ইসলাম ধর্মের রেওয়াজ অনুযায়ী স্ত্রীর সঙ্গে তাৎক্ষণাত বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য পুরুষরা তিন তালাক দিতে পারেন। বহুল বিতর্কিত এই তিন তালাকের এই বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতের উচ্চ আদালতে করা এক আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। ইসলাম ধর্মের এই বিধানটি ‘মৌলবাদী’ কি না তা খতিয়ে দেখতে এই শুনানি এমনটি জানিয়েছেন আদালত।
এই আপিলের দাবির অন্যতম একজন সায়েরা বানু। বয়স ৩৫। যিনি তার স্বামীর সাথে দীর্ঘদিন সংসার করে দুই সন্তানের জননী হয়েছেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে অসুস্থ হয়ে বাপের বাড়িতে গেলে তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেন। পরে অনেক চেষ্টা করেও তিনি স্বামীর সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। এরপর থেকে তিনি স্বামীর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পান। এরপর বাধ্য হয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ আদালতে এই তিন তালাকের বিরুদ্ধে আপিল করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, স্বামী তাকে ‘অস্থাবর সম্পত্তির’ মতো করে ব্যবহার করেছেন।
বিশ্বের মুষ্ঠিমেয় যেসব দেশে পুরুষরা এক কথায় স্ত্রীকে ডিভোর্স বা তালাক দিতে পারেন ভারত সেসব দেশের মধ্যে অন্যতম। এ জন্য একজন পুরুষকে শুধু তালাক শব্দটি তিনবার উচ্চারণ করলেই হয়। মানবাধিকার কর্মীরা এই প্রথাকে ‘বৈষম্যমূলক আচরণ’ বলে অভিহিত করেছেন। পুরুষরা তাদের ইচ্ছে মতো এই প্রথাকে ব্যবহার করেছে। অমানবিক এবং অনৈতিকভাবে নারীদেরকে তালাক দিয়ে ক্ষতির সম্মুখিন করা হচ্ছে।
দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক গোষ্ঠী এই শুনানির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তথাপি এই ধরনের উদ্যোগের পিছনে বর্তমানের নরেন্দ্র মোদির সরকারের সমর্থন রয়েছে।
এই মামলায় যুক্তি তর্ক উপস্থাপনের জন্য বিরোধীপক্ষের সবাই তিন দিনের সময় পেয়েছেন। আগামী ১৯ তারিখের মধ্যে এই শুনানি শেষ হবে বলেও জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহেই শুনানির চূড়ান্ত রায় পাওয়া যাবে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, তিন তালাকের এই বিধান সংবিধান পরিপন্থি, লিঙ্গ বৈষম্য এবং নারীর মর্যাদার জন্য অবমাননাকর।
ইসলামিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটা আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত আইনের ব্যাপার। এ নিয়ে আদালতের মাথা ব্যথার কারণ নেই। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের মুসলিম নারীরা এই বিতর্কিত এই নিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন। দাবি করেছেন যেন এই ধরনের নিয়ম সংশোধন করা হয়।
এ বিষয়ে ইসলামিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরআনে তালাক নিয়ে স্পষ্টভাবে বিস্তর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।সেখানে তিনমাসের সময়ের কথা বলা হয়েছে যার মধ্যে দম্পতিরা তাদের সমস্যা সমাধান বা ভুল বোঝাবুঝির অবসানের জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়ে থাকেন। সম্প্রতি ভারতে মুসলিম নারীরা খুব বেশি তিন তালাক প্রথার শিকার হচ্ছেন। এমনকি চিঠি, টেলিফোন বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে এই তালাক দেয়া হচ্ছে বলেও একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও তালাক দেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।