পোষ মানানো যেকোনো প্রাণীকে কাছে নেওয়া মানুষের আদি স্বভাব। প্রাচীনকালে মানুষ এদের প্রথমে নিজের শক্তির ধারণা দিতে এটা করতেন। এরপর শুরু হয় কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার। দিনেদিনে এটি এখন নেহাত শখের বিষয়েই পরিণত হয়েছে। বিড়াল, কুকুর ছাড়াও খাঁচায় থাকা কবুতর, খরগোশ, নানা রকমের পাখিতো রয়েছেই। দেশের সবচেয়ে বড় পোষা প্রাণী ও পাখির বাজার রাজধানীর কাঁটাবনে গেলেই দেখা মিলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পোষা প্রাণীর সংগ্রহ করতে ছুঁটে আসা মানুষদের।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গঠনে পোষা প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে, যেসব পরিবারে পোষাপ্রাণী আছে ওইসব পরিবারের শিশুদের জীবনযাত্রায়ও পোষা প্রাণীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ সময় ধরে যত্ন নেওয়ার মতো কোনো পোষা প্রাণী থাকলে জীবনের দুঃসময়েও ভালোবাসার অনুভূতি দেয়। এমনকি জীবনের কিছু কাঠামো তৈরিতেও ভূমিকা পালন করে। ছোট বয়স থেকে কোনো পোষা প্রাণীকে সময়মতো খাওয়ানো, গোসল করানো, বেড়াতে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো নিজ থেকে করলে নিজের প্রতি নিজের দায়িত্ব বাড়ে দ্বিগুণ।
বর্তমানে এই বিষয়টিও খুব চোখে পড়ার মতো। গবেষণা এও বলা হয়, যাদের পোষা প্রাণী আছে তাদের বিষন্নতা আক্রান্তের হার কম। এই বিষয়টি করোনার সময় সবচেয়ে বেশি মানুষ উপলদ্ধি করেছে। এসময় মানুষ খুব বেশি একা ছিলো ঠিক সেসময় বেশিরভাগ ঘর মাতিয়ে রাখতো এসব পোষা প্রাণী। শহুরে জীবনে কর্মব্যবস্তার এইসময়ে এসেও প্রায় প্রতিটি বাসায় বিড়াল বা কুকুর রয়েছে। কেউ দেশী বা বিদেশী বিড়াল বা কুকুরকে যত্ন নিয়ে বড় করছেন।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা মাহাদি ইসলাম বলেন, আমার একটি পোষা বিড়াল রয়েছে। এই বিড়ালটি আমার মামীর কাছ থেকে নিয়েছি। ও প্রায় একবছর ধরে আমার কাছে রয়েছে। অফিস থেকে ফেরার পর সারাক্ষণই ওকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি।
বনশ্রীর বাসিন্দা সোনিয়া বলেন, আমার পোষা কুকুরটি সম্প্রতি মারা গেছে। নিজের সন্তানের মতই ছিলো। সারা দিনের কাজ শেষে বাসায় ফিরলে কুকুরটা লেজ নেড়ে আমার সঙ্গে নানা কথা বলত। ওকে হারিয়ে এখন আমার খুব কষ্ট হয়।
নবম শ্রেনী পড়া সেজুতি বলেন, মা-বাবা একেবারেই প্রাণী পছন্দ করেন না কিন্তু আমার খুব পছন্দ প্রাণী পছন্দ। তাদের সঙ্গে একরকম যুদ্ধ করেই আমি একটি বিড়াল পোষী। ওকে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে ওর যাবতীয় সবকাজ পড়াশোনার পাশাপাশি আমিই করি।
অন্যদিকে নাফিসা ইসলাম বলেন, বিদেশী বিড়াল হওয়ার কারণে তার খাওয়া ও চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার বেশি খরচ করতে হয়। এছাড়া পোষা কুকুরের মালিক শাওন আহমেদ বলেন, প্রতি মাসে তার খরচ হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার মতো।
ঘরে পোষা প্রাণী রাখা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশে পোষা প্রাণীর খাবার ও এর আনুষঙ্গিক পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রেতারা বলছেন, করোনা মহামারিতে লকডাউনের সময় পোষা প্রাণীর খাবার, আনুষঙ্গিক পণ্য ও ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। ২০১৯ সালে প্রতি মাসে পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পোষা প্রাণীর খাবার ও লালন-পালন করার বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়। এর বাজার প্রতি বছর ২০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে।