ব্যবসায় গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষিত নারীদের অংশগ্রহণের হার বাড়ছে। গত ৮ বছরে এই হার বেড়েছে ৬ শতাংশ। একই সাথে কমে আসছে পারিবারিকভাবে নারীদের ব্যবসায় অনুৎসাহিত করার প্রবণতাও।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ‘ওমেন্স ইন্টারপ্রেনার ইন এসএমই: বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ ২০১৭’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন কে এম হাবিব উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ।
সারাদেশের ১ হাজার ৫১০ জন নারী উদ্যোক্তার ওপর গবেষণা পরিচালনা করে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ব্যবসায় শিক্ষিত নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সামাজিকভাবে পিছিয়ে যাওয়া নারীরা ব্যবসাবান্ধব নীতির কারণে শিল্পায়ন ও ব্যবসায় সম্পৃক্ত হচ্ছেন। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারেও নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে গেছেন।
গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, ২০০৯ সালে গ্র্যাজ্যুয়েট পর্যায়ে শিক্ষিত ২০ শতাংশ নারী ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ২০০৯ সালে ৪২ শতাংশ নারীকে পারিবারিকভাবে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে নিরুৎসাহিত করা হতো। ২০১৭ সালে তা ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ নারীকে সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করতে হয়েছে। ২০১৭ সালে এটি ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা ট্যাক্স দিতেন, যা ২০১৭ সালে ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা ব্যবসার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করতেন, যা ২০১৭ সালের বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এসবই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে গবেষণার ফলাফলে পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ৭৭ শতাংশ নারী এখন আর পরিবার থেকে কোনো বাধা পায় না। ৭ শতাংশ নারী এখনো পরিবার থেকে বাধা পায়। ৫ শতাংশ নারী পরিবার থেকে কোনো অর্থনৈতিক সাহায্য না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ৪ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা জানিয়েছেন তাদের স্বামী ব্যবসা পছন্দ করেন না। ৪ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা হতে শ্বশুর বাড়ি থেকেও বাধা পান।
এতে আরও বলা হয়, ৮৮ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা ট্রেড লাইসেন্স পেতে কোনো বিড়ম্বনায় পড়েননি। ৭ শতাংশ নারীকে ট্রেড লাইসেন্স পেতে বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। ৩ শতাংশ নারী জানিয়েছেন ট্রেড লাইসেন্স পেতে লম্বা সময় লাগে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতই (এসএমই) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। বর্তমানে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ শিল্প ও ব্যবসা এসএমই খাতের আওতাভুক্ত। এটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, মোট শিল্প কর্মসংস্থানের শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ সৃষ্টি হচ্ছে এসএমই খাত থেকে। এসএমই খাতে মোট অভ্যন্তরীণ শিল্পপণ্য চাহিদার শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে।
নারীদের বাদ দিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারী জনগোষ্ঠি তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। নারীরা বিভিন্ন পেশায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আগামী ১০ বছর পর তাদের আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ হবে না।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন সূচকে ধারাবাহিক অগ্রগতি অব্যাহত রেখে নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। এ লক্ষ্যে উদ্যোক্তা হবার পেছনে অঞ্চলভিত্তিক সাংস্কৃতিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি রূপান্তরিত নারীদের (তৃতীয় লিঙ্গ) জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বাড়িয়ে তাদেরকে সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। এ লক্ষ্যে তারা নারীদের ওপর বড় ধরণের গবেষণা চালিয়ে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের পেছনে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিতকরণ এবং এর প্রতিকারে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণের তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান, এসএমএই ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও নারী উদ্যোক্তা ইসমত জেরিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ডিভিশনের কর্মকর্তা লীলা রশিদ প্রমুখ।