেশি না…এই ৩৮ বা ৪০ হবে। সারাক্ষণ মাথায় এমনভাবে ঘোমটা দিয়ে রাখে, যে বোঝাই যায় না। তবে গায়ে-গতরে বেশ স্বাস্থ্যবান। এখন দারুন গড়ন টুনির মার। আসল নাম যে কি, তা জানে না ভূমি। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছে টুনির মা, জেনে এসেছে সে- ইনি টুনির মা। কিন্তু মাথার ভেতর থেকে কিছুতেই ওই বুড়ো লোকটাকে নামাতে পারছে না ভূমি। এভাবে কেউ কাউকে দেখে? ফলো করে? অবাক ভূমি। টুনির মা এক গ্লাস শরবত তার সামনে দিয়ে বলল,
– এই নেন খালাম্মা, আপনার শরবত। আর কিছু দিমু?
– না থাক, আর কিছু লাগবে না। বাবা কি বাসায় খালা?
– না খালাম্মা। দুলাভাই তো আসেন নাই।
– তাই নাকি?
– জ্বি খালাম্মা।
– আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যাও।
ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করেই সাগরকে ফোন দিল ভূমি।
সাগরকে ভূমি ভালোবাসে। সাগরের বয়স ২৮ বা ৩০ হবে। ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা, গায়ের রং উজ্জ্বল। গড়নও সুন্দর। এখন একটা আন্তর্জাতিক সংস্থায় উধ্বতন কমকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এতো অল্প বয়সে সাধারণত এটা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সাগরের মেধা আর পরিশ্রম করার মানসিকতা তাকে এই পর্যায়ে এনে পৌঁছিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সাগর ভূমিকে অনেক ভালোবাসে। এই জন্য ভূমিও খুবই পছন্দ করে সাগরকে। তাই যেকোনো বিপদে-আপদে তার প্রথম ও প্রধান ভরসা সাগর।
– কোথায় তুমি?
– এই তো এখানে! কেন, কি হয়েছে?
– তুমি যেখানেই থাকো, তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। জরুরি কথা আছে।
– ওকে, ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব।
– ওকে।
ফোন রেখেই জানালার পাশে গিয়ে দাড়ায় ভূমি। সর্বনাশ, লোকটা তো এখানেও এসে পড়েছে। এখন কি করবে সে। সাগরটা যে কখন আসবে?
এই সময় শরীফ দারোয়ানের কাছে গেলো। দারোয়ান একটু কম বয়সী মনে হলো শরীফের। কত আর হবে ৩০ বা ৩২। হালকা-পাতলা গড়ন। তবে দারোয়ানের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো গোফ। বিরাট গোফ আছে দারোয়ানটার। কাছে গিয়ে শরীফ জানতে চাইলেন,
– ভাই আপনার নাম কি?
– কিটু, ক্যান? নাম জিগান ক্যান?
– আচ্ছা, এই বাড়িটি কার?
– কেন?
– আহা, বলেন না প্লিজ!
– এটা মুনীর সাহেবের বাসা।
– ও। তা কি করেন তিনি?
– এত কিছু কেন জিগান?
– ও সরি, আচ্ছা তিনি কি বাসায় আছেন?
– না. সাহেব এখনও আসেন নাই।
– কখন আসবেন জানেন?
– না।
শুনে আরো একবার বাড়িটির দিকে তাকিয়ে, ফিরে গেলো গাড়িতে। গাড়ী ঘুরিয়ে ফিরে গেলো। এমন সময়ই বাইকে ওই বাড়িতে ডুকলো সাগর। বাইক রেখেই সোজা ঢুকে গেলো বাড়িতে। ড্রয়িং রুমেই বসা ছিল ভূমি। সাগরকে জড়িয়ে ধরে বললো:
– তুমি কি বাইরে কাউকে দেখেছো?
– কই, নাতো!
– একটু আগেই ছিলো।
– কে? কি হয়েছে?
