চট্টগ্রাম থেকে: ‘আমার মনে হয় কিউরেটর ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করছেন। উইকেট নিয়ে আসলে খুব বেশি কথা বলার নেই। দুই দলের সমান সুযোগ থাকবে। আমার কাছে দেখে মনে হচ্ছে উইকেটে বল ঘুরতে পারে।’ চট্টগ্রামের উইকেট পড়তে ভুল করেননি সাকিব আল হাসান। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জিতে আগে ব্যাটিং বেছে নিতেও।
ম্যাচ শুরুর আগেরদিন বাংলাদেশের অধিনায়ক যে পূর্বানুমান করেছিলেন সেটি মিলে গেছে খাপে খাপ। ম্যাচের প্রথম দিন ১৬৭ বল খেলে ১২০ রানের ইনিংস খেলা মমিনুল হকের কথাতে মিলল তার সত্যায়ণ।
‘অন্য উইকেটের তুলনায় এটি একটু মন্থর, টার্ন আছে। আগে যখন খেলেছিলাম তখন অনেক ফ্ল্যাট ছিল, তেমন স্পিন হতো না। এখানে বল ঘুরে, নিচেও নামে।’
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটের চরিত্র বোঝা বরাবরই দুঃসাধ্য। যে কারণে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা পেয়েছে মিরপুরের উইকেট। চট্টগ্রামের উইকেট কিছুটা অনুমেয় হলেও ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। প্রথাগত উইকেট যে এটি নয়; সেটি দিনের শুরুতেই বুঝে গেছেন মুমিনুল।
সকাল থেকেই স্পিনে মিলেছে টার্ন। পেস বোলাররা বাড়তি বাউন্স, মুভমেন্ট পেতে শুরু করেন দুপুরের পর। বল পড়ার পর উইকেটের মাটি থেকে উড়েছে ধুলো। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ২২ গজ যে বোলারদের জন্য স্বর্গভূমি সেটি না বললেও চলছে। এ মাঠে ৬টি সেঞ্চুরি হাঁকানো মুমিনুল তাই পূর্বানুমান করতে পারছেন না ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৫ রান তোলা বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস কতদূর যেতে পারে।
‘নির্ধারিত কোনো লক্ষ্য নেই, কত রান করতে চাই। তাইজুল ও নাঈম খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। ওরা যতক্ষণ খেলতে পারে ততক্ষণ, সত্যি কথা বলতে, এই উইকেটের ওপর আমার তেমন বিশ্বাস নেই। কাল-পরশু কী হবে জানি না, দেখা যাক।’
২৫৯ রানে ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তিনশ পার করে নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলামের ব্যাটে ভর করে। নবম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে তারা যোগ করেন ৫৬ রান। অফস্পিনার হিসেবে অভিষিক্ত নাঈম ২৪ রান করে জানান দেন ব্যাটিং সত্ত্বার।
দু’বার রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যাওয়া তাইজুল ৩২ রান করে থাকেন অপরাজিত। পড়ন্ত বিকেলে দুই স্পিনার মিলে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে চা-বিরতির পর ১৩ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসা বাংলাদেশের ইনিংস মেরামত করেছেন দারুণভাবে।
লেজের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে আসা রানেই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে বলে মনে করেন মুমিনুল, ‘আমার কাছে মনে হয় টেলএন্ডাররা যেই রান করেছে, সেটা অনেক বেশি ভাইটাল। হয়তো এই রানের কারণেই আমরা ম্যাচ জিততে পারি।’
নাঈম-তাইজুল হাল ধরতে না পারলে দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই গুটিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। মুমিনুল সেঞ্চুরি পাওয়ার পরও স্বাগতিকদের ৮ উইকেট হারানোই বলে দিচ্ছে ব্যাটসম্যানদের জন্য কতটা কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে সামনের দিনগুলোতে।
বাংলাদেশ চার বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজানোয় ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট। হোম অ্যাডভানটেজ নিতেই হোক কিংবা ভিন্ন কিছুর চিন্তাতেই হোক উইকেটের গতি-প্রকৃতিই যে নির্ধারণ করে দেবে ম্যাচের ফল, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।