ব্রাজিল আটবার কোপা জিতেছে। এবার ঘরের মাঠে তাদের কাছে সংখ্যাটা বাড়িয়ে নয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ। সেখানে পেরু মাত্র একবারই কোপা জিতেছিল ১৯৩৯ সালে। এবার পেরু দল মরিয়া শতবর্ষপ্রাচীন এই টুর্নামেন্টে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন হতে। দুদলের এমন হিসাবে ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাত ২টায়।
এই ব্রাজিলের সামনে আজ এক নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়ার দিন। এত বছর ধরে ব্রাজিল বিশ্ব ফুটবলে যা দাপট দেখিয়েছে, তার সবটাই ব্যক্তিগত ফুটবলারদের দাপটে। পেলে থেকে রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনহো, কাকা হয়ে নেইমার। ব্রাজিল দলীয় খেলায় বাজিমাত করেছে, এমন নজির খুব কম।
রোববার টিটের ব্রাজিল ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকার ট্রফি হাতে তুললে তা হবে দলীয় খেলার জয়। কারণ এই ব্রাজিল দলে সেই অর্থে মেগাস্টার নেই। নেইমার টুর্নামেন্টের আগেই চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় ব্রাজিলের শাপে বর হয়েছে। তারা ফাইনালে উঠে এসেছে কোনো ম্যাচ না হেরে এবং একটাও গোল (প্যারাগুয়ের সঙ্গে টাইব্রেকারে খাওয়া গোল বাদে) না খেয়ে।
মারাকানা স্টেডিয়ামে পেরুর বিরুদ্ধে ফাইনালেও গোল খেতে নারাজ ব্রাজিল। দলের নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার কাসেমিরো বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কোনো গোল না খেয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। ফাইনালে যদি আমরা গোল না খাই, তাহলে আমি নিশ্চিত আমাদের স্ট্রাইকাররা জয়ের গোল এনে দেবেই।’
পেরুর বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের খেলায় কৌতিনহো, ফিরমিনো, জেসুসরা ৫-০ গোলে জিতেছিলেন। ফাইনালে অবশ্য সেই ম্যাচ মাথায় রাখতে নারাজ অ্যালিসনরা। ব্রাজিল গোলকিপার একটাও গোলহজম না করে এখন দলের অন্যতম নায়ক। তিনি বলেছেন, ‘গত দু-বারের চ্যাম্পিয়ন চিলিকে যে দল তিন গোলে উড়িয়ে ফাইনালে ওঠে, তাদের হাল্কাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগই নেই। তারা এখন ভয়ঙ্কর।’
পেরুর ফরোয়ার্ড পাওলো গুয়েরেরোকে নিয়ে চিন্তায় রয়েছে পুরো ব্রাজিল ডিফেন্স। ৩৫ বছর বয়সী পেরুর এই ফরোয়ার্ড ব্রাজিলের ফুটবল মহলে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। কারণ তিনি ব্রাজিলের ক্লাব দলেই নিয়মিত খেলেন এবং প্রচুর গোল করেন।
চিলি বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে তিনিই ম্যাচের নায়ক। ব্রাজিল দলেরর ডিফেন্ডার মারকুইনহোস বলেছেন, ‘পাওলো কতটা সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার তা আমরা জানি। আমি তার সঙ্গে করিন্থিয়ান্সে খেলেছি। তার বিরুদ্ধেও খেলেছি। তাই তাকে আলাদা করে নজরে রাখতেই হবে।’
পেরুরর স্ট্রাইকার রাউল রুইদিয়াজ বলেছেন, ‘আমরা ঠাণ্ডা মাথায় ধীরে ধীরে প্রতি ম্যাচে উন্নতি করছি। তাই উরুগুয়ে, চিলির মতো দুই সেরা দলকে হারিয়ে ফাইনালে। এবার ব্রাজিলকে হারানোর জন্য আমরা আত্মবিশ্বাসী। বহু বছর পর দেশকে কোপা দেয়ার স্বপ্নে আমরা মরিয়াও।’
মরিয়া মেজাজ দেখাচ্ছেন ব্রাজিল কোচও। রাশিয়া বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে টিটের হাত ধরে ব্রাজিল দল ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও কোপায় নিজেদের ঘরের মাঠে প্রথম দুই ম্যাচে দর্শকদের বিদ্রুপের শিকার হতে হয়েছিল। টিটে বলেছেন, ‘কোপা জেতাটা জরুরি দেশের মানুষের মনে আমাদের সম্পর্কে সমীহ ফেরানোর জন্য।’
তবে সেমিতে আর্জেন্টিনা হারালেও ব্রাজিলের কোপা জয়ের ‘কাঁটা’ হয়ে উঠতে পারেন এক আর্জেন্টাইন। যার নাম রিকার্দো গারেকা। ৬১ বছরের গারেকাই পেরুর কোচ। ২০১৫ সাল থেকে এই দেশের দায়িত্বে থাকলেও সেই অর্থে তার কোনো বড় সাফল্য নেই। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে ফরোয়ার্ডে খেলা তারকা গারেকার লক্ষ্য, কোচিং জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য পেতে এই ট্রফি জেতা।
ব্রাজিলের ফুটবল সম্পর্কে তার পরিস্কার ধারণা আছে। কারণ পেরুর কোচ হওয়ার আগে গারেকা ব্রাজিলের ক্লাব পালমেইরাসে কোচিং করিয়েছিলেন। তার মন্তব্য, ‘ব্রাজিলকে এগিয়ে রেখেও বলছি, আমাদের ছেলেদের ফাইনালে জেতার ক্ষমতা আছে। সেটা তারা চিলি ম্যাচে বুঝিয়ে দিয়েছে।’