গত দুই মাস ২০১৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের কর মওকুফ নিয়ে ই-মেইল চালাচালির উত্তাপ যেন ঠিকরে পড়ল বোর্ড সভায়। তিন দিনের সভার শেষদিনে হঠাৎ প্রসঙ্গটি উঠতেই আইসিসির সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) একটা মন কষাকষি হয়ে গেছে। পরে আইসিসি বিবৃতিতে জানিয়েছে, মেইল সংক্রান্ত একটি স্বাধীন তদন্ত হবেই।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় বিকেল ৩.৩০ মিনিটে শুরু হয় সভা। দুই ঘণ্টার কম সময় ধরে চলা সভায় বেশিরভাগ সময় আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের মধ্যকার ‘কর রেয়াত, ই-মেইল চালাচালি ও টেলিভিশন সত্ত্ব নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে।’
বাধ্য হয়ে ১০ জুন পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে সভা। আইসিসির পক্ষে জানানো হয়েছে, একজন কর্মকর্তার অধীনে তদন্ত হবে বিষয়টি। কেননা দুই সংস্থার চালাচালি করা বিশেষ মেইল গণমাধ্যমেও চলে এসেছে।
প্রায় দুমাস ধরে মেইল চালাচালির পর বিসিসিআইকে কর মওকুফের ব্যাপারে ‘শর্তহীন নিশ্চয়তা’ চেয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য ১৮মে পর্যন্ত সময় বেধে দেয় আইসিসি। ২৯ এপ্রিল এবিষয়ে এক মেইলে আইসিসির উপদেষ্টা জোনাথন হল লিখেছেন, ‘আমরা বিসিসিআইয়ের সঙ্গে ২০.১ ধারায় আয়োজক চুক্তি করতে চাচ্ছি। কিন্তু আইসিসির ব্যবসায়িক কমিটি (আইবিসি) সেটি ভাঙতে চাইছে। কারণ, বিসিসিআইয়ের সঙ্গে আলোচনা মতে ১৮মের আগে পূর্বের বকেয়া ট্যাক্স সমাধান হওয়ার কথা ছিল। সেটি এখনও সমাধান হয়নি।’
জবাবে করোনাভাইরাসের কারণে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করার আবেদন করে বিসিসিআই। যে আবেদন আগেই নাকচ করে জোনাথন হল মনে করিয়ে দিয়েছেন, সমস্যা সমাধানে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় পেয়েছিল বিসিসিআই। এরমধ্যে সমাধান করতে না পারায় আর কোনো সময় দেয়া হবে না তাদের।
বৃহস্পতিবার সেই ই-মেইলগুলোর একটির সূত্র ধরে আইসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইবিসির সদস্যরা আর কোনোভাবেই ভারতের দাবি অনুযায়ী ৩০ জুন অথবা লকডাউন উঠে যাওয়ার পর ৩০ দিন বাড়তি সময় দিতে রাজি নয়। এরপরই শুরু হয় উত্তেজনা!
‘আইবিসি সদস্য কারা? কারা এমন কথা বলেছে? এর কোনো দালিলিক প্রমাণ আছে নাকি?’ এক পর্যায়ে এমন কথাও উঠেছে সভায়!
যার জবাবে আইসিসি কোনো উত্তর করেনি। আইবিসির কে বা কারা এমন কথা বলেছেন সেটাও উল্লেখ করা হয়নি সভায়।
কর রেয়াতের বিষয়টি উল্লেখ করে ৭ এপ্রিল বিসিসিআইকে প্রথম মেইল করে আইসিসি। যার দুই সপ্তাহ পরে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই মেইলে লেখা ছিল, ‘১০.২০ ধারা অনুযায়ী আইবিসির কাছে বিসিসিআইকে কর মওকুফের শর্তহীন নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।’
এমুহূর্তে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মাথায় না নিয়ে কর রেয়াতের বিষয়টিতে আইসিসি বেশি বাড়াবাড়ি করছে বলেই মনে নিয়েছে বিসিসিআই। তাতে ক্রিকেট বিশ্বের প্রতাপশালী বোর্ডটির ক্ষোভের মাত্রাও বাড়ছে!
বিসিসিআইয়ের সঙ্গে আইসিসির এই কর দ্বন্দ্ব বেশ পুরনোই। ২০১৬ সালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে ভারতের থেকে ২৩ মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স পাওয়ার কথা ছিল সংস্থাটির। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কর মওকুফ করানো যায়নি, এই যুক্তিতে সেই পাওনা পরিশোধ করেনি বিসিসিআই।
সেই ঘটনার জের ধরে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইসিসি বিসিসিআইকে হুঁশিয়ারিতে জানিয়ে দেয়, যদি সরকারের থেকে কর মওকুফ করতে ব্যর্থ হয় ভারতীয় বোর্ড তবে ২০২১ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ সরিয়ে নেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প খোলা থাকবে না!
২০১৬ সালের বিশ্বকাপ থেকে ২০-৩০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে দাবি করে আইসিসির ভবিষ্যৎবাণী, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ আয়োজন করে ১০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি গুণতে হতে পারে তাদের।