আইসিসিতে ভারতের কোনও কথা ফেলে দেয়া হবে; আর ভারত সেটা গিলে ফেলবে। এই যুগের ক্রিকেটে এটা কল্পলোকের গল্প হতে পারে! লভ্যাংশ কাঠামোর প্রস্তাব মুখ থুবড়ে পড়ায় ধারণা করা হচ্ছিল, ভারত ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিবে। সপ্তাখানেক আগে পরিস্থিতি তেমন থাকলেও দেশটির ক্রিকেট বোর্ড গত কয়েকদিনে অনেকটা নতজানু হয়ে আসে। রোববার তারা জানিয়েছে, ৮ মে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা করা হবে। হঠাৎ ভারতের এমন সিদ্ধান্তের রহস্য কী?
রহস্য খোঁজার যাত্রায় আপাতত ‘চাপ’ ছাড়া কোনও উত্তর মিলছে না। সেই চাপটা আবার এসেছে নিজেদের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিযুক্ত একটি কমিটি থেকে। যার নাম প্রশাসক প্যানেল (সিওএ)।
রোববার ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে বিশেষ সভা ছিল সিওএ’র। সভা শেষে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রাজীব শুক্লা বলেন, ‘দল পাঠানোর ব্যাপারে কোনও বিতর্ক হয়নি।’
অথচ আইসিসিরও ওই সিদ্ধান্তের পর ভারত নিজেরাই চারদিকে হৈ-চৈ ফেলে দেয়। দল না পাঠিয়ে প্রতিবাদ করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। আগের কাঠামোতে যেখানে ৫৭০ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা ছিল বিসিসিআইয়ের, প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাওয়ায় ২৯৩ মিলিয়ন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে বোর্ডটিকে।
সিওএ অনেক ভেবেচিন্তে দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেননা এক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি না খেললে আইসিসিতে ৮ বছরের জন্য কোনও টুর্নামেন্ট খেলা হতো না তাদের। খেলতে হলে আদালত পর্যন্ত যেতে হতো।
সিওএ’র বক্তব্য, ‘আমরা আইসিসিতে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করবো। আর্থিক বিষয়ে আলোচনা চলবে। কিন্তু সেটা কোনও টুর্নামেন্ট বয়কট করে নয়।’
‘কার্যনির্বাহী সচিব অমিতাভ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আইসিসির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে। আমরা বিরোধিতা এড়িয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবো।’ সাংবাদিকদের বলেন রাজীব শুক্লা।
শুক্লার এই কথা থেকে বোঝা যায় আর্থিক বিষয়ে আইসিসির সিদ্ধান্ত এখনও মেনে নেয়নি ভারত। তার মানে আপাতত নতজানু হচ্ছে তারা?
এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে নির্দিষ্ট সময়ের পর। তার আগে অবধারিতভাবে কিছু শঙ্কার কথা সামনে চলে আসছে। ভারত যদি আইসিসির সঙ্গে সত্যি সত্যি পাঞ্জা লড়ে যায়, তাহলে তারা কী করার ক্ষমতা রাখে?
করার তালিকায় অনেক কিছুই আছে। আইসিসির বরাদ্দের বাইরে বেশির ভাগ বোর্ডের আয়ের একটা বড় উৎস ভারতের বিপক্ষে সিরিজ। এই এক সিরিজ থেকেই অন্য দশ সিরিজের চেয়ে বেশি টাকা আসে। এটা একটা বড় ব্যাপার। তাদের আছে আরও অনেক হাতিয়ার। তাদের দেশে বেশ কয়েটি নামী স্পোর্টস চ্যানেল রয়েছে। রয়েছে স্পন্সরের বিশাল একটা মার্কেট। রয়েছে আইপিএলের মতো আসর। যেখানে খেলে বেশিরভাগ ক্রিকেটার বছরের আয়রোজগার বাড়িয়ে নেন।
ভারত আঙুল বাঁকা করলে নিজেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ঠিক তেমনি বিশ্বক্রিকেটও। তবে কোন কৌশলে তারা আঙুল বাঁকা করে, সেটাই দেখার বিষয়। আপাতত একটি কৌশল থেকে সরে এসেছে তারা। এখন অপেক্ষা পরের পদক্ষেপের!