– আরে, আমি আর মিথিলা আইসক্রিম খাচ্ছিলাম। দেখলাম কি একটা বয়স্ক লোক আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে!
– এতে সমস্যার কি আছে? তুমি দেখতে এতো সুন্দর যে, বুড়োর মাথা খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই দেখ আমাকে! আমি তো নাই হয়ে গেছি।
– সব সময় ইয়ার্কী। একটা সিরিয়াস সমস্যা নিয়ে আলাপ করছি, আর ইনি…..এখানেও শুরু হয়ে গেলেন।
– ওকে বাবা ওকে। আমি সিরিয়াস। তারপর কি হলো?
– তখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা ছিল না। আমি বাসায় ফেরার জন্য যখন রওনা দিলাম, ঠিক তখন দেখলাম আমাদের পিছনে একটা গাড়ী। আর সেই গাড়ীতে ওই বুড়ো লোকটা!
– তাই নাকি? তাহলে তো সত্যিই ভয়ের কথা। আচ্ছা, সেই লোকটা কি বাসায় এসেছিল?
– না। তবে গেট পর্যন্ত এসেছিল। আমার ভীষণ ভয় করছে। এখন কি হবে সাগর। লোকটাকে তো সুবিধার মনে হচ্ছে না। এখন কি হবে?
– আহ। অস্থির হইও নাতো। ভাবতে দাও। হুমম। জলদি চলো দেখি, দারোয়ান কিছু বলতে পারে কি না।
গেটে গিয়ে দারোয়ান কে দেখতে না পেয়ে জোরে জোরে ডাকতে লাগল সাগর:
– কিটু ভাই? কিটু ভাই?
– জ্বি সাগর ভাই।
– কোথায় গিয়েছিলেন?
– ওয়াশরুমে, সাগর ভাই, সরি।
– না না, ঠিক আছে। এখন একটা কথা বলেন তো, একটু আগে অচেনা কেউ এসেছিল এখানে?
– জ্বি, এসেছিল।
– কিছু বলেছে?
– হ্যা, এই বাড়িটা কার, বাসায় আছে কি না, কখন আসবে- এসব প্রশ্ন করছিল?
– আর কিছু?
– না, আর কিছু না। এসবের উত্তর দিলাম, ওনি চলে গেলো।
– ঠিক আছে, তুমি যাও।
ভূমি, তুমি চিন্তা কোরো না! ব্যাপারটা আমি দেখছি। তুমি ভেতরে যাও। বলেই বাইক নিয়ে বের হলো সাগর।
এদিকে, বাড়ীতে গাড়ী পার্ক করে অনেকটা চিৎকার করতে করতেই বাড়ীতে ঢুকলো শরীফ। মা, মা। তোমার অপেক্ষার ইতি। কোথায় তুমি। শরীফের মার বয়স অনেক ৯০ এর কাছাকাছি, কিন্তু এখনো নিজেই চলতে ফিরতে পারেন? দাঁত পড়েনি, তবে কিছুটা দুর্বল বোধ করেন। তাই বেশির ভাগ সময় ঘরেই থাকেন।
– কি রে, কি হলো তোর? এভাবে চিৎকার করছিস কেন? তোরে তো এমন করে চিৎকার করতে একবারই দেখেছিলাম।
– আরে তুমি বস। শুনলে তুমিও চিৎকার করবে।
– বল, শুনি
– আবারও সেই মেয়েকে দেখতে পেয়েছি। একই চোখ, একই নাক, ন্যাচার, মিষ্টতা আর আভিজাত্য। আ হা হা হা হা! অসাধারণ।
– বলিস কি রে? কোথায় পেলি তারে?
