খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন শর্ত পূরণ না হলে বিএনপির পক্ষ থেকে বহু আগে থেকেই ৫ জানুয়ারির মতো আবারও নির্বাচনে না আসার হুমকি রয়েছে। তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড জানিয়েছেন, লন্ডনে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। নির্বাচন বয়কট করলে বিএনপিকে নিবন্ধনজনিত জটিলতায় পড়তে হবে বলেও তাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। ঢাকা সফরে এসে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির জন্য তাদের পরামর্শের কথা জানিয়েছেন।
দেশের উন্নতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার স্বার্থে আমরা সবসময় অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। দেশের প্রায় সকল মানুষ এবং আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও এমনটা চায় বলে আমরা মনে করি। তবে নির্বাচনে কোনো কারণে হেরে গেলে ওই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ করাও যে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য মুহূর্তের বিষয়, সেটা আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি। এ কারণে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিভিন্ন দলের মাধ্যমে নানা ধরনের অরাজকতাও হয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এবং পরে যেসব ভয়াবহ অরাজকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়েছে, তা ভাবলে এখনও অনেকেই আঁতকে উঠেন। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন যেখানে উৎসবের বিষয়, সেখানে আমাদের এখানে হচ্ছে তার ঠিক উল্টো। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলো সম্পূর্ণরূপে দায়ী। সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমে এই অচলায়তন থেকে বের হয়ে আসবে বলে আমরা আশা করি।
তবে রাজনীতিকদের কর্মকাণ্ডে তেমন কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। এরপরও নিজেদের শুধরে নেওয়ার সুযোগ এখনও শেষ হয়ে যায়নি বলে আমরা মনে করি। শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন: সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দেখে বিএনপি সিদ্ধান্ত নেবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে কিনা। দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপিকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার জন্য হলেও এসব নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়া দরকার।
একইসঙ্গে বিএনপিকেও আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ‘শর্ত না মানলে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা’ দিয়ে কখনও কিছু হয় না। শক্তির অভাবেই হোক অথবা অন্য যে কারণেই হোক, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকে বিএনপি যেভাবে ‘শান্তিপূর্ণ’ প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নিচ্ছে, ঠিক একইভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে বলে আমরা আশা করি। রাজনৈতিক দল হিসেবে সাধারণ মানুষও তাদের কাছ থেকে এমনটাই আশা করে।
ব্রিটিশ বক্তব্যের মর্ম বুঝে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে হলেও বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকারের ভূমিকা অস্বীকার করারও কোনো উপায় নেই।