টুর্নামেন্টের দুসপ্তাহ আগে নতুন আয়োজক ব্রাজিলের নাম ঘোষণা করে বিপদেই আছে কনমেবল। খোদ ব্রাজিল অধিনায়ক-কোচসহ দলটির অনেকেই চান না আসর মাঠে গড়াক এমন করোনা পরিস্থিতিতে। লাতিন ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির জন্য এরমাঝে স্বস্তির সুবাতাস, সাম্বার দেশে কোপা আমেরিকা খেলতে যেতে আপত্তি নেই আর্জেন্টিনার।
আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) বিবৃতিতে জানিয়েছে, যে ক্রীড়া চেতনা ফুটবল ইতিহাসে আর্জেন্টিনা দেখিয়েছে, সেটির ধারাবাহিকতায় দলটি অবশ্যই কোপা আমেরিকা-২০২১ আসরে খেলতে ব্রাজিলে যাবে।
করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থায় থাকার পরও কোপা আয়োজনে বদ্ধপরিকর কনমেবল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে টুর্নামেন্টের দুসপ্তাহ আগে নতুন আয়োজক হিসেবে ব্রাজিলকে পেয়েছে তারা।
শুরুতে আয়োজক ছিল না ব্রাজিল। দুই আয়োজক কলম্বিয়াতে ১৫ ও আর্জেন্টিনায় ১৩টি করে ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতায় কলম্বিয়া, করোনা পরিস্থিতির বাড়ন্ত দশায় আর্জেন্টিনা বাদ পড়ে যৌথ আয়োজকের খাতা থেকে। তারপর দৃশ্যপটে ব্রাজিল, শুরু গোল বাধার।
ব্রাজিল দল শুধু একা নয়, সঙ্গী হিসেবে আরও কয়েক প্রতিবেশী দেশের খেলোয়াড়দের পাশে পেয়েছে টুর্নামেন্ট বয়কটের আলোচনায়। যাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বুধবারের লাতিন অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের পর। খোদ সেলেসাও অধিনায়ক কাসেমিরো ও সেরা তারকা নেইমার নেতৃত্ব দিচ্ছেন না খেলতে।
সামনের সারির দলগুলোর অধিনায়ক বা তারকা খেলোয়াড়রা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বলতে গেলে আর্জেন্টিনা দলপতি লিওনেল মেসি ছাড়া কোপার দলগুলোর প্রায় সব অধিনায়কই মুখ খুলেছেন। অধিকাংশই আসর আয়োজনের বিপক্ষে।
এদিকে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট কোপার ২০২১ আসর ব্রাজিলে আয়োজনের সিদ্ধান্তের পর সূচিও জানিয়ে দিয়েছে কনমেবল। গত বৃহস্পতিবার তারা জানিয়েছে, ১৩ জুন ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে শতবর্ষী প্রতিযোগিতাটির। ১৪ জুন আর্জেন্টিনার টুর্নামেন্ট শুরু হবে চিলির বিপক্ষে।
টুর্নামেন্টের ফাইনাল গড়াবে রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে, পর্দা নামা ম্যাচটি ১০ জুলাই। ব্রাজিল টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপার আয়োজক হচ্ছে। প্রতিযোগিতাটির বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা। এবার তাদের গ্রুপ বি-তে আছে কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও পেরু। আর্জেন্টিনার গ্রুপ এ-তে চিলির পাশাপাশি আছে বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে।
একদিকে টুর্নামেন্টের বাকি সপ্তাহখানেক, অন্যদিকে ব্রাজিল অধিনায়ক কাসেমিরো বেঁকে বসে আছেন। তার আগে সেলেসাও কোচ টিটে সংবাদ মাধ্যমের সামনে জানিয়ে যান কাসেমিরো কোপা ব্রাজিলে আয়োজনের বিপক্ষে, তাই ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গত ম্যাচের আগে প্রেস কনফারেন্সে আসেননি।
ব্রাজিল দলপতি বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলে গত শনিবার গণমাধ্যমের সামনে এসে নিজ মুখেও সেটি বলে যান। নিজ দেশে এসময় টুর্নামেন্ট আয়োজনের পক্ষে নন কাসেমিরো-নেইমার ও সতীর্থরা।
কোপা নিয়ে কলম্বিয়া দল নিজেদের মতামত জানিয়ে রেখেছে। দেশটির প্রফেশনাল ফুটবলারদের অ্যাসোসিয়েশন স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে টুর্নামেন্ট আয়োজন নিয়ে দেশটির খেলোয়াড়রা উদ্বিগ্ন। অধিনায়ক হুয়ান কুয়াদ্রাদো মুহূর্তেই সেই কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে নিজেদের অবস্থানের জানান দিয়েছেন।
উরুগুয়েরও পুরো সমর্থন পাচ্ছে ব্রাজিল। লুইস সুয়ারেজ, এডিনসন কাভানি, ফের্নান্দো মুসলেরা প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন আগে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সুয়ারেজ সরাসরি বলে দিয়েছেন, ‘আমি কোপা আমেরিকায় খেলার বিপক্ষে।’
মুখ খুলি খুলি করছে চিলিও। কোপা এই অবস্থায় আয়োজন না করতে মুখ খোলাদের দলে পরের নামটি হতে পারে চিলি। দলটির অধিনায়ক গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভোর সঙ্গে মেসি-সুয়ারেজ-নেইমারের সম্পর্ক খুব ভালো। বার্সেলোনায় তারা একই ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছেন, একসাথে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন। পুরনো সতীর্থের কথা ব্রাভো ফেলতে পারবেন না বলেই মার্কা আভাস দিচ্ছে।
অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে। বলিভিয়াই যেমন। দেশটি চাচ্ছে কোপা আমেরিকা আয়োজন হোক সঠিক সময়েই। কাসেমিরো-নেইমাররা যদিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। খবর এসেছে ইকুয়েডর ম্যাচের পর দলপতি আর্তুন প্রেসিয়াদো ও ইনার ভ্যালেন্সিয়ার সামনে নিজদের মত তুলে ধরেছেন নেইমার। চেয়েছেন সমর্থনও।