– হ্যা মা, সত্যিই তাকে পেয়েছি। হয়তো এই মেয়েটাকে দেখতেই আজ ওই আইসক্রিম পার্লারে গিয়েছিলাম। তুমি তো জানই আজ প্রায় ২২ বছর হলো আমি আইসক্রিম খাই না, কিনিও না।
– হুমম। তা তো জানি..কত কত স্মৃতি। মনে হয় সেদিনের সেইসব কথা, স্মৃতি।
– হুমম। ওসব পুরোনো কথা বাদ দাও। নতুন কথা হলো, মনমতো মেয়ে পেয়ে গেছি। এবার আর আমি কারো কথা শুনবো না। শুধু তুমি হ্যা বলো।
– বোকা ছেলে। আমি তোর মা। তোর সব কাজের সাথেই আছি আমি-অভয় দেন।
এমন সময় শরীফের বউ দরজার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। মায়া। শরীফের স্ত্রী, এখন এটাই বড় পরিচয়। আনুমানিক বয়স ৪৫ বা ৪৮। সুন্দরী। মোটামুটি গড়ন। মা-ছেলের উচ্ছলতা দেখে থমকে দাড়ালো। জানতে চাইলো?
– কাহিনী কি?
– কিছু না মায়া, কিছু না। সময় হলে সব জানানো হবে তোমাকে।
– কি এমন কথা যে, এখন বলছো না, পড়ে বলবা!
– সে তুমি এখন কিছুই বুঝবে না বউ। বললামই তো, সময় আসলে জানাবে।
– যেমন আপনাদের ইচ্ছা। বলেই অন্য ঘরে চলে গেলো মায়া।
সকাল হতে না হতেই শরীফ গাড়ী নিয়ে বের হলো। সোজা চলে গেলো ভূমিদের বাড়ী। গেটে গাড়ী থামিয়ে বলল:
– সাহেব কি বাসায় আছেন?
– জ্বি আছেন।
– একটু বলবেন যে, আমি একটু দেখা করতে চাই। তাকে আমার এই কার্ডটা দেবেন।
– ঠিক আছে, দ্যান। আর এখানে একটু ওয়েট করুন।
– নো প্রব্লেম। আমি আছি।
ভিতর থেকে ফিরে এসে দারোয়ান বলল, আসুন স্যার।
গাড়ী পার্ক করে বাড়ীর ভিতরে গেলো শরীফ। ড্রয়িং রুমেই ছিল ভূমির বাবা সোহান। সোহান, ভূমির বাবা। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা। বয়স ৫৫ এর উপর হবে। বয়স ৫৫ হলেও বুড়িয়ে যাননি মোটেও। তিনি হাত বাড়িয়ে বললেন-
– মিস্টার শরীফ!
– ইয়েস। সরি আপনার সাথে আমার আগে থেকে পরিচয় ছিল না। একটা কাজও ছিল। তাই চলে এলাম আপনার বাসায়। কোনো প্রব্লেম নেই তো?
– ও নো নো। নো প্রবলেম অ্যাট অল। মাইসেলফ সোহান মজুমদার। বিজনেস ম্যান।
– ও, দ্যাটস ভেরি নাইস। আমার নাম তো জানেন ই। শরীফ ইকবাল। আমিও ব্যবসা করি।
– নাইস টু মিট ইউ মিস্টার শরীফ। হাউ কেন আই হেল্প ইউ?
– আগে বসি!
– ও শিওর! সরি আই ফরগেট। এক্সট্রিমলি সরি। প্লিজ সিট ডাউন। চা না কফি?
– উহু শুধু চা বা কফি না, আজ নাস্তাও করবো।
– দ্যাটস গুড। টুনির মা, টেবিলে নাস্তা দাও।
– না, না, তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আমি অনেক সময় নিয়ে এসেছি।
– ও তাই। হাহাহাহা। নো প্রবলেম এ্যাট অল।
– আসলে আমি একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। আপনার সম্ভবত একটা মেয়ে আছে?
– জ্বী, ভূমি।
– ভূমি! বা বেশ নামতো?
– ধন্যবাদ।
– আচ্ছা, এই নাম টা কে রেখেছেন, আপনি না ওর মা?
