আগের তুলনায় ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে ছবি নির্মাণ কমে এসেছে। আশি নব্বই দশকেও যেখানে বছরে প্রায় শ’ তিনেক ছবি মুক্তি পেত সেখানে গত কয়েক বছর এই সংখ্যা অর্ধশতকে এসে ঠেকেছে। বিগত কয়েক বছরে এই চিত্র আরও ভয়াবহ! বছর প্রতি গড়ে ৫০ থেকে ৬০টি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। যেটা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম।
চলতি বছর ছবি নির্মাণ আরও কম হচ্ছে। এমনটা কেন হচ্ছে সেটা জানালেন ঢালিউডের শীর্ষনায়ক শাকিব খান। তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নায়ক বলেন, চলচ্চিত্রে এখন ভীতিকর অবস্থা চলছে। আমার ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে এমন ভীতিকর অবস্থা কখনও দেখিনি।
শাকিব খান বলেন, একজন প্রযোজককে ভালো সিনেমা বানাতে আসতে হলে অনেককিছু ফেইস (মোকাবেলা) করে আসতে হয়। এখন মনে হয়, বিপদের আরেক নাম চলচ্চিত্র। একজন প্রযোজক ভালো সিনেমা বানাবেন, মনে হয় তিনি বিপদে পড়তে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, একটা ভালো সিনেমা বানাবো, ভালো কাজ করতে যাবো দেখা যাবে কালকেই আমি বিপদে পড়বো। এতে রাতের ঘুম হারাম হবে। আমার কাছে টেলিফোন আসবে- ভাই, শুটিং স্টপ (বন্ধ) করে দেওয়া হয়েছে, উমুক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে দিয়ে। এত কষ্ট করে যখন ছবিটা বানানো হবে তখন সেন্সরে গেলে আবার বিপদ! সেখানে পদে পদে ধরা হবে।
আরও বলেন, একশো টেলিফোন যাবে ছবিটাকে আটকানোর জন্য। সব বাঁধা পেরিয়ে ছবিটা যখন দর্শকদের কাছে যায় তখন দর্শকরা দেখে শান্তি পায়। প্রাউড ফিল করে। এটা আমার দেশের নায়কের ছবি।
গত একযুগের বেশি সময় ধরে ঢাকাই চলচ্চিত্র শাসন করছেন শাকিব খান। এরমধ্যে অনেকে নায়ক হয়ে এসেছেন, আবার ঝরেও গেছেন! কিন্তু শাকিব খান আছেন বহাল তবিয়তে! কঠোর পরিশ্রম আর শত বাঁধা ডিঙিয়ে শাকিব খান উপহার দিয়েছেন একের পর সুপার ডুপার হিট ছবি। পেয়েছেন অসীম জনপ্রিয়তা।
প্রযোজক ও পরিচালকদের আস্থার নির্ভরযোগ্য প্রতীক হয়েছেন শাকিব খান। শুধু বাংলাদেশ নয়, শিকারি, নবাব, চালবাজ, ভাইজান এলো রে-এর মতো ছবিতে কাজ করে শাকিব খান পশ্চিমবঙ্গে এখন তুমুল জনপ্রিয়। ওপার বাংলার নামি নির্মাতা ও প্রযোজকরা বাংলাদেশের শাকিব খানকে নিয়ে বাজি ধরেও পাচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।
ঢালিউডের এই সুপারস্টার বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দৈনতার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ভালো ছবি বানালে একশো রকম ট্র্যাপ করা হবে, একশো আইনের মারপ্যাঁচে ফেলা হবে ভালো ছবিটাকে আটকানোর জন্য। এভাবে ভালো ছবিগুলোকে পদে পদে আটকানো হচ্ছে। দর্শকদের কাছে ভালো ছবিটা পৌঁছে দিতে একজন প্রযোজককে যে কতো কষ্ট করতে হচ্ছে সেটা যিনি ছবিতে বিনিয়োগ করছেন তিনিই ভালো জানেন। সুতরাং, এই যে দুরাবস্থা, মারপ্যাঁচ ও আইনি জটিলতার মধ্যেও যারা ছবি বানাচ্ছেন তাদেরকে সেলুট জানাই।
এদিকে শাকিবের ক্যারিয়ার যখন একাদশে বৃহস্পতি, ঠিক তখনই তিনি নিলেন নতুন সিদ্ধান্ত। বললেন, আমি প্রমিজ করছি। বহুদিন ধরে একটি বিষয় আমিও চাচ্ছিলাম। আমার ‘শিকারি’, ‘নবাব’, ‘চালবাজ’ ছবিগুলোতে আমার পরিবর্তন দেখেছেন দর্শক। আমার ফ্যানরাও উদগ্রীব হয়ে থাকেন আমাকে নতুন নতুন রুপে দেখতে। তারা ইন্টারন্যাশনাল সুপারস্টারদের লুকের মতো তাদের হিরোকেও দেখতে চান।
তারা চান শাকিব খান সেই লেবেলের লুক নিয়ে তাদের মাঝে হাজির হোক। আমার ফ্যান ফলোয়ারদের কাছে আমি কথা দিচ্ছি, তারা যেমনটি দেখতে চান আগামীতে ঠিক তেমনভাবেই নতুন এক শাকিব খান হয়ে উপস্থিত হবো, ইনশাল্লাহ। শিগগিরই আমি নতুন এক শাকিবকে হাজির করবো। যাকে দেখে আমার ভক্তরা সত্যিই গর্বিত হবেন। আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর নতুন শাকিবের জন্ম হবে। অতীতের সব গ্লানি মুছে ফেলবো।
ছবি: সাকিব উল ইসলাম