দিন শেষে চলচ্চিত্র নির্মাণ একটি ব্যয়বহুল শিল্প, কাজেই কীভাবে বিনিয়োগ তুলে আনা যায়, সেই প্রক্রিয়া আগেই ঠিক করে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন দেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক আবু শাহেদ ইমন।
অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জের ২য় তলায় আয়োজিত দেশীয় নির্মাতাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের ভাবনার মিথস্ক্রিয়ামূলক ‘ওয়েস্ট মিটস ইস্ট’ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালের এশিয়ান ডেলিগেটস মীনাক্ষী সিন্ধে, বুসান ফিল্ম ফেস্টিভালের প্রোগ্রামার সু-লি, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেন, নির্মাতা রেজা গালিব, বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া, নরওয়েসহ বিভিন্ন দেশের উৎসব সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
সম্মেলনের শুরুতে চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কৌশলসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন মীনাক্ষী সিন্ধে। পরবর্তীতে আবু শাহেদ ইমনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সংশ্লিষ্টরা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেন চলচ্চিত্র উৎসব থেকে কীভাবে বিনিয়োগ ফিরে পাওয়া সম্ভব এবং সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ।
তারা বলেন, আন্তর্জাতিক উৎসবগুলো অঞ্চলভেদে আলাদা। যেমন- উইরোপের উৎসবগুলো যে বিষয়ে গুরত্ব দিয়ে থাকে, এশিয়ার উৎসবগুলো হয়তো সেই বিষয়গুলোকে গুরত্ব দেয় না। আবার আমেরিকান উৎসবগুলোর ফোকাস পয়েন্ট আলাদা। সুতরাং ছবি বানানোর আগেই নির্মাতা বা সংশ্লিষ্টদের ঠিক করে নিতে হবে কোথায় ছবিটি দেখাবেন বা কোন উৎসবে যাবে।
একইসঙ্গে উৎসব বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে বলে জানান আবু শাহেদ ইমন। কেননা সব উৎসবের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর যোগাযোগ একরকম নয়। উদাহরণ হিসেবে মীনাক্ষী বলেন, এশিয়া থেকে একমাত্র বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা ছবিগুলো কান চলচ্চিত্র উৎসবের ফোকাসে থাকে।
পরবর্তীতে আলোচনা হয় স্বাধীন চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ ও তা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে। আলোচকরা বলেন, চলচ্চিত্র উৎসবগুলো কেবল প্রদর্শনের জন্য ভালো প্লাটফর্ম। কিন্তু সেখান থেকে তেমন অর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। তবে, উৎসবগুলো গুরত্বপূর্ণ কারণ, এখানে প্রযোজক এবং পরিবেশকদের আনাগোনা থাকে। তাছাড়া, বিভিন্ন ফিল্মবাজারে সরাসরি প্রতিযোগিতার মাধ্যমেও ফান্ড পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে, প্রতিযোগিতার জন্য প্রজেক্ট তৈরির ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট উৎসব ও ফিল্মবাজারগুলো কী ধরনের শর্ত দিয়ে থাকে বা কোন কোন বিভাগে চলচ্চিত্র বাছাই করে থাকে তা সতর্কতার সঙ্গে দেখে সেই অনুযায়ী প্রজেক্ট তৈরি করতে হবে।
এই প্রতিযোগিতা খুবই কঠিন উল্লেখ করে আলোচকরা বলেন, নির্মাতাকে প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি হতে হবে এবং অবশ্যই ভালো ও যৌক্তিক গল্প বলতে হবে যা যে কোনো প্রতিযোগিতার শর্ত পূরণ করতে পারে এবং বৈশ্বিক বাজারে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারে।
রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’-স্লোগান নিয়ে ১১ জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে চলছে অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-২০২০’র। ৯ দিনব্যাপী এই বৃহৎ উৎসবে বাংলাদেশসহ ৭৪টি দেশের মোট ২২০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এই উৎসব চলবে আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।