আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছিল ভারতের বিপক্ষে। আবির্ভাবেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের দলটিকে। মাঝে চোট-ফর্মের টানাপড়েন, দেখেছেন নানা চড়াই-উতরাই। কাটার মাস্টার আবারও সেই ভারতকে সামনে পেয়ে জ্বলে উঠলেন। ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেমির দৌড়ে থাকার লক্ষ্যটা টেনে রাখলেন সামর্থ্যের মধ্যেই।
এজবাস্টনে শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেটে ৩১৪ রান তুলেছে কোহলির ভারত। রোহিত-রাহুলের ১৮০ রানের ওপেনিং জুটিতে এক সময় মনে হচ্ছিল লক্ষ্যটা নাগালের অনেক বাইরে চলে যাবে। ফিজ সেটা হতে দেননি। ভয়ঙ্কর হতে থাকা কোহলি, আর ভয়ঙ্কর হতে পারেন পান্ডিয়াকে এক ওভারে সাজঘরের পথ দেখিয়ে শুরুটা করেছিলেন। পরে থেমেছেন ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো পাঁচ উইকেট নিয়ে। বিশ্বকাপে সাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এই কীর্তিতে নাম লেখালেন।
১০ ওভারে এক মেডেনে ৫৯ রানে ৫ উইকেট ফিজের নামের পাশে। ক্যারিয়ারের আগের তিনটির দুটি পাঁচ তার ভারতের বিপক্ষে। ২০১৫ সালে পরপর দুম্যাচে ৫০ রানে ৫, এবং ৪৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ে ছিলেন অগ্রণী। ওই বছরের শেষদিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিয়েছিলেন আরেকবার, ৩৪ রানে পাঁচ উইকেট। ৫৩ ওয়ানডেতে এসে পেলের চতুর্থবার।
২০১৫-এর সেই মোস্তাফিজ এখন অনেক পরিণত। দায়িত্বও বেড়ে গেছে অনেক। কখনও প্রত্যাশার চাপটা নিতে পারেননি, কখনও পেরেছেন। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত নামের পাশে ১৫ উইকেট। তবু যেন কেমন অচেনা-অচেনা এক আবহ তাকে ঘিরে! শুরুর ৩০ ওভারে উইকেট নিতে পারেননি একদিনও। থেকেছেন খরুচেও। প্রিয় প্রতিপক্ষ পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন আপন মহিমায়।
ভারত তখন জমে গেছে রানের গতিতে। রোহিত-রাহুল ফিরলেও চাপটা তখনও ছিল শুরুর মতোই। চিন্তার কারণ ছিল ভারতের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ। তখন উইকেটে আবার খুঁটি গেড়ে বসে গেছেন বিরাট কোহলি। দুশ্চিন্তার সময়ে ৩৯তম ওভারে মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফী। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান ফিজ দেন জোড়া উইকেট মেডেনের ম্যাজিক্যাল ওভারে।
মোস্তাফিজের করা ওভারটির প্রথম বলে কোনো রান নিতে পারেননি কোহলি। দ্বিতীয় বলটি খানিকটা শর্ট হওয়ায় মিডউইকেট দিয়ে উড়িয়ে ফেলতে চান ভারত অধিনায়ক। তাতেই যান আটকে। প্রায় মাথার উপর উড়তে থাকা বলটাকে থামিয়ে দেন রুবেল। ২৬ রানে কাঁটা পড়ে যান কোহলি।
কোহলি ফেরার পর উইকেটে মারকুটে অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার আগমন। এসে মোস্তাফিজের প্রথম বলটা দেখেশুনে খেলেন। মনে হয়েছিল ব্যাটে সমস্যা। ব্যাটটা তাই পরিবর্তন করেন। করেই পড়েন বিপদে!
নতুন ব্যাটসম্যান আসায় অফ-কাটারের ফাঁদ পেতেছিলেন মোস্তাফিজ। তাতে পা দিয়ে বসেন পান্ডিয়া। নতুন ব্যাটে স্লিপে দিয়ে বসেন ক্যাচ। ওঁতপেতে থাকা সৌম্য ভুল করেননি প্রথম স্লিপে। নিচু হয়ে যাওয়া ক্যাচ লুফে নিয়ে শূন্যরানে সাজঘরের পথ দেখান অলরাউন্ডার পান্ডিয়াকে।
রানে ভরা ম্যাচে এই একটিই মেডেন দেখেছে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ। সেটাও মোস্তাফিজের কল্যাণে। ৩৯তম ওভারে দুই উইকেটের সঙ্গে মেডেন নিয়েছেন ফিজ। ওভারের শেষ দুই বলে যে আর রানই নিতে পারেননি মহেন্দ্র সিং ধোনি।
পরে ৩৫ রান করা ধোনিকে সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে শেষদিকে আরেকবার ভারতের রানে লাগাম দেন ফিজ। ঝড় তোলার আগেই ফেরান ৮ করা দিনেশ কার্তিককে। শেষে পাঁচের কোটা পূরণ করেন মোহাম্মদ সামিকে বোল্ড করে। তার আগে ভুবনেশ্বর কুমারকে রান আউট করেছেন মুশফিকের থ্রোতে বল পেয়ে।