দেশ বরেণ্য চিত্রপরিচালক আমজাদ হোসেনের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। তেজগাঁয়ের ইমপালস হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের প্রধান, সার্জারি বিভাগের প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান, আইসিইউ বিভাগের প্রধানসহ সবমিলিয়ে ৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের তরফ থেকে এমনটা জানান।
নিউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার শহিদুল্লাহ সবুজ আজ (সোমবার) বিকেলে ৪টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, আমজাদ হোসেনকে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপরেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। গতকালের চেয়ে অবস্থার অবনতি হয়েছে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে।
‘আমজাদ হোসেনের ব্রেনে যে স্ট্রোক হয়েছে, সেটা রক্তনালী বন্ধ হওয়ার স্ট্রোক। এর আগে তার হার্টের রিদমে অসুবিধা ছিল। সেখান থেকে স্ট্রোকের উৎপত্তি হয়েছে, ব্রেনের দুপাশেই বড় রক্তনালী বন্ধ হওয়ার স্ট্রোক হয়েছে। এ অবস্থা থেকে বিপদ মুক্ত হওয়ার চান্স খুবই কম।’
গতকাল রবিবার সকালে নিজ বাসভবনে আমজাদ হোসেন ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত রাজধানীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন থেকেই তিনি আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন।
গতকাল দুপুরে নিউরোলজি বিভাগের আরেক চিকিৎসক ডাঃ মহিউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছিলেন, ৭২ ঘন্টা না গেলে কিছুই বলা যাচ্ছে না। ওনার খাদ্যনালী ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা রয়েছে। তার স্ট্রোকটা বড় আকারের। প্রায় ৩০ ঘন্টা পার হলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং খারাপ হয়েছে বলে জানান মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম সদস্য শহিদুল্লাহ সবুজ। তিনি বলেন, এখনো আমজাদ হোসেন অবচেতনে রয়েছেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
হাসপাতালে ছিলেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক, আমজাদ হোসেনের দুই সন্তান সাজ্জাদ হোসেন দোদুল এবং সোহেল আরমান। বড়ছেলে নাট্য নির্মাতা সাজ্জাদ হোসেন দোদুল বলেন, আব্বার কন্ডিশন ভালো না। এ অবস্থায় দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। দেশের বাইরে স্ট্রোকের যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, আন্তর্জাতিকমানের চিকিৎসা এখানেও দেওয়া হচ্ছে। মিরাকল ছাড়া বাবা হয়তো আর ফিরে আসবেন না। সন্তান হিসেবে বাবার জন্য দোয়া চাওয়া আর ছাড়া আর কিছু বলার নেই।
আমজাদ হোসেনের ছোটছেলে নির্মাতা ও অভিনেতা সোহেল আরমান কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, মৃত্যু তাকে নিয়ে যাচ্ছে। আর উনি জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করছেন। আমরা সবাই মিলে বাবাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। মানুষ বাবাকে এতো ভালোবাসে সেটা এর আগে বুঝিনি। বাবার জন্য মানুষের কাছে শুধু দোয়া চাই। মানুষের দোয়াই পারে, তাকে আবার ফিরিয়ে আনতে।
আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় জনপ্রিয়তা পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি।
বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া নানামাত্রিক কাজের জন্য ১৪ বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। একইসাথে বাংলা একাডেমী পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।