আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপাখরা ঘুচল। ঘুচল ১৬ বছর ধরে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ব্রাজিলের বিপক্ষে জয়খরা। ক্যারিয়ারের অন্তিমলগ্নে থাকা লিওনেল মেসির হাতে দেশের জার্সিতে প্রথম কোনো মেজর শিরোপা উঠল। এসব মিলল, কারণ নেইমারের ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকায় শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
রোববার বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে শিরোপার মঞ্চে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ও স্বাগতিক ব্রাজিলের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় তুলেছে আর্জেন্টিনা। জয়সূচক গোলটি করেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া।
৯ বারের কোপা চ্যাম্পিয়ন সেলেসাওদের হারিয়ে ১৫তম বারের মতো কোপার শিরোপা জিতল আলবিসেলেস্তেরা। বসেছে প্রতিযোগিতাটির সর্বোচ্চবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের পাশে। দুদলের পাশেই এখন সমান ১৫টি করে কোটা আমেরিকা ট্রফি।
ব্রাজিলকে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে সাজিয়েছিলেন কোচ টিটে। আর্জেন্টিনাকে ৪-৩-৩ পজিশনে খেলান কোচ লিওনেল স্কালোনি।
বলে লাথি দেয়ার শুরু থেকেই দুদল শারীরিক চ্যালেঞ্জে নেমে পড়ে। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে মন্টিয়েলকে ফাউল করে ব্রাজিলের ফ্রেডের হলুদ কার্ডের মধ্য দিয়ে রেফারিরও শক্ত থাকার বার্তা দেয়া শুরু।
ব্রাজিলের ২২ ফাউলের বিপরীতে আর্জেন্টিনার ফাউল ধরা পড়েছে ১৯টি। ব্রাজিলের ৪ ও আর্জেন্টিনা দেখেছে ৫টি হলুদ কার্ড।
ম্যাচের ২২ মিনিটে লিড নেয় আর্জেন্টিনা। গোল আনেন ডি মারিয়া। মাঝমাঠ থেকে লম্বা ক্রস বাড়িয়েছিলেন রদ্রিগো ডে পল। সেটি পৌঁছে যায় ডানপ্রান্তে অরক্ষিত ডি মারিয়ার কাছে, বলে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভোঁ-দৌড়ে ব্রাজিল বক্সের কাছে থেকে গোলরক্ষক এডেরসনের মাথার উপর দিয়ে জাল খুঁজে নেন আর্জেন্টাইন তারকা।
২০০৪ সালের ফাইনালে সেসার ডেলগাডোর পর ডি মারিয়াই প্রথম আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়, যিনি কোপার ফাইনালে গোল এনে দিলেন আলবিসেলেস্তেদের।
ম্যাচের ৩২ মিনিটে মেসি বল টেনে অনেকদূর দৌড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ সীমানায়, তার শট পোস্টের পাশ নিয়ে বাইরে চলে যায়।
পরের মিনিটে লিয়ান্দ্রো পারেদেস ফাউল করায় সুবিধাজনক জায়গায় ফ্রি-কিক পেয়েছিল ব্রাজিল, ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া শটে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি নেইমার, শট নেন আর্জেন্টিনার রক্ষণ দেয়ালে। নেইমারকে ফাউল করায় পারেদেসকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি।
খানিক পর মেসি ও লে সেলসো ওয়ান টু ওয়ান খেলে ঢুকে পড়েছিলেন স্বাগতিক বক্সে। কিন্তু মেসি কোনো ত্রাস ছড়ানোর আগেই মার্কুইনহোস বল পাহারা দিয়ে এডেরসনের গ্লাভসে জমা হওয়া নিশ্চিত করেন।
উল্টোদিকে, প্রথমার্ধে সেই অর্থে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের কোনো পরীক্ষাই নিতে পারেনি ব্রাজিল। তাতে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যাওয়া নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ৫১ মিনিটে নেইমারকে বাজেভাবে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখেন লে সেলসো। এক মিনিট পর রিচার্লিশন বল জড়িয়েছিলেন আর্জেন্টিনা জালে, অফসাইড খাড়ায় সেটি বাতিলের খাতায় চলে চায়। দুই মিনিট পর ব্রাজিল তারকার আরেকটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো।
এসময় আর্জেন্টিনা বক্সে মূহমূহ চাপ তেরি করেছিল ব্রাজিল। ৬৫ মিনিটে মেসি ঢুকে পড়েছিলেন ব্রাজিল বক্সে, তাকে আটকাতে পেরেছে স্বাগতিকরা। ৬৭ মিনিটে নেইমারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ডে পল।
ম্যাচের ৬৯ মিনিটে ডে পলকে বাজে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড ডেকে আনেন রেনান লোদি। ৭২ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন লুকাস পাকুয়েতা, তাগলিয়াফিকোকে ব্লক করতে গিয়েছিলেন তিনি।
৮০ মিনিটে নেইমারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ওটামেন্ডি। সেই ফাউলকে কেন্দ্র করে দুদলের খেলোয়াড়রা মৃদু ধাক্কা-ধাক্কিতেও জড়ান। মার্কুইনহোসকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি।
৮২ মিনিটে ব্রাজিলের একটি প্রচেষ্টা কর্নারের বিনিময়ে ঠেকায় আর্জেন্টিনা। বার্বোসার সামনে বল বিপদমুক্ত করেন পেজ্জেলা। নেইমার কর্নার কিক নিতে যেয়ে গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকদের উজ্জীবিত হওয়ার ইশারা দেন। কর্নার শটে অবশ্য জায়গামতো বল ফেলতে পারেননি সেলেসাও নাম্বার টেন।
ম্যাচের ৮৫ মিনিটে নেইমারের থেকে বল পেয়ে সিলভার উড়িয়ে মারের বারের উপর দিয়ে। পরের মিনিটে সেলেসাওদের একটি প্রচেষ্টা ঠেকান গোলরক্ষক এমিলিয়ানো।
তার পরের মিনিটে মেসি সামনে কেবল ব্রাজিল গোলরক্ষককে পেয়েও নিশ্চিত জাল খুঁজে নেয়ার চেষ্টায় এডেরসনের হাতে বল তুলে দেন শট না নিয়েই। তাতে ব্যবধান বাড়েনি। জয় নিশ্চিত হয়ে যায় ডি মারিয়ার ওই গোলেই।