চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বেনামী সূত্রের উড়ো খবর: কোথায় দাঁড়িয়ে আমাদের গণমাধ্যম?

কয়েকদিন আগে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক মোবাশ্বের হাসান সিজারকে নিয়ে বেনামী সূত্রের বরাতে কয়েকটি দৈনিক প্রায় একই ধরনের ‘সংবাদ’ প্রকাশ করেছে। একপাক্ষিক আর তথ্য-প্রমাণহীন ওই সংবাদগুলো পড়ে অনেক পাঠকই বলে দিতে পারেন, বিশেষ একটি উদ্দেশ্য নিয়েই সংবাদগুলো করা হয়েছে। তবে কিছু পাঠকের মধ্যে এসব সংবাদ বিভ্রান্তি ছড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। একজন মানুষকে প্রমাণ ছাড়াই অপরাধী হিসেবে চিত্রিত করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়ালের কাজটাও করে দেয় এরকম সংবাদ। এমনকি সামাজিক এবং মানসিকভাবেও এর শিকার হওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে বেনামী সূত্রের বরাতে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে, এমনকি বাংলাদেশের কোনো কোনো মিডিয়া হাউজেও কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। সেখানে সাংবাদিকতার প্রচলিত নিয়ম বা নীতিমালার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব কিছু নিয়ম-নীতিও মেনে চলা হয়। আমরা লক্ষ্য করলাম, ওইসব বেনামী সূত্রের খবর যারা লিখলেন তারা সাংবাদিকতার কোনো নিয়ম-নীতিকেই তোয়াক্কা করলেন না। তারা বেমালুম ভুলে গেলেন যে, সিজার নিজেও সাংবাদিক ছিলেন; দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সোজা কথায় বলা যায়, তারা বিশেষ কারো তৈরি করা গল্পগুলো সংবাদ আকারে প্রকাশ করলেন। সাংবাদিকতার নামে এই ধরনের অপসাংবাদিকতা আমাদের দেশে নতুন নয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে অনেকেই এর শিকার হয়েছেন। এই তো কিছুদিন আগেই সাংবাদিকতার কোন নীতিমালা না মেনে একটি বিদেশি গণমাধ্যমের বরাতে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম লিখলো, শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের চেষ্টা ভণ্ডুল করে দেয়া হয়েছে। এমন খবরকে ভিত্তিহীন বলে তা নাকচ করে দেয় খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অথচ এত বড় উদ্বেগজনক আর স্পর্শকাতর একটি সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রেও দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তির বক্তব্য আমরা ওইসব গণমাধ্যমে দেখিনি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বেনামী সূত্রের বরাতে অনেক সংবাদ আমরা প্রকাশ হতে দেখেছি। তখন ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় অনেকেই তা করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনিক যাচাই করে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য দেশের শীর্ষ একটি পত্রিকার সম্পাদককে ‘ভুল স্বীকার’ করতেও দেখেছি। কিন্তু অাজ যারা এসব করছেন, তারা কি নিজেদের ভুল বুঝতে পারছেন? প্রতিষ্ঠানগুলো কি কোন উদ্যোগ নিতে পারছে? সেটা একক বা সম্মিলিত? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে দেশের গণমাধ্যম? সিজারকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে অপরাজেয় বাংলার সামনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং স্বজনরা যে মানববন্ধন করেছেন, সেখানে তাদের জোর দাবি ছিল: বেনামী সূত্রের বরাতে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার বন্ধ করতে হবে। ওই দাবির সঙ্গে আমরাও একাত্মতা প্রকাশ করে বলতে চাই; একুশ শতকে এসে ‘শোনা গেছে’, ‘জানা গেছে’, ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’, ‘তদন্তে পাওয়া গেছে’, ইত্যাদি বাক্যগুলোর ব্যবহার গণমাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে হবে। সময় এসেছে নিজেদেরকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর-আজ সাংবাদিকতার নামে যে অপসাংবাদিকতা আপনারা করছেন; তা থেকে দেশ-জাতিকে মুক্তি দিন। এক্ষেত্রে সম্পাদক পরিষদ এবং সাংবাদিক ইউনিয়নের ভূমিকার কথাও আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।