করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের সামাজিক বিস্তার এবং লকডাউনের প্রতিকূল অবস্থায় কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ব্র্যাকের উদ্যোগ ‘ডাকছে আবার দেশ’।
এই উদ্যোগে ব্র্যাককর্মীরা তাদের একদিনের বেতন প্রদান করেছেন এবং কর্মীদের বেতনের সমপরিমাণ টাকা ব্র্যাক নিজস্ব তহবিল থেকে দিচ্ছে। এর পরিমাণ সাড়ে সাত কোটি টাকা। এই টাকা ৫০ হাজার পরিবারের জরুরি খাদ্য কেনার জন্য বিতরণ করা হবে। প্রতি পরিবার দুই সপ্তাহের খাবার ও জরুরি সামগ্রী কেনার জন্য ১৫০০ টাকা করে পাবেন।
আজ বুধবার, এই উদ্যোগের ঘোষণা দেয়া হয়। আগামী ১৮ই জুলাই থেকে এই টাকা বিতরণ শুরু হবে। করোনার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও লকডাউনের আওতায় থাকা ১৯টি জেলা এই উদ্যোগে প্রাধান্য পাবে। ব্র্যাকের দক্ষ মাঠকর্মীদের মাধ্যমে সুচারুরূপে যাচাই করে প্রকৃত দুঃস্থ পরিবারগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী কিংবা স্তন্যদানকারী মা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ, নারী উপার্জনকারীর ওপর নির্ভরশীল পরিবার, অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং অন্য কোনো উৎস থেকে সহায়তা বঞ্চিত ব্যক্তি ও পরিবার।
গত বছর থেকে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাকের মতো অনেক বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানও এ সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ব্র্যাক প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এটা একেবারেই অপ্রতুল। আরো অনেক পরিবারকে জরুরি সহায়তা দিতে হবে। জাতীয়ভাবে এ দুর্যোগের বিরুদ্ধে জয়ী হতে হলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে ‘ডাকছে আবার দেশ’ একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে এবং গণতহবিল সংগ্রহে এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে অবদান রাখায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবে। বিস্তারিত: https://www.brac.net/dakcheabardesh/
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “করোনা প্রতিরোধের যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী। সবার সদিচ্ছা আর অংশীদারত্ব ছাড়া এটা জয় করা সম্ভব নয়। সম্পদের অপ্রতুলতা থাকলেও আমরা আমাদের যা কিছু আছে, তা নিয়েই সামাজিক দুর্গ গড়ে তোলার যুদ্ধে নেমেছি। এক লাখের বেশি মাঠকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে ব্র্যাক মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধি, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, মাস্ক সরবরাহ এবং মানুষের প্রয়োজনে জরুরি আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আমরা এই যুদ্ধে প্রতিনিয়ত সরকার ও দেশের মানুষের পাশে আছি।”
তিনি আরো বলেন: “সরকারি-বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে এগিয়ে এসে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। আমি সামর্থ্য থাকা সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করব ‘ডাকছে আবার দেশ’ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে।”
গতবছর থেকেই ব্র্যাকের এই উদ্যোগের সঙ্গে আছে গ্রামীণফোন। এবছরও তারা এই সঙ্কটে এগিয়ে আসার অঙ্গীকার করেছেন।
এই উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা সংগঠন ‘সহায়’। সহায়-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী বাংলাদেশি চিকিৎসক তাসনিম জারা। তিনি ব্রিটিশ সরকারের ‘ভ্যাক্সিন লুমিনারি’ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত, ইংল্যান্ডে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতে (এনএইচএস) কর্মরত।
ডা. তাসনিম জারা বলেন, “যে দিন আনে দিন খায়, সে বাসায় নিজেকে আটকে রাখছে শুধু নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে নয়, সকলের সুরক্ষার জন্য। তার এই ত্যাগটা শুধু নিজের জন্য নয়, সকলের জন্য। তাদের আর্থিক কষ্ট লাঘব করাও তাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।” তিনি নিজস্ব উদ্যোগে ব্র্যাকের মাধ্যমে ৬৫টিরও বেশি পরিবারকে সহযোগিতা করবেন ও গণতহবিল সংগ্রহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাবেন ।
আরো ব্যক্তি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইতিবাচক ভূমিকা রেখে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন এই আশা করছে ব্র্যাক। ব্যক্তিপর্যায়ে ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সহায়তার মাধ্যমে এ উদ্যোগে যুক্ত হওয়া যাবে:
- ব্যাংক হিসাব নাম: ব্র্যাক
- হিসাব নম্বর: ১৫০১২০-২৩১৬৪৭৪০০১
- ব্যাংকের নাম: ব্র্যাক ব্যাংক
- গুলশান ১, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা
- বিকাশ নম্বর: ০১৭৩০৩২১৭৬৫
উল্লেখ্য, গত বছর এপ্রিল মাসেও ব্র্যাককর্মীরা দুর্গত মানুষদের খাদ্যসহায়তার জন্য একদিনের বেতন দিয়েছিলেন। তখন ব্র্যাক, গ্রামীণফোন ও অন্যান্য অংশীদার যৌথভাবে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার পরিবারকে সহযোগিতা করেছিল। তখনও প্রতি পরিবারকে দুই সপ্তাহের খাবার কেনার জন্য ১৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল।