সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবী জাস্টিসিয়ার ভাস্কর্য অপসারণের পর ছাত্র-জনতার প্রতিবাদের মুখে দু’দিনের মাথায় তা সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করা অনেক মানুষেরই আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন কানাডাভিত্তিক নিউজ পোর্টাল ‘নতুন দেশ’-এর সম্পাদক শওগাত আলী সাগর।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এমনটা মনে করার কারণও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।
স্ট্যাটাসে শওগাত আলী সাগর বলেন:
‘সুপ্রিম কোর্টের সামনে বসানো নিষ্প্রাণ ভাস্কর্যটা আমাদের বেশ বড় একটা উপকার করে দিয়ে গেছে। বাংলাদেশের ‘প্রগতিশীল’ হিসেবে দাবি করা মানুষগুলোর চেহারাটা একেবারে নগ্ন করে দিয়েছে এই ভাস্কর্য।
মধ্যরাতে যখন আদালত চত্বর থেকে ভাস্কর্যটা তুলে ফেলা হয়, সেদিনই এক পোস্টে বলেছিলাম – সরকার আসলে ‘শক্তি’কে বিবেচনায় নিয়েছে। কত অল্প সময়েই যে সেটি সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়ে গেলো।
আসুন, ভাস্কর্য সরানোর মধ্যরাত থেকে আজ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো একটু পর্যালোচনা করি।
(১) মধ্যরাতেই ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে একদল সোচ্চার হয়ে উঠলেন। এদের মধ্যে একদল কেবল ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদের মধ্যে নিজেদের সীমিত রাখলেন। আরেক দল শেখ হাসিনার মৌলবাদের কাছে আত্মসমর্পণ আবিষ্কার করে ‘দেশ পাকিস্তান’ হয়ে যাচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন।
(২) একই সময়ে একদল ভাস্কর্যটি যে আসলে ‘ভাস্কর্য’ নয়- একটি ‘আবর্জনা’ মাত্র তার প্রচারে জোরেসোরে নেমে গেলেন।
(৩) ওবায়দুল কাদের আর মওদুদ মিলে যখন জানালেন – ভাস্কর্য সরানোর ঘটনায় সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। প্রধান বিচারপতি নিজ উদ্যোগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন – তখন আরেক গ্রুপের আবির্ভাব ঘটলো। তারা এইবার প্রধান বিচারপতি যে ‘শান্তি কমিটির সদস্য’ ছিলেন – সেই তথ্য হাজির করে প্রধান বিচারপতির ‘পিণ্ডি চটকাতে’ লাগলেন।
(৪) পরের দিন ভাস্কর্য যখন নতুন ঠিকানা পেলো – তখন শুরু হলো নতুন বয়ান। মৃনাল হক ছাত্রদল করতেন, তার বাবা বিএনপি করতেন, তিনি নিউইয়র্কে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছিলেন – এই ধরনের তথ্য উপস্থাপন করে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ হাজির করে ফেললেন। এই তত্ত্বটি অবশ্য এখনো আছে।
(৫) বিএনপি জামাতের কর্মীরা গণজাগারণ মঞ্চ সমর্থকদের প্রায়শই ‘চেতনাধারী’, ‘চেতনা ব্যবসায়ী’ বলে টিজ করে। এবার দেখা গেলো মৃনাল হকের ‘পিণ্ডি চটকানো’ গোষ্ঠীটি ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদকারীদের ‘চেতনা ব্যবসায়ী, চেতনাধারী’ বলে টিজ করতে শুরু করলো। চমৎকারভাবে জামাত শিবিরের গালিটি ‘প্রগতিবাদীদের’ মুখে উঠে গেলো।
তা হলে কী দেখা গেলো? প্রগতিবাদী হিসেবে নিজেদের যারা দাবি করেন – ভাস্কর্য নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই কিন্তু কোনো ঐক্য নেই। মৌলবাদী গোষ্ঠীর চাপের মুখে ভাস্কর্য সরানোর ইস্যুতেও কিন্তু ‘প্রগতিবাদী’ সবার টার্গেট মৌলবাদী গোষ্ঠী না।
আর যারা ভাস্কর্য সরানোর দাবি তুলেছিলো – তাদের দিকে তাকান তো! তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র বিভক্তি, ভিন্নমত আছে?
নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করা নানা ভাগে বিভক্ত ‘প্রগতিবাদী’দের দিকে সরকার কী কারণে মনোযোগ দেবে? আপনি হলে কি দিতেন?’