– ওর মা। কেন?
– না, এমনি। ভূমির মা কোথায়।
– ও তো দেশের বাইরে। একটা ফ্যাশন শো নিয়ে নিউই্য়র্কে। পরশু আসবে।
– ঠিক আছে, পরশু ওনার সাথে কথা বলে নেব। আজ আপনার সাথে কথা বলি।
– আচ্ছা, ভূমি এখন কি করছে?
– নাট্যতত্ত্বে মাস্টার্স করেছে, জাহাঙ্গীরনগর থেকে।
– বাহ! তা এখন মেয়েকে নিয়ে কি ভাবছেন?
– কি আর ভাববো? ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেবো। অবশ্য তার আগে মেয়ের পছন্দ আছে কি না, তাও জানতে হবে!
– ওককে! জেনে নিন। আর আমার এই কথাটা শুনুন। (কানে কানে কিছুক্ষণ কিছু কথা বলল)
হা হা হা হা। (দুজনেই)…..আপনার মেয়ে যেহেতু নাট্যতত্ত্বের ছাত্রী….তাহলে আর আমরা কম যাই কিসে বলেন।
– জ্বি জ্বি! ঠিকই বলেছেন। দেখা যাক কিছু আচ করতে পারে কি না?
– আর দেরি কেন? ডাকুন আপনার মেয়েকে, আরো একবার দেখে নিই।
– ও শিওর! টুনির মা, ভূমিকে নাস্তার টেবিলে ডাক!
– জ্বি, ডাকছি।
ভূমি খাবার টেবিলে আসতে আসতেই বলা শুরু করলো..:
– বাবা, তুমি আমায় ডেকেছো?
– হ্যা। এনাকে চেনো? ইনি হলেন…
– আরেএএএ। এই লোকটা এখানে কেন? তুমি জান বাবা, কালকে ইনি আমাকে ফলো করতে করতে আমাদের বাসা পর্যন্ত এসেছিল।
– হাহাহাহাহা। হুমম এসেছিলাম তো। বললেন শরীফ। কেন এসেছিলাম আজ সেটা তোমার বাবাকে বলতে এসেছি।
– মানে কি?
– মানে হলো, তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। এবার তোমার মা আসলেই কথাটা পাকা করে ফেলবো। তোমার বাবারও পছন্দ হয়েছে প্রস্তাবটা। আর আমাদের বাসায়ও সবাই রাজী। এখন কেবল তোমার হ্যা হলেই হয়! ঠিক আছে মজুমদার সাহেব, আপনারা বাপ-মেয়েতে কথা বলে ঠিক করে রাখেন, আমি পরশু সন্ধ্যায় আসছি আমার মা কে নিয়ে। ওইদিন ই আংটি পড়াবো। নেক্সড উইকে বিয়ে। বলেই বাড়ী থেকে বের হয়ে গেল শরীফ সাহেব।
শরীফ সাহেব বের হতেই ভূমি অগ্নি মুর্তি:
– এসব উনি কী বলছেন বাবা?
– ঠিকই তো আছে। তুই বড় হয়েছিস। পড়াশুনাও শেষ। তাছাড়া, শরীফ সাহেবের প্রস্তাব তো কোটিতে একটা আসে।
– কেন, তোর কি কোনো পছন্দ আছে? থাকলে বল?
– না, কেউ নেই।
– ওকে, ঠিক আছে। তাহলে আর প্রবলেম কি? আমিও তাই ভেবেছিলাম। তোর পছন্দের কেউ থাকলে আমি এতোদিনে জেনে যেতাম। তাই আমিও খুশী মনে রাজী হয়ে গেলাম। তোর মা আসলেই ফাইনাল করবো।
– তারপরও? কিভাবে বাবা? কিভাবে রাজী হলে তুমি। এ প্রস্তাব কি তোমার কাছে স্বাভাবিক লাগছে?
