যেসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর দেশ গঠনের সংগ্রাম, তার অন্যতম বৈষম্যমুক্ত একটি বাংলাদেশ। গত ৪৮ বছরে শক্তিশালী হয়েছে দেশের অর্থনীতি, তরতর করে বেড়েছে অর্থনীতির আকার; কিন্তু বৈষম্য কমেছে কতোটা?
বৈষম্য পরিমাপে বহুল ব্যবহৃত গিনি সহগ পদ্ধতি বলছে, এই মুহূর্তে আয় বৈষম্য সবচে বেশি; দশমিক চার আট তিন। ২০১০ সালে এটা ছিলো দশমিক চার পাঁচ আট। তবে কি ধীরে ধীরে মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে পড়া দেশের তালিকায় উঠে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
বৈষম্যের বঞ্চনা থেকেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম ১৯৭১ সালে। ভাত ও ভোটের অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি তথা আয়-রোজগার সর্বোপরি মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার আদায়ে নদীমাতৃক, পলি মাটির নরম স্বভাবের পূর্ব পুরুষেরা ধনুকের মতো বেঁকে গেছেন, ঋজু হয়ে ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতা। স্বপ্ন ছিলো ২১ পরিবারের জমিদারির বিলোপ ঘটবে, সংবিধানের ভাষায় ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ’ হবে, ‘নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত হবে’ এবং ‘প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’। বাস্তবে তার কতটা হয়েছে?
বৈষম্য পরিমাপের আরেক পদ্ধতি পাল্মা র্যাশিও। পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের খানা ও আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গ্যাব্রিয়েল পাল্মা অনুপাতও বাড়ছে। আশির দশকে যা ছিলো ১ দশমিক সাত তিন, নব্বইয়ের মাঝামাঝি তা ২ দশমিক দুই তিন এবং ২০০৫ এ ২ দশমিক ছয় দুই থেকে প্রায় ৩ এর কাছাকাছি পৌছে গেছে। সহজ কথায় এর মানে, মধ্যবিত্ত ৫০ শতাংশ মানুষের কাছে ৮৫-৮৬ সালে সারা দেশের মোট আয়ের ৫০ শতাংশ যেতো, ২০১৬ তে এসেও তা বাড়েনি। কমেছে নিম্ন আয়ের ৪০ শতাংশ মানুষের হিস্যা, আশির দশকের ১৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩তে। বেড়েছে কেবল উপরের দিকে থাকা ১০ শতাংশ মানুষের আয়, ৩১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৮ শতাংশ।
ধনিক শ্রেণির আরো ধনবান হওয়ার সত্যতা মেলে লন্ডনের ওয়েলথ এক্স নামের একটি সংস্থার রিপোর্টে। আলট্রা হাই নেট ওয়ার্থ অর্থাৎ অতি ধনী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির তালিকায় সবার শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। এমনকি চীন, ভারত, হংকংও কুপোকাত বাংলাদেশের ধনকুবেরদের কাছে।
আরও দেখুন ভিডিও রিপোর্টে: