চট্টগ্রাম থেকে: জামাল ভূঁইয়ার দারুণ ফ্রি-কিক থেকে সাদ উদ্দিনের গোলে কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। খেলা শেষের দুই মিনিট আগে গোল শোধ দিয়ে ম্যাচ ড্র করে ফেলে স্বাগতিকরা। জয় না পেলেও দেশের মানুষের মন জয় করেছিলেন জামাল-সাদরা। কিন্তু ম্যাচের অন্যতম নায়ক কী নিজেদের খেলা নিয়ে সন্তুষ্ট?
বাংলাদেশ অধিনায়ক জামালের উত্তরটা হচ্ছে, ‘না।’ চলতি শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে চট্টগ্রাম আবাহনীকে নেতৃত্ব দেয়া মিডফিল্ডার বলছেন, জয়টা হতে পারত ঐতিহাসিক এক ব্যাপার। হয়তো বাংলাদেশ ফুটবলের গতিধারাও পাল্টে যেতে পারত সেই ম্যাচের মাধ্যমে। খুব কাছে গিয়েও জিততে না পারাটার কষ্ট তাকে পুড়িয়েছে, কেড়েছে রাতের ঘুম।
‘অনেক খারাপ লেগেছে। ম্যাচের পর রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। শেষ দুই মিনিটে ওরা আমাদের গোল দিয়ে দিল। আমরা জয়ের পথেই ছিলাম। যদি ম্যাচটা জিততে পারতাম, ঐতিহাসিক একটা ব্যাপারই হতে পারত।’
ভারত ম্যাচের পর এখন বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ওমানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের খেলা। সেজন্য ২৩ নভেম্বর ঢাকা ছাড়বেন জামালরা।
কলকাতা থেকে ফেরার পর খুব একটা বিশ্রাম পাননি ফুটবলাররা। এসেই নেমে পড়েছেন শেখ কামাল কাপে খেলতে। ঢাকা আবাহনী নাম প্রত্যাহার করে নেয়ায় সাদ উদ্দিন, নাবীব নেওয়াজ জীবন খেলছেন না টুর্নামেন্টে। বাকিরা সবাই আছেন দুই দল বসুন্ধরা কিংস ও চট্টগ্রাম আবাহনীতে। জামালের জাতীয় দল সতীর্থ আরিফুল ইসলাম চট্টগ্রামের হয়েই খেলছেন। ইয়াসিন খান, বিপলু আহমেদদের মতো জাতীয় দলের আট ফুটবলার খেলছেন বসুন্ধরার হয়ে। তাদেরই আবার খুব দ্রুত নেমে পড়তে হবে ওমান ম্যাচের অনুশীলনে।
এভাবে ক্রমান্বয়ে খেলার মধ্যে থাকতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন না তো ফুটবলাররা? জামালের মতে, খেলার মধ্যে থাকায় ওমান ম্যাচের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতই থাকবেন সতীর্থরা।
‘ওমান ম্যাচের জন্য এটা একটা ভালো প্রস্তুতি হতে যাচ্ছে। জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়রাই বসুন্ধরা ও চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলছে। এটা জাতীয় দলের জন্যই ভালো। যদি খেলোয়াড়রা নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকে, অনুশীলনের মধ্যে না থাকে, তাহলে খেলার মতো ফিটনেস তাদের থাকবে না। আমার মতে ওমান ম্যাচের জন্য এটা একটা ভালো প্রস্তুতি।’
২০১৩ সালে তৎকালীন কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের অধীনে ডেনমার্ক থেকে উড়ে এসে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন জামাল। প্রবাসী হয়েও বাংলাদেশের ফুটবলের ট্রেডমার্ক হয়ে ওঠা কতটা সহজ ছিল লাল-সবুজদের অধিনায়কের জন্য?
‘আমি যখন বাংলাদেশে আসি তখন অনেক কষ্ট লেগেছে। পরিবেশ পাল্টে গেছে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। সবমিলিয়ে একবছর লেগেছে খাপ খাইয়ে নিতে। বাংলাদেশে শুরুটা খুব কঠিন ছিল। তারপর আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি। এখন আর কোনো সমস্যা হয় না।’
সমস্যা যে হয় না সেটা মাঠেই প্রমাণ করেছেন জামাল। হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের সত্যিকারের দলনেতা। দেশের পেশাদার ফুটবলে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলারটির নাম এখন জামাল। ২৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার যেখানেই যাচ্ছেন, সেলফির জন্য ঘিরে ধরছে ফুটবলপ্রেমীরা। তাকে মোটামুটি সবারই জানা বলেই হয়ত খ্যাতি পৌঁছে গেছে চূড়ায়।
জামালের মতো হতে কী করতে হবে বাকি সতীর্থদের? যেখানে যেকোনো ক্রিকেটারই কোথাও গেলে ধুম পড়ে যায় চারিদিকে, ‘আমাদের ভালো খেলতে হবে। ভালো ফল ধরে রাখতে হবে। তাহলে সমর্থকরা আমাদের আরও সমর্থন দেয়া শুরু করবে। খেলা দেখায় আগ্রহ পাবে।’
‘বড় ম্যাচগুলো জিততে হবে। টুর্নামেন্ট জয়ের অভ্যাস গড়তে হবে। তাহলেই না জনপ্রিয়তা পাওয়া যাবে। সাকিব-তামিমরা এভাবেই সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। ওরা জিতেছে, ভালো খেলেছে। তারপর না ওদের মানুষজন চিনতে শিখেছে। এভাবেই ওরা এখন মহাতারকা।’ বলে চলেন জামাল। যাতে মিশে থাকে বাংলাদেশের ফুটবলকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয়।