– না। একদম অস্বাভাবিক একটা প্রস্তাব। তাতে কি?
– তাতে কি মানে কি?
– তাতে কি মানে হলো, আমরা, মানে তুই, আমি, তোর মা সবাই অস্বাভাবিক কাজ পছন্দ করি। স্বাভাবিক কাজ করি না। অস্বাভাবিকত্ত্বই আমাদের সবার স্বভাব। দেখ সবাই যেখানে সাইন্স, আর্স, কমার্স পড়ে, তু্ই সেখানে নাটক নিয়ে পড়লি। সবাই যেখানে ঘর-সংসার করে, সাধারণ জব করে সেখানে তোর মা করে ফ্যাশন ডিজাইনিং। আর আমি..আমার কথা তো জানিসই..কি চেয়েছিলাম, কি হলাম। যাক সে কথা। এসব কি অস্বাভাবিক না?
– এসবের সাথে আমার জীবনকে তুমি কিভাবে মেলাচ্ছো বাবা?
– মেলাচ্ছি, কারণ আমি তোর বাবা। তোর ভাল-মন্দ আমার চেয়ে আর কেউ জানে না, চায়ও না।
– ওফফফফ! বাবা…তোমার সাথে কথা বলে লাভ নেই। মা, আসুক! তখন কথা বলব। বলেই নিজ ঘরের যাওয়ার সময়, টেবিলে শরীফ সাহেবের ভিজিটিং কার্ডটা চোখে পড়তেই নিয়ে নিল। কার্ডটা নিয়েই রুমে চলে গেল ভূমি।
– ভূমি, ভূমি। যাবার আগে এটা তো বলে যা….তোর আপত্তি কিসে? হাহাহাহাহা। পাগল মেয়ে!
রুমে গিয়েই সাগরকে ফোন দিল ভূমি। বলল:
– এখনই দেখা করো, কফি শপে, জরুরি।
– কেন, হয়েছেটা কি?
– আসবা কি, আসবা না?
– ওকে বাবা, আসছি।
কফি শপে, দুজনই মুখোমুখি।
– বল, কেন ডেকেছো?
– কি আর হবে, এই নাও। (ভিজিটিং কার্ডটা এগিয়ে দিল)
– আরে, এটা কি? এখানে কেন?
– কেন মানে। এই লোকটাই তো সেই লোক, যে কালকে আমাকে ফলো করছিল। আজ সকালে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। বুড়ো ধাম। আর আমার বাবা টাও যে কি। রাজীও হয়ে গেছে।
-ওয়েট ওয়েট! তুমি মনে হয় কোথাও ভুল করছো।
– ভুল! আমার! মোটেও না। সে নিজেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাসায় সকালে এসেছিল।
– তাই?
– জি হ্যা, এবং এও বলে গেছে, মা পরশু আসলে, সন্ধ্যায় তিনি তার মা কে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবেন। বিয়ে ফাইনাল করবেন এবং আগামী সপ্তাহে বিয়ে।
– ওয়েট ওয়েট! এসব কি বলছো তুমি। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
– বিশ্বাস হচ্ছে না মানে?
– হ্যা, হচ্ছে না। কারণ তুমি যার কথা বলছো, তিনি আমার বাবা?
– তোমার বাবা? বলকি?
– হ্যা, আমার বাবা! আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।
– বলো কি? ইনি তোমার বাবা? তাহলে তোমার-আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়নি তো?
– আরে না, আমার কথা বললে অন্তত একবার জানাতো। কিছুই তো বলে না। সো, ইটস নট দ্য ম্যাটার। অন্য কোনো কাহিনী। ওকে আমাকে একটু সময় দাও। আমি ব্যাপারটা দেখছি।
– তাই করো। বাট যা করার, তাড়াতাড়ি করো।
– চলো তোমাকে বাসায় নামিয়ে দেই।
ভূমিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে, নিজের বাসায় আসলো সাগর। এসেই চিৎকার করে ডাকছে,
– বাবা, বাবা। এখনি বাইরে আসো। মা, তুমিও আসো। দাদু তুমিও।
– এতো চিৎকার করছিস ক্যান?
