চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বেড়েছে বজ্রপাত, এক মাসে সারাদেশে প্রায় ১২০ জন নিহত

প্রকৃতির খেয়ালে বজ্রপাত খুবই পরিচিত একটি বিষয় হলেও তা বেশ রহস্যময় এবং সেই সাথে আতঙ্কের। আকাশে মেঘ ও বাতাসের সংমিশ্রণে বিদ্যুৎ ক্ষেত্র তৈরির ফলে যে বজ্রপাত, তার আঘাতে মানুষের মৃত্যু থেকে শুরু করে দাবানল পর্যন্ত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়, জলচ্ছাস বা ভূমিকম্পের মতো ব্যাপকতা না থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বজ্রপাতের সংখ্যা এবং বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসের তালিকায় গত কয়েক বছর ধরে বজ্রসহ বৃষ্টি ও বজ্রঝড়ের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাতের হার ১২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আর চলতি শতকে তাপমাত্রা চার ডিগ্রি বৃদ্ধির পেলে বজ্রপাতের হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। গত এক মাসেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, সারা দেশে প্রায় ১২০ জন মানুষ বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।

বজ্রপাত ও এর বিভিন্ন দিক নিয়ে পরিবেশবিদ ড. জিন্নাতুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশ ভালো ভাবেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। বেশি বেশি বজ্রপাত হচ্ছে। কালো মেঘের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াতে বজ্রপাত বেড়েছে, আগামীতে আরও বাড়তে পারে।  

বজ্রপাতকে প্রকৃতির স্বাভাবিক একটি ঘটনা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক এ কিউ এম মাহাবুব চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বজ্রপাত আগেও ছিল এখনও আছে, এখন মানুষ বেড়ে যাওয়ার কারনে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। বজ্রপাতে সাধারণত প্রতিদিন দুএকজন মানুষ মারা যায় বলে বিশ্বব্যাপী একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে না।   

অধ্যাপক মাহাবুব আরও বলেন, বজ্রপাতে সাধারণত দুটো ক্ষতিকর দিক আছে। এক নম্বর হচ্ছে মানুষ যদি খোলা মাঠে থাকে, আরেকটি বড় কোনো গাছের নিচে থাকে। বজ্রপাতের সময় ভূমিকম্পের উল্টো প্রস্তুতি নিতে হবে। ভূমিকম্পের সময় আমরা যেমন ঘর থেকে বের হয়ে যাই, তেমনি বজ্রপাতের সময় ঘরের ভিতরে ঢুকতে হবে।

বজ্রপাতের সময় ঘরে থাকতে এবং যদি খোলা মাঠে অবস্থান করতেই হয় তবে শুয়ে পড়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক মাহাবুব।

বিশ্বজুড়ে বছরে প্রায় দুই কোটি ৫০ লাখ বার বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতের হার আরও বৃদ্ধি পেলে মানুষের হতাহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি না থাকলেও প্রতিবছর যেভাবে বজ্রপাতের সংখ্যা এবং হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, অদূর ভবিষ্যতে তা প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকায় চলে আসলেও আসতে পারে বলে মতপ্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।