সারা বছরই জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে আলোচনা ছিল দেশজুড়ে। এছাড়াও বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা ৯২ দিন অবরোধে জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
জামায়াতের ডাকা হরতাল আর ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন বছর। ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে সারাদেশে চলতে থাকে সহিংসতা। বাস, ট্রাকে পেট্রোল বোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর চলে প্রতিদিন।
দেশব্যাপী হাসপাতালগুলো ভরে যায় পেট্রেল বোমায় পোড়া মানুষে। প্রথম ৯২ দিনেই মারা যান ৩৩ জন, আহত হন কয়েকশ’। নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণায়।
এরইমধ্যে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা প্রাঙ্গনে জঙ্গিদের চাপাতির কোপে নিহত হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত রায়। আহত হয় স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। এর একমাস পর ৩০ মার্চ দক্ষিণ বেগুনবাড়িতে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে চাপাতির আঘাতে নিহত হন আরেক ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান বাবু।
১২ মে সকালে বাড়ি থেকে অফিসে যাওয়ার পথে সিলেটের বনকলাপাড়ায় একই কায়দায় খুন হয় ব্লগার অনন্ত দাস। ৭ আগস্ট পূর্ব গোরানের বাড়িতে ভেতরেই খুন করা হয় ব্লগার নিলাদ্রী চট্রোপাধ্যায়কে।
এরপর ৩১ অক্টোবর দুপুরে লালমাটিয়া নিজ অফিসে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদ রশীদ টুটুল, তার দুই বন্ধু কবি রনদীপম বসু ও ওয়াসিকুল হক। একই দিন সন্ধ্যায় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ অফিসে খুন হন জাগ্রতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন।
২৮ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার। এর মাত্র ৫দিন পরই রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আলুটারী গ্রামে গুলিতে নিহত হন জাপানী নাগরিক হোসি কোনিও। ৫ অক্টোবর রাতে মধ্য বাড্ডার বাড়িতে জঙ্গিদের হাতে নিহত হন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ খিজির খান।
২২ অক্টোবর গাবতলী চেকপোস্টে জঙ্গিদের ছুরিকাঘাতে মারা যান দারুস সালাম থানার এএসআই ইব্রাহিম মিয়া। ৪ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ায় শিল্প পুলিশের উপর জঙ্গীদের অতর্কিত হামলায় নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল মুকুল। ২১ এপ্রিল আশুলিয়া কাঠগড়া বাজারে কমার্স ব্যাংকের শাখায় জঙ্গীরা ব্যাংক লুট করতে গিয়ে হত্যা করে শাখা ব্যবস্থাপক, দারোয়ন, গ্রামবাসীসহ ৬ জনকে।
১৪ অক্টোবর রাতে লালবাগের হোসনী দালানে আশুরার অনুষ্ঠানে জঙ্গিদের বোমা হামলায় মারা যায় এক কিশোর। ২৫ নভেম্বর বগুড়ার শিবগঞ্জের হরিপুরে শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে গুলিতে নিহত হয় মসজিদের মুয়াজ্জেম।
সর্বশেষ হামলা চালানো হয় দিনাজপুরের কান্তজিও মন্দির আর কাহারোলের রাশ মেলায়। এর কিছুদিন আগে হত্যাচেষ্টা চালানো হয় এক ইটালিয়ান নাগরিকের উপর।
এছাড়াও দেশজুরে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজন ফাদার ও ব্রাদারকে।
পুলিশ প্রশাসন আর র্যাবের পুরো বছরটিই গেছে জঙ্গি দমনের কাজে। মন্ত্রীও তা স্বীকার করেছেন, তবে দুষেছেন রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতাকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল জিহাদ, আল কায়দা বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সময় আত্মপ্রকাশ করার চেষ্টা করেছিল। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশে একটি অরাজকতা সৃষ্টির প্রয়াস নিয়েছিল। এইগুলো সব অপতৎপরতা এবং ২০ দলীয় জোটের নীল নকশার মাধ্যমে এইগুলো পরিচালিত হয়েছে।
নতুন বছরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল রাখতে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।