– করছি কারণ তুমি এমন কাজই করেছো।
– কি করেছি?
– জান না কি করেছো? মা তুমিও কি জাননা?
– বাজে বকিশ না সাগর। এটা তোর বাবা।
– বাবা হয়েছে তো কি হয়েছে। যা খুশি, তাই করতে পারবে?
– আহ! কি করেছে সেটা তো বল? বলল দাদী।
– দাদী তুমি জান, তোমার ছেলে আবার বিয়ে করতে গেছে। মেয়ে পছন্দ করে এসেছে। পরশু নাকি তোমাকে নিয়ে গিয়ে ফাইনাল করে আসবে!
– হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা (একসাথে সবাই)
– আরে….তোমরা সবাই হাসছো? যে বয়সে ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেছো..লজ্জিত না হয়ে হাসছো?
– হ্যা, সাগর। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছি। পরশু ফাইনাল করবো। তাতে তোমার আপত্তি কি সে?
– আমার! আমার আবার আপত্তি কি সে। আমার কোনো আপত্তি নাই। আপত্তি তো করবে মা। হ্যা, না মা?
– না, আমার কোনো আপত্তি নাই।
– নাই? মানে কি? এই বয়সে তোমার স্বামী একটা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলো, তাতে তুমিও সায় দিচ্ছো।
– হ্যা, দিচ্ছি! এতে অন্যায় কি? তাছাড়া, তার খুশিতেই তো আমার খুশি।
– এই কারণে..শুধু এই কারণে বাবা এতোটা সাহস পেয়েছে। কিন্তু দাদী, তুমিও?
– হ্যা, আমিও। আমারও কোনো সমস্যা নাই। তোর বাবা যা ভালো মনে করেন, তাতে কোনো আপত্তি নেই আমারও।
– তোমরা সবাই পাগল হয়ে গেছো।
– আমরা পাগল, না তুই! তোর আপত্তির কারণ তো বুঝলাম না। আমি যে মেয়ের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে গেলাম, তার সাথে তোর সম্পর্ক কি? তুই কি চিনিস ভূমিকে? ভূমি তোর কি হয়? তার সাথে তোর সম্পর্ক কি?
– চিনি মানে, আমার বন্ধুর পরিচিত। তার কাছ থেকে শুনলাম। তাই। এর অন্য কোন অর্থ বের করো না প্লিজ। আর তোমাদের যা খুশি তাই করো…..আমার আর কিছু বলার নাই।
– হাহাহাহাহাহাহাহা (সবাই একসাথে)
– শোন তোকেও যেতে হবে এই অনুষ্ঠানে, বিকেলে রেডি থাকিস। বলল, শরীফ।
– এবার আর দেরি করা যাবে না। মা, তুমি আমার সাথে যাচ্ছ তো? জানতে চাইলো শরীফ।
– হ্যা, অবশ্যই যাবো। বলল, মা।
অন্যদিকে বাসায় ফিরেছে ভূমির মা নাবিলা। ফ্যাশন ডিজাইনিং করে। গায়ের রং কালো, কিন্তু দারুণ টানা চোখ। ভীষণ সুন্দরী। বনলতা সেনের সব গুন নাবিলার মধ্যে। বাসায় ফিরতেই দৌড়ে আসলো ভূমি।
বলল:
– মম! হাউ আর ইউ?
– ফাইন বেটা, এন্ড হোয়াট এ্যাবাউট ইউ?
– নট সো ফাইন, মম?
– হোয়াই নট সো ডিয়ার?
– তুমি জান, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে, তাও এক বুড়োর সাথে। বলেছে তুমি আসলেই ফাইনাল হবে।
– বলিস কি? ঠিক আছে আমি দেখছি। তোর বাবা কই?
