আলোর স্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হল খানিক সময় আগেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মাঠ ছাড়লেন হাসিমুখে। ৫৫ রানে নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে। স্বাগতিকদের ১৭২ রানের সংগ্রহটা খুব ছোট মনে হচ্ছে না দিনশেষে। মিরপুর টেস্টে প্রথমদিনেই পড়েছে ১৫ উইকেট। পুরো সময় খেলা হলে সেটি আরও বাড়তে পারত। তারপরও স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে বাংলাদেশ। কিউইরা ১১৭ রানে পিছিয়ে আছে, হাতে ৫ উইকেট।
মেহেদী হাসান মিরাজ ৩টি ও তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন ২টি উইকেট। প্রথমদিনে বল হাতে তোলেননি আরেক স্পিনার নাঈম হাসান। অল্প রান করেও প্রথম ইনিংসে লিডের আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুরের উইকেট যেমন আচরণ করছে, চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা হবে সবচেয়ে কঠিন। সেটি করতে হবে কিউইদের।
তার আগে বাংলাদেশ যদি প্রথম ইনিংসে কিছু রানে এগিয়ে থাকতে পারে, হবে বড় সুবিধার। সিলেটে নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানে হারানোর পর সিরিজ জয়ের মিশনে থাকা বাংলাদেশ মিরপুর টেস্টের প্রথমদিনে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে।
কিউই ব্যাটার গ্লেন ফিলিপস ৫ ও ড্যারেল মিচেল ১২ রানে অপরাজিত আছেন। ডেভন কনওয়ে ১১, টম ল্যাথাম ৪, হেনরি নিকোলস ১, কেন উইলিয়ামসন ১৩ ও টম ব্লান্ডেল শূন্য রানে আউট হন।
কুয়াশা-মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে বাংলাদেশকে অনেকটা সময় ব্যাট করতে হয়েছে ফ্লাডলাইটের আলোয়। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় মিরপুরের আবহাওয়া এতটাই গুমোট ছিল যে, নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করতে হয় দিনের খেলা।
এমন কন্ডিশনে ব্যাটিং বেছে নিয়ে ১৭২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে আসা ৩৫ রান, যা টাইগার ইনিংসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
নিয়মিত বিরতিতে পড়েছে বাংলাদেশের উইকেট। জুটি গড়ে উঠেছিল মোটে একটি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব সংগ্রহ আসে। মুশফিক নিজের দুর্ভাগ্য ডেকে না আনলে জুটিটা হতে পারত বড়।
প্রথম ও দ্বিতীয় সেশনে সমান ৪টি করে উইকেট পড়েছে বাংলাদেশের। তৃতীয় সেশনে কিছুক্ষণ ব্যাটিং করার পর শেষ ২ উইকেটের পতন ঘটে। স্পিনারদের দাপটে মিরপুর টেস্টের প্রথমদিনেই ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের ইনিংস দীর্ঘ হয়েছে ৬৬.২ ওভার।
চা-বিরতির আগের ওভারে সাজঘরে ফিরে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। ২০ রান করে মিচেল স্যান্টনারের তৃতীয় শিকার হন। বিরতির পর তাইজুল ইসলাম (৬) ও শরিফুল ইসলাম (১০) কিছুটা সময় কাটিয়ে আউট হন।
মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস ৩টি করে উইকেট নেন। দুটি উইকেট নেন অ্যাজাজ প্যাটেল। স্পিনেই মূলত বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেয় সফরকারী দল।
আগে ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশকে টেনে উদ্ধারের চেষ্টা চালান মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসেন দীপু। পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি গড়ার পর মুশফিকের বিরল ভুলের খেসারত দেয় বাংলাদেশ। ৩৫ রান করে অযথাই আউট হন মুশি।
ইনিংসের ৪১তম ওভারে জেমিসনের চতুর্থ ডেলিভারিটি ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন মুশফিক। ব্যাটে লেগে বল একটু সামনে ড্রপ করে। সঙ্গে সঙ্গে হাত দিয়ে বল ধরেন তিনি। ‘হ্যান্ডেলড দ্য বল’ আউটের আবেদন জানায় নিউজিল্যান্ড।
দুই ফিল্ড আম্পায়ার কথা বলেন নিজেদের মধ্যে। মুশফিকের সঙ্গে কথা বলে টিভি আম্পায়ারের শরণাপন্ন হন। আসে আউটের ঘোষণা। যা ক্রিকেটের নিয়মের মধ্যে রয়েছে।
একশর কাছাকাছি টেস্ট খেলা অভিজ্ঞ মুশফিকের এমন বোকামি দেখে অবাক হয়েছেন সবাই। বল স্টাম্পের লাইনেও ছিল না যে বোল্ড হওয়ার শঙ্কা থাকবে। হাত দিয়ে বল ছুঁয়ে ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বড় ভুলই করে ফেলেন মি. ডিপেন্ডেবল।
১০৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর নিয়মিতে বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে। একে একে ফিরে যান শাহাদাত হোসেন (৩১), নুরুল হাসান সোহান (৭)।
প্রথম সেশন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেট হারিয়ে ৮০ রান। সিলেট টেস্টের মতোই ওপেনিং জুটি খুব খারাপ করেনি। ইনিংসের ১১তম ওভারে জাকির হাসান ৮ রান করে স্যান্টনারের শিকার হন। ভাঙে ২৯ রানের ওপেনিং জুটি।
১৮ রানের ব্যবধানে আরও ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। একে একে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয় (১৪), মুমিনুল হক (৫) ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (৯)।