রাষ্ট্রায়ত্ত ৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পেতে আবেদন করেও সময়মত প্রবেশপত্র ডাউনলোড না করায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না লক্ষাধিক আবেদনকারী।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দেড় হাজারেরও বেশি পদের বিপরীতে আবেদন করেন প্রায় সোয়া তিন লাখ চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু এই আবেদনকারীদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারেননি এক লাখেরও বেশি। প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে না পারা শত শত আবেদনকারী প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে ধরনা দিলেও সবাইকে ফিরতে হচ্ছে হতাশ হয়ে।
ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি বলছে, যারা প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারেননি কোনোভাবেই তাদের আর প্রবেশপত্র সরবরাহের সুযোগ নেই।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ নিয়োগ পরীক্ষার প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা (প্রিলিমিনারি) আগামী ১২ জানুয়ারি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৬১টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।
সমন্বিতভাবে সোনালী ব্যাংকে ৫২৭টি, জনতা ব্যাংকে ১৬১টি, রূপালী ব্যাংকে ২৮৩টি, বাংলাদেশ ডেভোলপমেন্ট ব্যাংকে ৩৯টি, কৃষি ব্যাংকে ৩৫১টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ২৩১টি, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনে ১টি এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের ৭০টিসহ মোট ১ হাজার ৬৬৩টি পদে নিয়োগ দিতে গত ২৩ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি)।
এসব পদে অনলাইনে আবেদন করেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৬৭০ জন চাকরিপ্রার্থী। পরে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য বিবেচিতদের বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে ১৩ দিনের সময় দিয়ে গত ১৯ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএসসি।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নির্ধারিত সময়ের পর প্রার্থীদের প্রবেশপত্র সংগ্রহের আর সুযোগ থাকবে না। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মোট আবেদনকারীদের মধ্যে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭০ জন প্রার্থী প্রবেশপত্র তোলেননি; যা মোট আবেদনকারীর এক তৃতীয়াংশেরও বেশি।
প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে না পারাদের কেউ কেউ বলছেন, বিএসসির পক্ষ থেকে মোবাইলে কোনো এসএমএস না দেওয়ায় সময়মত খবর জানতে পারেননি। তাছাড়া ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা স্মার্টফোন না থাকায় তারা নির্ধারিত সময়ে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারেননি। কেউ কেউ আবার ডাউনলোড করেও সফট কপি বা প্রিন্ট করা কপি হারিয়ে ফেলেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম সময়মত প্রবেশপত্র তুলতে না পারায় রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যান। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়ে দেয়, নতুন করে আর প্রবেশপত্র তোলার সুযোগ নেই।
কামরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: কোনো এসএমএস না পাওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ঝামেলার কারণে বাংলাদেশে ব্যাংকের ওয়েবসাইট ফলো করতে পারিনি। তাই আবেদন করেও নির্ধারিত সময়ে আমি প্রবেশপত্র তুলতে পারিনি। এজন্য সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে আমাকে জানানো হয়েছে নতুন করে কাউকে প্রবেশপত্র দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমার মত অনেকেই এসেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। সবার কথা বিবেচনা করে বিএসসির উচিত নতুন করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করার সুযোগ দেওয়া।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী তানিম ইশতিয়াক জানিয়েছেন, আমার পরিচিত অনেকেই তুলেছিল। কিন্তু কেউ কেউ প্রিন্ট করা কপি হারিয়ে ফেলেছে। পরে আর সফট কপি খুঁজে পায়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত নেশা বলেন, ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলার কারণে নেটে আসা হয়নি। যতদূর জানি ওয়েবসাইটে খুব বেশি দিন প্রবেশপত্র তোলার সুযোগ রাখা হয়নি।
তবে নির্ধারিত সময়ে যারা প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে পারেননি তাদের আন্তরিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিএসসির সদস্য সচিব মো. মোশারফ হোসেন খান।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: অন্তত ৭টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং আটটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে জানানোর পরেও যারা প্রবেশপত্র তুলতে পারেননি আমার মনে হয় তারা চাকরির ব্যাপারে আন্তরিক নয়।
‘‘আপনি ঈদের নামাজ পড়তে চাইলেন। কিন্তু নামাজের সময় ঘুমিয়ে পড়লেন, পরে উঠে বললেন আমি নামাজ পড়তে চাই। কিন্তু আপনার জন্য নতুন করে তো নামাজের আয়োজন করা সম্ভব নয়।’’
নতুন করে কাউকে প্রবেশপত্র দেওয়ার সুযোগ নেই বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
তাছাড়া বিনামূল্যে আবেদনের সুযোগ পাওয়ায় অনেকেই আবেদন করেও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না জানিয়ে বিএসসি সদস্য সচিব বলেন, বিগত পরীক্ষাগুলোতে সর্বোচ্চ উপস্থিতির হার ছিল ৩৮ শতাংশ।
‘এই পরীক্ষা গ্রহণের জন্য আমরা একটি টাকা নিচ্ছি না। কিন্তু পরীক্ষাগুলো আয়োজন করতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। অথচ পরীক্ষাগুলোতে উপস্থিতি হতাশাজনক।’’ বলেন মোশারফ হোসেন খান।
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করেও অংশ নিতে পারাটা দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।