২৯বার আক্রমণ করেও নিজ মাঠে ৫২ ধাপ পেছনে থাকা ভারতকে হারাতে পারেনি ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক কাতার। ঠিকই পয়েন্ট (ম্যাচ ড্র) ছিনিয়ে নিয়ে ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়েছে ভারত। প্রতিবেশী দেশের এমন ফুটবল থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছে বাংলাদেশ। নিজ মাটিতে এশিয়ান সেরা কাতারকে রুখে দিয়ে চমকে দিতে চায় লাল-সবুজের দল!
২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের গ্রুপ ‘ই’তে র্যাঙ্কিংয়ে ৬২ নম্বর স্থানে থাকা কাতারকে বৃহস্পতিবার আতিথ্য দিচ্ছে ১২৫ ধাপ পেছানো বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়।
শুধু র্যাঙ্কিংই নয়; শক্তি, পারফরম্যান্সে এশিয়ান পর্যায়ে বর্তমান সেরা দলটির নাম কাতার। এশিয়ার বর্তমান চ্যাম্পিয়নও। ২০২২ বিশ্বকাপে স্বাগতিক হওয়ায় সরাসরি খেলার সুযোগ থাকছে ঠিকই, তবে দলটির জন্য গ্রুপের বাকী চার দলের মতো এই বাছাইপর্বও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বাছাইপর্ব দিয়েই ২০২৩ চায়না এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পাবে দলগুলো।
কাতার কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বাংলাদেশকে আমলে নিয়েছে সেটা টের পাওয়া যায় তাদের বিশাল লটবহর দেখেই। মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় পা রাখা দলটির সঙ্গে খেলোয়াড়, কোচ, ফিজিও ছাড়াও আছেন পুষ্টিবিদ, চিকিৎসক। আছেন দুজন রাঁধুনিও!
বাংলাদেশ ম্যাচটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার কারণও আছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রথম খেলায় হেসেখেলে ৬-০ গোলে জয় পেলেও সবশেষে ম্যাচে ভারত তাদের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। নিজেদের মাঠে ধরিয়ে দিয়েছে মাত্র ১ পয়েন্ট। আহত বাঘের মতো এখন জয় পেতে রীতিমতো ফুঁসছে বিশ্বকাপের স্বাগতিকরা।
কাতার যে তেতে আছে সেটা অজানা নয় বাংলাদেশ কোচ জেমি ডের। ‘জয় চাই, যে করেই হোক!’ প্রতিপক্ষ কোচের এমন কথা শুনেও খুব একটা অবাক নন। তাই বলে ছাড় দিতেও রাজী নন খুব একটা,‘যদি আমি কাতারের হয়ে খেলতাম তাহলে বাংলাদেশের বিপক্ষে অবশ্যই জয়ের আশা করতাম। তবে ম্যাচে যেকোনো কিছুই হতে পারে। আমরা ভালো কিছু আশা করতেই পারি।’
ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখার যোগ্য অধিকার অবশ্য আছে লাল-সবুজ কোচের। প্রায় দুই বছরের নির্বাসন থেকে ফেরা একটা দল সব অস্বস্তি কাটিয়ে জেগে উঠেছে তার হাত ধরেই। এশিয়ান গেমসে কখনোই প্রথম রাউন্ড পেরোতে না পারা বাংলাদেশ গত বছর গড়েছে ইতিহাস। এই কাতারের অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে টিকিট পায় দ্বিতীয় রাউন্ডের। সে দলের কাণ্ডারি জেমি ডে জাতীয় দলকে এখনো দেখাচ্ছেন পথ।
ব্রিটিশ এই কোচ তার শিষ্যদের সেই ম্যাচের অনুপ্রেরণা দিয়ে বিলোচ্ছেন আরেকবার কাতার বধের মন্ত্রণা। আবার একই সঙ্গে মানছেন বাস্তবতাও। কারণ সেই কাতার এই কাতারের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। এশিয়ান গেমসের দলটা ছিল যুব আর এই দলটি জাতীয় যারা চলতি বছরই ব্রাজিলে গিয়ে খেলে এসেছে কোপা আমেরিকা। কাঁপিয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনার মতো জায়ান্টদেরও।
