শিশুকন্যার মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত এবং বৈবাহিক ধর্ষণকে অনুমোদনকারী বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট।
বিয়ের মাত্র ১ মাস পরে গত ২৫ অক্টোবর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক ১৪ বছর বয়সী কন্যাশিশু যৌনাঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে মৃত্যুবরণ করে। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিয়ে সম্পন্ন হওয়া ওই কনের স্বামীর বয়স ৩৫ বছর বলে জানা গেছে।
ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তার পরিবার জানায়, বিয়ের পর দিন থেকেই কিশােরীটির রক্তক্ষরণ হচ্ছিলাে, কারণ তার স্বামী তার সাথে বার বার জোরপূর্বক সহবাস করে আসছিল। চিকিত্সা বিশেষজ্ঞদের মতে প্রথমবার যৌন মিলনের সময় নারীদের জন্য আতঙ্ক এবং
ভয় একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া এবং প্রায়ই বিবাহিত নারীদের যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ ঘটে থাকে। তার পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে এবং ময়নাতদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে।
ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট উদ্বিগ্ন যে, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এবং অনেক নারী এবং কিশােরীর বৈবাহিক ধর্ষণের অভিজ্ঞতা আছে। এই ধরণের যৌন সহিংসতায় ভুক্তভােগী বেশিরভাগ নারী প্রচলিত লিঙ্গ বৈষম্যমূলক আইনের কারণে প্রতিকার পায় না। বিশেষত বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৩৭৫-যা ধর্ষণের সংজ্ঞায় একটি ব্যতিক্রম অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেখানে বলা হয়েছে নারীর বয়স ১৪ বছরের কম হলে তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক ধর্ষণ বলে গণ্য হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাে অনুসারে, ২৭.৩% বিবাহিত নারীরা বলে যে, তারা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং স্বামীর জোরজবরদস্তির কারণে যৌন মিলনে বাধ্য হয়।
এসবের প্রেক্ষিতে এই মৃত্যুর তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জরুরি আহ্বান জানিয়েছে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট। পাশাপাশি বাংলাদেশ দণ্ড বিধির ৩৭৫ ধারাটি সংবিধানের ২৮, ৩১, ৩২ এবং ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় অবিলম্বে তা সংশোধন করার দাবি জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যমান দণ্ডবিধি আইনের ৩৭৫ ধারাটি বিবাহিত নারীদের জন্য বৈষম্যমূলক। ১৪ বছরের উর্দ্ধে কোন নারী বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে যৌন সহিংসতার শিকার হলে তা এই আইন অনুসারে ধর্ষণের আওতাভুক্ত নয়। যা সংবিধানের নিষ্ঠুর, অবমাননাকর ও অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক যে সুরক্ষা রয়েছে তা লংঘন করে।