বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সাফল্যের রাজপথে উঠেছে গত তিন বছরের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে। টেস্ট এবং ওয়ানডে সংস্করণে র্যাঙ্কিংয়ের তলানি থেকে মধ্যবর্তী জায়গায় আসীন হয়েছে টিম টাইগার্স। ক্রিকেট দলকে ঘিরে বোনা হচ্ছে আরও বড় স্বপ্নের জাল। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। একেকজন ক্রিকেটার দেশের কোটি হৃদয়ের স্বপ্নসারথী। সেই তারাই যখন মাঠের বাইরে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যান, তখন বাজে প্রভাব পড়ে পুরো সমাজেই।
অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানো, শৃঙ্খলাভঙ্গ, মাঠেই কিশোর দর্শক পেটানো, শিশু নির্যাতন, সাংসারিক কলহ থেকে বিবাহবিচ্ছেদ, স্ত্রী নির্যাতন, গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে; সাম্প্রতিক সময়ে এমনসব কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। কেউ কেউ জেল খেটেছেন, কেউ হয়েছেন ফেরারি।
গত তিন বছরে ঘুরেফিরে এসেছে ক্রিকেটারদের এসব নেতিবাচক ব্যাপার। যেনো শেষ নেই! জাতীয় দলের ওপেনার সৌম্য সরকারের নামেও বিসিবিতে এসেছে অভিযোগ। বিসিবি সে ব্যাপারে মুখ না খুললেও গুঞ্জন আছে এ ওপেনারের ইস্যুটিও নারীঘটিত।
আরেক তরুণ ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্ত্রী নির্যাতন ও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবির। কদিন আগে তার বিরুদ্ধে হয়েছে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা। সম্প্রতি নাসির হোসেনের বিরুদ্ধে উঠেছে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ। সাব্বির রহমান ফেসবুকে এক সমর্থককে হুমকি দিয়ে হয়েছেন সমালোচিত। তিনিই কিশোর দর্শক পিটিয়েছিলেন। কাছাকাছি সময়েই এতগুলো ঘটনা। তাই বিসিবিপাড়ায় এশিয়া কাপের আলোচনা ছাপিয়ে মোটা দাগে উঠে আসছে এসব ব্যাপার।
এশিয়া কাপ সামনে রেখে মিরপুরে প্রস্তুতি ক্যাম্পে থাকা ক্রিকেটারদের একজন একজন করে প্রতিদিন মুখোমুখি হচ্ছেন সংবাদমাধ্যমের। বুধবার সৌম্য এলেন বলেই প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিকতা পেল। এসব নেতিবাচক ব্যাপার নিয়ে ক্রিকেটাররা কী ভাবেন, নিজেদের মধ্যে কী আলোচনা হয়, সেসব নিয়ে প্রশ্ন উঠল। সৌম্য নিজেও অভিযুক্ত বলেই কিনা ক্রিকেটের বড় মিশনের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যেতে চাইলেন!
‘এটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। এখন যেহেতু ক্যাম্প শুরু হয়ে গিয়েছে, আমরা চেষ্টা করি যার যার নেতিবাচক বিষয় সামনে না এনে ইতিবাচক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। যেহেতু এশিয়া কাপ সামনেই, ১৫-১৬ দিন পরে। সবার চোখ সেখানেই। বড় আসরে কীভাবে ভালো করতে হবে, সেভাবেই অনুশীলন করছে সবাই।’
তাহলে কি একটুও চিন্তা করছেন না? পাল্টা প্রশ্নের পরও একই ধরণের উত্তর দিলেন সৌম্য। এবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে, ‘ভাই, ১৫ দিন পরেই খেলা। সবার চিন্তা এশিয়া কাপ নিয়েই। কিভাবে ভালো খেলা যায় সেটা নিয়ে। এসব নিয়ে চিন্তা করার তো কোনো সময় নাই কারো।’
তবে এসব ব্যাপার নিয়ে কঠোর হওয়ার সময় এসে গেছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বিষয় নিয়ে বলেছেন, ‘মোসাদ্দেকের ব্যাপারটা যেটা দেখেছি তার স্ত্রী মামলা করেছেন, যেহেতু এটা আদালতে চলে গেছে, আদালতেই নিষ্পত্তি হোক। আমরা আমাদের বিষয়গুলোকে আমাদের মতো করে দেখব। খুব শিগগিরই বসব, সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়দের ডাকা হবে। তাদের বক্তব্য শুনব।’
‘মোসাদ্দেকের ইস্যু আসার আগে অন্যকিছু বিষয় ছিল, যেগুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে যেটা আপনারা শিগগিরই জানতে পারবেন।’ -ক্রিকেটারদের সাম্প্রতিক নেতিবাচক কর্মকাণ্ড নিয়ে এভাবেই বললেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী।