জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবেই তার বেশি পরিচিতি। ১৯৯৭ সালে শওকত আলী ইমনের সুরে ‘জননেতা’ ছবিতে প্লেব্যাক করার মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে আগমন। এরই মধ্যে কয়েক’শ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
২০০০ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম অ্যালবাম প্রতীক্ষা। ছয় বছর বিরতির পর ২০০৭ লালনের গান নিয়ে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘অপার হয়ে বসে আছি’। এছাড়াও আসিফের সঙ্গে তিনটি দ্বৈত অ্যালবাম ‘মন ছুঁয়ে যাও, চলো যাই অজানায়, ফিরব না আজ বাড়িসহ বেশ কয়েকটি মিশ্র অ্যালবামে কাজ করেছেন তিনি।
বর্তমানে মিক্সড অ্যালবামে কাজ করার পাশপাশি প্লেব্যাক নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। ব্যস্ততার মধ্যেই চ্যানেল আই অনলাইনকে জানালেন তার গান নিয়ে আগামী দিনের কথা; ব্যক্তি জীবনের কিছু অজানা কথা।
চ্যানেল আই অনলাইন: ঈদের ব্যস্ততা নিয়ে কিছু বলুন?
মুন্নী: আমার একটি সলো অ্যালবাম রেডি আছে। তবে এই ঈদে লেজার ভিশনের ব্যানারে দুইটি মিক্সড অ্যালবাম বাজারে আসছে। একটি ‘মুসাফির’, অপরটি ‘বেঁচে থাকার গান’। এই অ্যালবামটিতে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছি। ‘বেঁচে থাকার গান’ শিরেনামের গানটিতে আমরা সঙ্গে বাপ্পা মজুমদার, পান্থ কানাই রয়েছে। আর ‘মুসাফির’ অ্যালবামে শিল্পী রাহাতের সঙ্গীত আয়োজনে সুফি ঘরনার গান গেয়েছি।
চ্যানেল আই অনলাইন: প্লেব্যাকে কাজ করা হচ্ছে?
মুন্নী: মূলত প্লেব্যাকেই সবচেয়ে বেশি কাজ করছি আমি। সম্প্রতি ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী টু’ সিনেমায় কাজ করলাম। এর আগে ‘ব্ল্যাক মানি’ সিনেমায় কাজ করেছি। এছাড়াও বেশ কিছু সিনেমায় কাজ করার কথা রয়েছে এই মুহূর্তে নামগুলো মনে পড়ছে না।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনি দেখতে যথেষ্ট সুন্দর, গানের পাশাপাশি অভিনয় করার ইচ্ছে আছে?
মুন্নী: হেসে বললেন, ১৯ বছরের গানের ক্যারিয়ারের শুরু থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে আসছি। আমাদের দেশের গুণী কয়েকজন পরিচালক যাদের নাম না বললেই নয়, চয়নিকা চৌধুরী, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অরুন চৌধুরী, মোহন খান, তাহের শিপন এরা সবসময় আমাকে অভিনয় করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি মনে করি, অভিনয় অনেক কঠিন কাজ। এটি করতে হলে জানতে হবে। যারা মঞ্চে কাজ করেন তাদের প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা। তাদের অভিনয় যখন দেখি তখন মনে হয় অভিনয় আমাকে দিয়ে নয়।
চ্যালেন আই অনলাইন: কিভাবে নিজেকে এতো বেশি সুন্দর করে রাখেন?
মুন্নী: আসলে কোনো রহস্য নেই। মিডিয়ার যদি কোনো কেয়ারলেস মেয়ে থাকে সে হলাম আমি। পার্লারে ঠিক মনে পড়ে না কবে গিয়েছি। তবে সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করি। খাওয়ার ব্যাপারে খুব সাধারণ যা পাই তাই খাই। যেই কাজটি সবচে বেশি করি সেটি হলো জীবনকে খুব সহজভাবে নেওয়া। জীবনকে সাদামাটা ভাবে সাজাতে পছন্দ করি। একটি গ্রামের মেয়ে যেভাবে জীবন কাটায় আমিও ঠিক জীবনকে সেভাবে চালাই। যার জন্যই হয়তো আমার সহজ স্বাভাবিকতা সবার কাছে ভালো লাগে।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনার তো লালনের গানের প্রতি দুর্বলতা আছে, এখন লালন নিয়ে কিছু করছেন?
