মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া ৪০ হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে প্রত্যাবাসন করার সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা চ্যালেঞ্জের শুনানি সোমবার থেকে সুপ্রিমকোর্টে শুরু হয়েছে। মিয়ানামার থেকে পালিয়ে আসা রাখাইন রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গারা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে সুপিমকোর্টকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একথা জানান দেশটির সিনিয়র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখেশ মিত্তাল।
ভারতের সিনিয়র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখেশ মিত্তাল সুপ্রিমকোর্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ভারতের স্বার্থে সরকারকে রোহিঙ্গা বিষয়ে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে দিন। রোহিঙ্গারা ইসলামিক চরমপন্থী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি। রোহিঙ্গারা জুম্মু, দিল্লি, হায়দ্রাবাদে ইসলামিক উগ্রবাদি দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন বলে লিখিত এক বক্তব্যে সুপ্রিমকোর্টকে জানান এই মন্ত্রী। এমনকি তাদেরকে নিরাপত্তার জন্যে সম্ভাব্য মারাত্নক হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হামলায় দেশটি থেকে পালিয়ে এসে দিল্লীতে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া দুই রোহিঙ্গা শরণার্থীর পক্ষে এই রিট পিটিশনটি দায়ের করা হয়। গত মাসে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছিলেন, সরকার সব রোহিঙ্গাকে এমনকি জাতিসংঘের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও বিতাড়িত করা হবে।সংবাদ মাধ্যমের সূত্র থেকে জানা যায়, সরকার সন্ত্রাসীদের সহায়ক হিসেবে রোহিঙ্গাদের দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছে।
রোহিঙ্গারা ইসলামী উগ্রবাদীদের সাথে যোগসূত্র অস্বীকার করে আসছে। রোহিঙ্গাদের পক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ভারতের সংবিধানে নাগরিক ও অনাগরিক, সকলের জন্য সমান অধিকার ও স্বাধীনতা কথা বলা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নেতা মুহাম্মদ সুলিমুল্লা বলেন, নয়া দিল্লি সব সময় রোহিঙ্গার পাশে ছিলো, আমি আশা করি সুপ্রিম কোর্ট রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে। আমরা ছয় বছর এখানে রয়েছি। আমরা কখনো নিজেদেরকে বিদেশি মনে করি না, কোন ধরনের ভয়ও পাইনা।
জাতিসংঘ বলছে, ভারতে ১৬ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে। কিন্তু এরচেয়েও অনেক বেশি অনিবন্ধিত রয়েছে। ভারতের হিমালয়ের জম্মু অঞ্চলে প্রায় ৭ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে।
গত ২৫ আগস্টে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেই দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করলে চার লাখ দশ হাজারের বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর হামলায় ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ভারত রোহিঙ্গাদের কোথায় প্রত্যাবাসন করতে পারনে বলে প্রশ্ন তুলেন। এদিকে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেন, ভারত সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে আন্তর্জাতিক আইননুসারে কোন শরণার্থীরদের তাদের জীবন যেখানে বিপন্ন সেখানে প্রত্যাবাসন করা ঠিক হবেনা।
আগামী মাসে পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।