– কি জানি ঘরেই বোধহয়!!
এই যে আমি এখানে, বলল সোহান মজুমদার।
– কেমন আছো তুমি?
– ভালো..কিন্তু এসব কি শুনছি..?
– আহ হা..তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসো। ওর কথা বাদ দাও..তোমাকে সব বলছি। আগে ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ রাখো। সন্ধ্যায় উনারা আসবেন। একটু রান্না ঘরের দিকে যাও। দেখো সব ঠিক আছে কি না?
– তা না হয় দেখছি…কিন্তু কাহিনী কি?
– কাহিনী হলো এই…….. বলে আস্তে আস্তে স্ত্রী নাবিলাকে সব খুলে বলল।
সব শুনে স্ত্রী নাবিলা হেসে কুটি কুটি। বলল:
– ভালোই তো পরিকল্পনা তোমাদের। ওকে, যেভাবে চালাচ্ছ, চালাও..আমি আছি তোমার সাথে।
– জানতাম তুমি না করবে না…তাই আজ সন্ধ্যাতেই তাদের আসতে বলেছি।
– ঠিক করেছ…।
বাবা-মায়ের এমন মিল আর খিল খিল হাসি শুনে যা বোঝার তা বুঝে গেছে ভূমি। তাড়াতাড়ি ফোনটা বের করে সাগরকে বলল:
– কিছু করতে পারলে?
– না, বাড়ীর সবাই বাবার প্রস্তাবে রাজী। কাউকেই দ্বিমত দেখলাম না। আমার মাথায় কিছুই আসছে না।
– আমাদের বাসাতেও একই অবস্থা। ভেবেছিলাম….মম আসলে একটা ওয়েআউট হবে। বাট ফেইলড। মাও তো দেখছি হাসি-মুখেই রান্নার তদারকি করছে। আজ তো মনে হয় বিয়ের তারিখও ফাইনাল করবে?
– তাই…তাহলে তো কিছু একটা করতেই হয়! কিন্তু কি যে করি?
– কিছু একটা করো..আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।..এটা তুমি ভালো করেই জানো?
– জানি আমি…..আমিও কি তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো? আইডিয়া?
– কি? তাড়াতাড়ি বল?
– আমাদের সব সাফ সাফ বলে দিতে হবে…তাও আজকেই।
– ভেবে বলছ তো?..
– হ্যা, ভেবেই বলছি। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তুমি রেডি থেকো…আমিও আসছি সন্ধ্যাতেই। আমি না আসা পর্যন্ত তুমি ওরা যা চায়, তাই করো। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।
– ওকে…আমি তাই করবো।
ফোন রেখেই কলিং বেল বাজার আওয়াজ পেলো ভূমি। দেখলো, সাগর এর বাবারা এসেছেন। তার বাবা তাদের সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। ভূমির দরজার দিকে মা এগিয়ে আসছে দেখে ভূমি বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো।
– ভূমি!
– বল!
– রেডি হয়ে বাইরে এসো…বাসায় মেহমান এসেছেন।
– মা, তুমিও?
– শোন, তোর বাবা আমাকে বলেছে সব। আমিও শুনে অন্যায় কিছু তো দেখলাম না। সবই তো ঠিক আছে। কিন্তু তুই আপত্তি করছিস ক্যান? কারণ কি?
– কিছু না..যাও..তোমাদের যা ইচ্ছা..তাই করো। আমার আর কিছু বলার নেই।
– তাহলে তো হলোই। তোরও কিছু বলার নেই..তাহলে আর আমাদের কি বলার আছে। তুই রেডি হয়ে নে। ওরা এসেছে বোধহয়। যাই আমি দেখা করে আসি।
বলেই ভূমির রুম ছেড়ে ড্রয়িং রুমের দিকে এগুলো নাবিলা। এসেই তো চোখ ছানাবড়া! কাকে দেখছে সে?
– নাবিলা তুমি?
– শরীফ?
– তোমরা দুজন দুজনকে চেনো নাকি? জানতে চাইলো সোহান।
– চিনি মানে…….খুব ভালো করেই চিনি। বলল শরীফ। জানালো…ভূমি যে তোমার মেয়ে এটা আমি অনুমান করেছিলাম। কিছুটা তোমারই আদল। বলতে পারো সেজন্যই আর দেরি করি নি।
– কিন্তু চেনেন কিভাবে?..এটা তো বললেন না? বলল সোহান মজুমদার। এবার মুখ খুলল নাবিলা.. বলল:
– শরীফ আর আমি অনার্স পর্যন্ত একসাথে পড়েছি। আমরা অনেক ভালো বন্ধু ছিলাম। আমি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম…আর শরীফ বিয়ে করলো। তারপর তো তোমার সাথেই জীবন জড়িয়ে গেলো….।
– হ্যা, নাবিলা সবসময় নিজের ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিয়েছে..আর আমি চেয়েছি সাজানো একটা সংসার। যে যা চেয়েছি..পেয়েছি।
– ভালোই হলো……পুরনো বন্ধুত্ব এখন আত্মীয়তায় রূপ নেবে..বলেই হেসে উঠল শরীফের স্ত্রী। তা কই আমার মামনি টা কই…ডাকেন তাকে..এক নজর দেখি। শরীফের মুখে এতো প্রসংশা শুনেছি যে…দেখার জন্য উতলা হয়ে আছি।
নাবিলা.ডাকলো..ভূমি….এদিকে আয় তো মা!
ভূমি আসলো..সবার সামনে বসলো….
দেখেই শরীফের মা আর স্ত্রী এগিয়ে গেলো। বলল:
– কি সুন্দর। তুমি তো শরীফ যা বর্ননা করেছে তার চাইতেও সুন্দর ভূমি!
– ধন্যবাদ বলল ভূমি (মনে মনে বলল, এই প্রথম এমন স্ত্রীকে দেখছি যিনি, নিজের হাতে নিজের সতীনকে সুন্দর বলছেন)
– বসো…তোমাকে একটু দেখি..
– জি, আপনিও বসেন প্লিজ (উফফ, এখনও সাগর যে কেনো আসছে না….)
– তোমার পড়াশুনা শেষ?
– জি শেষ (দরজার দিকে তাকাচ্ছে আর মনে মনে বলছে….তাড়াতাড়ি আসো সাগর তাড়াতাড়ি আসো..আমি আর পারছি না)
– তুমি কিছু বললে ভূমি?
– কই কিছু না তো..কিছু তো বলি নি।
– তাহলে এবার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা যাক….আম্মা আপনি শুরু করেন।
শরীফ এগিয়ে দিল একটি গহনার বাক্স। দাদী হাতে নিয়ে ভূমির দিকে এগিয়ে আসছে….পাশে সবাই হাসিমুখে দাড়িয়ে আছেন নাবিলা…সোহান, শরীফ আর মায়া। দাদী মাত্রই ভূমির গলায় মালাটা পড়ানোর জন্য বলছেন:
– জানো ভূমি এই হারটা আমাকে আমার শ্বশুর দিয়েছিলেন..আর বলেছিলেন..
কথাটা আর শেষ করতে পারলো না। ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো সাগর..বলল:
– দাদী..থামো..।
– কেন দাদু?
– কারণ ভূমিকে মালাটা পড়নোর আগে একটা সত্য তোমাদের জানা দরকার?
– সত্য?
– হ্যা সত্য? সত্যটা হলো..আমি আর ভূমি একে অপরকে ভালোবাসি…ভূমিকে ছাড়া আমি বাঁচবো না..
– আমিও সাগরকে ছাড়া বাচবো না..বলে উঠলো..ভূমিও…
দুজনের কথা শুনে সবাই সমস্বরে হেসে উঠল। হাহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা।