সবাই মনের আনন্দে কাজ করছে। সময় শেষ চৈত্রের দুপুর। গান বাজছে। জলের গান। ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান/ বানের জলে ভাসল দুপুর ভাসল আমার গান।’ এখানে সৃষ্টির বান ডেকেছে। সেই বানের জলে ভাসছে সময়। ভাসছে আগামির শিল্পীরা। তৈরী হচ্ছে বৈশাখ আবাহনের শিল্পকর্ম।
চারুকলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই একদল ছেলেমেয়েকে দেখা যায়। সামনে টেবিল। পেছনে নানান ধরণের ছবি। নানা রকম ক্যানভাসে। আছে মাটির পটে আঁকা সময়ের ছবি। আছে টি শার্ট। টেবিল কিন্তু ফাঁকা নেই। সেখানে ছবি আঁকা চলছে। চলছে মাটির পটকে সাঁজানো লোকগাঁথার ছবিতে। বিক্রি হচ্ছে হাতপাখা। হাতপাখার বাতাসে পুরাতনের জীর্ণতা ওড়ানোর শপথ যেন।
বাঁশ, গুনা আর কাগজে মোড়ানো মাস্কট তৈরী হচ্ছে। সারসের ঠোঁটের সামনে মাছ, উদীয়মান সূর্য, মা-শিশু, হাতি, বৈশাখের গরমে পানিতে শরীর প্রায় ডুবিয়ে রাখা মোষ কিংবা পুরুষ জেলে। ৮টি মাস্কট তৈরী হচ্ছে। এবারই প্রথমবারের মত বৈশাখের মাস্কট বহরে পুরুষ টেকচার অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে। তৈরী হচ্ছে মাছ ধরা জেলে। আমাদের চিরায়ত বাংলার জেলে। মাস্কটগুলোকে সামনে রেখে ঐতিহ্যবাহী পহেলা বৈশাখের র্যালী হবে বৈশাখ শুরুর সকালে।
বৈশাখ উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আফি আজাদ বান্টি বলেন, ১৫ মার্চ থেকে আমাদের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। শিশির ভট্টাচার্য্য স্যার আহ্বায়ক। ছেলেমেয়েরা ছবি এঁকে, মাটির পট, হাতপাখা বানাচ্ছে যেগুলো, তা বিক্রির টাকা থেকেই মূলত আমাদের কাজ চলছে। গড়ে প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার টাকার বিক্রি হয়।
কথায় উঠে আসে ডিএমপি’র সময়সীমা নির্ধারণ বা মুখোশ না পরে র্যালীর বিষয়টি। এটিকে প্রয়োজনীয় বলে আখ্যা দেন চারুকলার ২০ তম ব্যাচের বান্টি। তিনি বলেন, আমাদের র্যালীতো সকালেই শেষ হয়। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত মানতে সমস্যা নেই আমাদের। আর মুখোশ হাতে নিয়ে ঘোরায় তো মানা নেই। কিন্তু র্যালীতে মুখোশে মুখ ঢেকে দুর্বৃত্তপনা হওয়ার আশঙ্কা তো থাকেই।
চারুকলার দেওয়াল প্রতি বৈশাখেই সেজে ওঠে রং তুলিতে। দেশীয় লোকগাঁথায়। ময়মনসিংহ গীতিকা অথবা আরো বিভিন্ন মিথে। এবার চার রং ব্যবহৃত হবে। ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে দেওয়াল সাজানোর কাজ। আর থাকছে বৈশাখে চারুকলার নিয়মিত আয়োজন যাত্রাপালা। এবারে মঞ্চস্থ হবে জিতেন্দ্রনাথ বসাকের পালা ‘বাগদত্তা’। নিষ্ঠুর সমাজের হাতে লাঞ্ছিতা এক নিরাপরাধ নারীকে কেন্দ্র করে তৎকালীন ভারতবর্ষে দিল্লির সঙ্গে বাংলার যে বিরোধ গড়ে উঠেছিল, ‘বাগদত্তা’ তারই মর্মস্পর্শী আলেখ্য। নারী লাঞ্চনার এই ঘটনা এখনো কি নিষ্ঠুর সত্য। এমন নিষ্ঠুরতার অবসান ঘটানোও হবে নতুন বৈশাখের দাবী।
ছবি: জাকির সবুজ