বড় দল বলে ভয়ে পিছিয়ে যেতে রাজী নন জেমি। জানেন বৃহস্পতিবার কঠিন এক লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে তার শিষ্যদের। কিন্তু ম্যাচের আগেই হার মানতে নারাজ ব্রিটিশ ভদ্রলোক, ‘আমাদের এই দলটাতে সেই ম্যাচের কয়েকজন খেলোয়াড় আছে। সেই ম্যাচের ফলটা আমাদের তাই অনুপ্রেরণা দেয়। আমাদের দিনে আমরাও যেকোনো দলকে হারাতে পারি। যদিও অনূর্ধ্ব-২৩ আর জাতীয় দল সম্পূর্ণ আলাদা। কাতারের এই দলটাতে বিশ্বমানের কয়েকজন ফুটবলার আছে। তবে সেই ম্যাচটা আমাদের শক্তি, সাহস যোগাচ্ছে। আমরা সামনেই তাকাচ্ছি।’
কাতারের বিপক্ষে বাংলাদেশকে নির্ভার রাখতে পারেন ডিফেন্ডাররা। হয়তো বেশিটা সময় ব্যয় হতে পারে রক্ষণ সামলাতে। তাই নিজেদের রক্ষণদুর্গ যতটা সম্ভব আগলে রেখে যতটুকু পারা যায় নিজেদের সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে চায় লাল-সবুজের খেলোয়াড়রা। তবে এই অবস্থায় স্বাগতিকদের জন্য খানিকটা দুঃসংবাদ, চোটে পড়েছেন ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা। তাই ২৩ জনের চূড়ান্ত দলে রাখা হয়নি তাকে। আবার এই দলে আছে আরেক ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশার নামও। মাত্রই চোট সেরে উঠেছেন তিনি। তবে মূল একাদশে থাকবেন কিনা সেটা ঠিক হবে ম্যাচের আগে।
নিজের সীমিত সামর্থ্য দিয়েই আক্রমণাত্মক খেলা উপহার দিতে চান কোচ জেমি ডে। বাড়তি শক্তি হতে পারেন রায়হান হাসান। বুধবার ২৫ বছর বয়সে পা দেয়া এই ডিফেন্ডারের ক্ষমতা আছে লম্বা থ্রো ছোঁড়ার। তার এক থ্রোতে হেড করে ভুটানের বিপক্ষে গোল করেছিলেন আরেক ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান। কাতারের বিপক্ষে রায়হানের এই থ্রোই হয়তো খুলে দিতে পারে মহামূল্যবান একটি গোলের দুয়ার।
‘প্রত্যেক দলেই এমন দুই-একজন ফুটবলার থাকে যারা লম্বা থ্রো করতে পারেন। এদের এসব থ্রোতে ম্যাচ জেতাও সম্ভব। কাতারের বিপক্ষে আক্রমণের জন্য আমাদের ভালো সুযোগ হতে পারে এটি। আমরা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে চাইবো। যদি বক্সে আমরা বল আদান-প্রদান করতে পারি তাহলে রায়হানের থ্রো আমাদের ভালো উপকারই করবে।’
এশিয়ান গেমসে যে ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ তার প্রধান নায়ক ছিলেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তার একমাত্র গোলেই লাল-সবুজরা গড়েছিল ইতিহাস। সুযোগ পেলে আবারও ম্যাচ জেতাতে প্রস্তুত অধিনায়ক, ‘সুযোগ পেলে আমি আবারও গোল করতে চাইবো। তবে আগামীকালের ম্যাচটা আমাদের জন্য সত্যিই কঠিন এক ম্যাচ হবে। কারণ কাতারের এই দলটা খুবই শক্তিশালী। আমরা যদি সুযোগ কাজে না লাগাতে পারি তাহলে ওরাই আমাদের শাস্তি দেবে।’
অধিনায়কের জন্য অনুপ্রেরণার নাম ভারত। সেই ম্যাচ থেকে শিক্ষা আর নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে কোচের মতো কাতার বধ কঠিন কিছু নয় বলে মনে করেন তিনিও, ‘সবাই যদি নিজের ১০০ ভাগ চেষ্টাটা দেয়, নিজের সেরাটা খেলাটা খেলে তাহলে কেন নয়? কাতার ভারতের বিপক্ষে ২৯বার লক্ষ্যে শট নিয়েছে। কিন্তু ভারত ঠিকই ম্যাচ ড্র করেছে। এটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার। আমরাও ম্যাচ ড্র করতে পারি, জিততেও পারি। ভারত পারলে আমরা কেন পারবো না? আমাদের শুধু নিজেদের শতভাগটা দিতে হবে।’
‘কাতার আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। আমরা ওদের ওষুধই ওদের ফিরিয়ে দিতে চাই। দেখা যাক এরপর কী হয়!’