ভাইরাল শব্দটি সামাজিক মাধ্যমে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কোনো একটি সংবাদ, আলোচনা, কোনো ঘটনা, ইস্যু বা স্রেফ একটি ছবিও ভাইরাল হতে পারে। কোনো একজন ইউজার তার টাইমলাইনে শেয়ার করার সঙ্গে সঙ্গে তা মুহূর্তের মধ্যে বিনা তারের তরঙ্গে অন্তর্জালের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ বা ভাষার মতো কোনো প্রতিবন্ধকতায় আটকায় না। যেন আনবিক বিস্ফোরণের মতো ছড়িয়ে পড়ে, মানুষকে আক্রান্ত করে। বিষয়টি ইতিবাচক হোক বা নেতিবাচক হোক, মানুষের দৃষ্টি বা মন কাড়লেই তা ভাইরাল।
সামাজিক মাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রবণতাই হচ্ছে, এই জগতের মানুষ কোনো একটা বিষয় বা ইস্যু নিয়ে মেতে থাকবে। এই যে একটা বিষয়ে সারা বিশ্বের লাখ লাখ বা কোটি কোটি মানুষ মেতে থাকছে সেটার আয়ু কত বছর, কত মাস বা দিন? উহু! নাড়িয়ে দেয়া বিষয়টি মানুষকে দীর্ঘ সময় আটকে রাখতে পারছে না। মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আলোড়ন তোলা ঘটনা, বিষয় বা মানুষ।
গভীর রাতে ঢাকার বুকে পুলিশ সদস্যকে চ্যালেঞ্জ করা তরুণীর কথা মনে পড়ে? তিনি এখন কোথায়?
গুজব কিন্তু বাতাসের আগে ভাইরাল হয়। মনে পড়ে কোটা আন্দোলনের সময় গভীর রাতে ছড়ানো হয়েছিল শিক্ষার্থীর মারা যাওয়ার মতো চরম উস্কানিমূলক ভাইরাল গুজবের কথা।
এমন গুজব যেমন কোনো আলোচনা বা আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আবার গুজবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী বা ব্যক্তির জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে।
কিন্তু অন্তর্জালে যারা একটা বিষয় দেখামাত্র শেয়ার করতে থাকেন এবং অন্যদের ছড়িয়ে দিতে উৎসাহিত করেন তারা কি বিষয়টি বিবেচনায় রাখেন? বিভিন্ন গবেষণা বা বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন, অধিকাংশ মানুষই বেশীরভাগ সময় এ বিষয়ে অসচেতন। সামাজিক মাধ্যমে অভ্যস্তদের সচেতনতার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
তাই বলে সব ভাইরালই কি নেতিবাচক? না। সামাজিক মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মানুষের জাজমেন্টাল প্রবণতা থাকলেও এখানেই আমরা প্রশাসন, কর্তৃপক্ষের বা ব্যক্তির জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বাধ্য হতে দেখেছি।
উইলস লিটল স্কুলের শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের পর পালিয়ে যাওয়া টেইলর কর্মীকে দ্রুত ধরা সম্ভব হয়েছিলো সামাজিক মাধ্যমে তার ছবি ছড়িয়ে যাওয়ার কারণেই। সর্বশেষ স্কুটি চালক শাহনাজের হারানো স্কুটি উদ্ধারে পুলিশের জোর তৎপরতাও দেখা গিয়েছিলো সংবাদটি ভাইরাল হওয়ার কারণে সেটা স্বীকার করতেই হবে।
স্কুটি উদ্ধারের পর সামাজিক মাধ্যমেই মানুষ পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়েছে। যদিও এটা নিয়ে বিতর্ক ছিলো, পুলিশকে ধন্যবাদ দিতে হবে কেন? পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করেছে। এই বিতর্ক প্রমাণ করে, সমাজে যার যা দায়িত্ব সেটা পালনের চর্চা বহাল নেই।
যাক সেসব কথা। এই আলাপের সূচনা আজকের একটি ভাইরাল ছবি দেখে। ছবিটি কে তুলেছেন বা প্রথমে কে শেয়ার করেছেন তা জানা যায়নি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকটি শিশু সেলফি তুলছে। অপেক্ষাকৃত বড় শিশুটির হাতে ক্যামেরা, তার পেছনে কয়েকটি শিশু ছবি তোলার জন্য পোজ দিয়েছে। কিন্তু ক্যামেরাটি প্রকৃত ক্যামেরা নয়, পুরাতন এক পাটি স্যান্ডেল। তাদের চেহারা, পোশাক দেখে অনুমান করা যায়, ইন্টারনেট বা অন্তর্জালে তাদের একসেস নেই। তাদের বা তাদের পরিবারের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার অনেক নীচে। কিন্তু ভাইরালপ্রবণ এই জগত ওই শিশুদেরও ছুঁয়ে গেছে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)