মুন্নী: ছোটবেলা থেকেই লালনের গান আমাকে খুব টানে। এই লালন গান গেয়েই ছোটবেলায় জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। আসলে আমি লালনের শিল্পী। কিন্তু যখন কবির বকুলের সঙ্গে বিয়ে হলো তখন থেকে আমি আধুনিক ঘরনায় চলে আসি। কারণ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে আধুনিক গান বেশি জনপ্রিয়। তবে ২০০৭ সালে ‘অপার হয়ে বসে আছি’ আমার একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছিলো। অ্যালবামটি দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। সেই জনপ্রিয়তা আমাকে এখনো অনুপ্রেরণা দেয়।
চ্যানেল আই অনলাইন: শিল্পী না হলে মুন্নী কি হতো?
মুন্নী: পড়াশুনা করতাম কিন্তু কোনো লক্ষ্য ছিলো না। গানই করতাম এটাই স্বপ্ন ছিলো। কারণ যখন জীবনের লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা করবো তখন থেকেই গান করি। তাই গান ছাড়া কোনো কিছু ভাবিনি।
চ্যানেল আই অনলাইন: কবির বকুল আছে বলেই মুন্নি আছে মিডিয়া এমন কথা শোনা যায় আপনি কি বলবেন?
মুন্নী: আসলে এই প্রশ্নটা গত ১৯ বছরের গানের ক্যারিয়ারে অনেক শুনেছি। এর উত্তর দিতে আমার খুব ভালো লাগে। অব্যশই একজন কবির বকুল আমার গাইড হওয়ার কারণে অন্ধকার, আলো সবকিছুই চিনে বুঝে আমি এই জায়গায় এসেছি। মিডিয়ায় কোনো খারাপ কাজ আমার দ্বারা ঘটেনি।
আর কবির বকুল থাকাতে এটাও হয়েছে, হয়তো সে নিজের মুখে কোথাও বলতে পারেনি; সেখানে আমি কাজ করিনি। অথচ অন্য শিল্পী হলে গীতিকার কবির বকুলই আমাকে ডেকে বলতেন এই গানটি আপনি করেন। কিন্তু স্ত্রী হওয়ার কারণে বলতে পারেনি। ওই কাজটি থেকে আমি বঞ্চিত হয়েছি।
আসলে অনেক কথা চট করে বলে ফেলা সহজ। ব্যক্তিগত জীবনে আমার পাওয়ার চেয়ে না পাওয়াটাই যোগ হয়েছে বেশি। যার জন্য নিজের মাঝে অনেক বড় একটা ধাক্কা খেয়েছি। মনে হয়েছে না আমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। গত পাঁচ বছরে আমি নিজেকে অনেক দক্ষ করেছি। আর সে সময়ে কবির বকুল আমার অনুপ্রেরণা হয়েছিলেন কিন্তু কোনোদিন বাধা হিসেবে ছিলেন না। এখন আমি শুধু কবির বকুল সঙ্গে কাজ করছি না সবার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।
চ্যানেল আই অনলাইন: গীতিকার কবির বকুলের সঙ্গে স্বামী বকুলের কোনো পার্থক্য আছে?
মুন্নী: গীতিকার কবির বকুলের সঙ্গে ঘরের কবির বকুলের কোনো রকম মিল নেই। বাইরে তিনি বিখ্যাত-সম্মানিত ব্যক্তি। আর ঘরে একজন ভালো বাবা, ভালো স্বামী এবং মিডিয়ায় তিনি খুব আন্তরিক মানুষ। আসলে লেখার কবির বকুল বাইরে উচ্চমাত্রার ব্যক্তিত্ব আর ঘরের তিনি সহজ ও স্বাভাবিক একজন মানুষ।