ভারতে বেশিরভাগ পরিবারই নিজেদের ধর্ম ও জাত বা বর্ণের মধ্যেই বিয়ে সম্পর্ক গড়তে পছন্দ করেন। নিজের ধর্ম, জাত বা বর্ণের বাইরে গিয়ে বিয়ে করার পরিণাম অনেক সময় ভয়ংকর বা সহিংস হয়ে ওঠারও উদাহরণ রয়েছে। এমনকি কথিত ‘সম্মান রক্ষার্থে হত্যা বা অনার কিলিং’- এর শিকার হওয়ারও ঘটনা রয়েছে অনেক।
কিন্তু এরপরেও কিছু তরুণ ভারতীয় সমাজ, পরিবার, ধর্ম বা বর্ণের বাধা ডিঙ্গিয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র ভালোবাসার টানে।
ভারতের তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার মিরালগুড়া টাউনে প্রায় এক বছর আগে এমনই লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। উচ্চ বংশের মেয়ের বিয়ের কারণে এমন পরিণতি হয়েছে বলে জানায় সবাই। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় অন্য জাতে বিয়ের শাস্তির কারণে স্ত্রী’র সামনে বাবার ভাড়া করা সন্ত্রাস দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে প্রণয় কুমারকে।
তবে এই ঘটনার পর থেকে তোলাঙ্গানা জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। মিরালগুড়া শহরে বনধেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনাটি ধরা পড়েছে সিসিটিভি ফুটেজে।
তাতে দেখা যাচ্ছে বছর ২১ বছর বয়সী স্ত্রী আমরুথা ভারসিনিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন প্রনয় কুমার। ঠিক সে সময় পেছন থেকে ছুরি নিয়ে প্রনয়ের উপর হামলা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারান ভারসিনি।
ভারসিনি জানান, এই হামলার পেছনে তার বাবার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কারণ এই বিয়েতে তার বাবা এবং পরিবার রাজি ছিলেন না।
কিন্তু সে তার গর্ভের সন্তানকে ঠিকই সুস্থভাবে জন্ম দিয়েছেন, কিন্তু হিন্দু প্রথার জাত এবং উচ্চ বংশের কারণে তার স্বামীকে মেরে ফেলা হলো।
এ ঘটনায় মেয়ের বাবা মারুতি রাও এবং চাচ সারভাননকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনও বিচার হয়নি।
ভারতের সমাজ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হলেও জাত-প্রথা নিয়ে আছে অনেক গোঁড়ামি। বর্ণের প্রভাবে হিন্দু সংস্কার এবং জন্মের সময় উচ্চা বংশের সাথে নিন্ম বংশের থাকে বিস্তর ফারাক।
২০১৭ সালের হিন্দু বিয়ের একটা গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫.৪ শতাংশ হিন্দু নারী পুরুষ ভিন্ন ভিন্ন জাত প্রথা হয়েও ভালোবাসার টানে বিয়ে করছে।
২০১৯ সালের জুনের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, ভারতের গুজরাট,তামিলনাড়ু,মধ্য প্রদেশ এবং অন্ধ প্রদেশে সামাজিক প্রথা এবং জাত না মেনে যে ছেলে মেয়েরা বিয়ে করছেন তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়ছে।
সম্প্রতি এক রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে অন্য জাতের ছেলেকে বিয়ে করে বাবার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রাণের ভয়ে এমন একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
মূলত প্রতিহিংসামূলক কর্মকান্ডের জন্য পরিবার, ছেলে এবং মেয়েকে হত্যা করার চেষ্টা করে। পরিবারের কাছে বিয়ের চেয়ে জাত -ধর্ম- বর্ণ তখন মূখ্য হয়ে যায়।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসেবে, ২০১৬ সালেই অন্তত ৭৭টি হত্যাকাণ্ড রিপোর্ট হয়েছে যেগুলোকে ‘অনার কিলিং’ বলা হচ্ছে।
ভারতে ১৮৭২ সালের আইন অনুযায়ী ভিন্ন ধর্মের এমন বিয়ের আইনগত বৈধতা নেই।