চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘ব্লাইন্ড স্পট’ শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনবোধের গল্প

নাগরিক কবিয়াল আলভী আহমেদ রচিত ‘ব্লাইন্ড স্পট’ বইটাতে গল্প আছে এগারোটা। প্রত্যেকটা গল্প বিষয়বস্তু বিবেচনায় একটার থেকে অন্যটা আলাদা। তবে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় গল্পগুলোর বেশিরভাগই শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনবোধের গল্প। মাটিবর্তী গল্পটা তার ব্যাতিক্রম।

গল্পগুলোর মূল উপজীব্য আসলে মানব-মানবীর প্রেম। তবে সেগুলো স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। লেখক এতো যত্ন নিয়ে ছোট গল্পের পরিসরে চরিত্রগুলো গড়েছেন যে পাঠক মুগ্ধ হয়ে গল্পগুলো শেষ করবেন।

আর একটা বিষয় লক্ষণীয় সেটা হলো চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। প্রত্যেকটা ঘটনাকে চরিত্রগুলো যেভাবে বিশ্লেষণ করে, যেভাবে এগিয়ে গেছে সেটা নিঃসন্দেহে মানব জীবন সম্পর্কে লেখকের দূর দৃষ্টির স্বাক্ষর।

এখানে আরও একটা বিষয় উল্লেখ্য লেখক ইচ্ছে করেই তার লেখায় পরাবাস্তবতার সমাবেশ ঘটিয়েছেন। অদৃশ্য মানব গল্পটা আসলে কি বাস্তবতার গল্প না পরাবাস্তবতার গল্প। অথবা বইয়ের শেষ গল্প, ‘যেভাবে গল্প হয়’। এই গল্প দুটো শেষ করার পর পাঠকের মাথায় এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাবে।

শহুরে কর্পোরেট জীবনের বাস্তব প্রতিফলন আছে ‘কমেডি অব এররস’ গল্পটাতে। ‘আ ওয়াক ইন দ্য স্ট্রিট’ আপনাকে দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিবে। লেখক আসলে কোন গল্পটা বললেন? এভাবে সবগুলো গল্প নিয়েই বলা যায়।

এইবার আসি যে গল্পটার নামে বইটার নামকরণ, ‘ব্লাইন্ড স্পট’। আচ্ছা ব্লাইন্ড স্পট মানে কি কানাগলি? যে রাস্তা একটা জায়গায় যেয়ে শেষ হয়ে যায় সেটাকেই আমরা কানাগলি বলি। আসলে আমাদের জীবনটাও কি একটা কানাগলি।

এই গল্পটাতে লেখকের কিছু দুর্দান্ত বিশ্লেষণ আছে মানব জীবন নিয়ে। আয়ের অনুপাতে চল্লিশ বছর আমাদের ঠিক মাঝের একটা সময়। এই সময়ের পর জীবনের মোর ঘুরে যায়। এই বয়সের পর জীবনটা কি আসলে কানাগলি বা ‘ব্লাইন্ড স্পট’ এ রূপান্তরিত হয়।

এই গল্পের শেষ দুটো লাইন তুলে দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না- ‘চল্লিশের পর সব মৌসুমই বর্ষাকাল। ভিজতে ইচ্ছে করবে। ভিজলেই সর্দিজ্বর।’ মজার ব্যাপার হচ্ছে এই গল্পটা শুরুও হয়েছে বইয়ের ৪০তম পৃষ্ঠা থেকে।

এক কথায় এই বইয়ের গল্পগুলোতে নাগরিক জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এতো বেশি জীবন্ত হয়ে উঠেছে বলে এহেনও উপাধি। নগরের প্রাত্যহিক জীবন, টানাপোড়েন আর অতি অবশ্যই প্রেম মূর্ত হয়ে উঠেছে।